বিজ্ঞাপন

বর্ষায় ছাদকৃষি

June 18, 2021 | 12:45 pm

আহসান রনি

চলছে বর্ষার মৌসুম। বৃষ্টির ছোঁয়ায় নগরীর ধূলিমাখা ধূসর গাছগুলো নিজেদের ধুয়েমুছে সবুজে সাজাচ্ছে। আর চারা গাছগুলোও নতুন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। কারণ ঝুমবৃষ্টির এই বর্ষাই গাছের সুসময় আর নতুন চারাগাছ রোপনের উপযুক্ত সময়। তাই এই বর্ষায় ছাদে বাগান করে শহরের ফাঁকা ছাদগুলো আমরা ভরিয়ে তুলতে পারি সবুজে সবুজে। পাশাপাশি এসময়ে ছাদে বাগান করে সহজেই বিভিন্ন শাক সবজিও উৎপাদন করতে পারি এবং পরিবারের জন্য টাটকা ও বিষমুক্ত শাক সবজি খাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি করতে পারি।

বিজ্ঞাপন

বর্ষাকালে ছাদে সহজেই শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, চালকুমড়া, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, ডাঁটা, পাটশাক, গিমাকলমি, করলা ইত্যাদি শাক-সবজি চাষ করা যায়। শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, চালকুমড়া, বরবটি, করলা ইত্যাদি সবজি চাষ করে ভালো ফলন পেতে চাইলে টব বা পাত্রের আকার হতে হবে তুলনামূলক বড়। বিশেষ করে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন হাফ ড্রাম, ব্লিচিং পাওডারের ড্রাম বা জিও ফেব্রিকের ব্যাগ কিংবা বাসায় পরিত্যক্ত বড় বালতি বা রঙের ডিব্বার তলায় ৪ থেকে ৫ টি হাফ ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্র করে নিয়ে এসব সবজি রোপণের জন্য টব হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

আর পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, পাটশাক, গিলকলমি ইত্যাদি শাক-সবজি চাষ করতে চাইলে টব হতে হবে অধিকতর প্রশস্থ । এক্ষেত্রে টবের গভীরতা ৮ ইঞ্চি থেকে এক ফুট হলেই আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। সুতরাং, এমন টব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ট্রে জাতীয় টব বা পুরনো বাথটাব বেশ কার্যকরী। চাইলে স্টিল বা মেটাল শীট দিয়ে কাছাকাছি ওয়ার্কশপ থেকে ৪ ফুট দৈর্ঘ্য, ২.৫ ফুট প্রস্থ এবং ৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ট্রে বানিয়ে নিতে পারেন। এ ধরণের ট্রে শাক লতা চাষের জন্য অনেক বছর নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়। তবে ট্রে তৈরির সময় কারিগরকে বলে রাখতে হবে যেন সম্ভব হলে গ্যালভানাইজড শীট ব্যবহার করে এবং অবশ্যই ট্রের তলায় অন্তত ৩/৪ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ৬ টি খুটি স্থাপন করে। এর ফলে একদিকে ট্রে অধিকতর টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হবে, অন্যদিকে অধিক মাটির ভরে দ্রুতই বেঁকে যাবেনা কিংবা মরিচা ধরবেনা।

এছাড়া ছাদের মেঝের উপর কাঠ, বাঁশ, টিন, পিভিসি বোর্ড ও পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী বেড বানিয়েও সিজনাল এসব শাক চাষ করা যায়। এমন কাঠামো আরো হালকা যে কোন কিছু দিয়েই করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে সেই কাঠামো যেনো ভেতরের আলগা মাটিকে ধরে রাখে এবং ওজনে কম হয়। চেরাই কাঠের তক্তা বা প্লাস্টিকের উড ব্যবহার করে বেডের চারপাশের কাঠামো তৈরি করা সহজ। নিচে তক্তা বা টিনও ব্যবহার করা যেতে পারে। যার ওপর পলিথিন বিছিয়ে নিতে হবে। এতে বেডে সেচ দেয়ার সময় পানিতে তক্তা বা টিন নষ্ট হবার ভয় থাকে না।

বিজ্ঞাপন

তবে এসব শাক সবজি চাষের জন্য বেডের কাঠামোটি স্থায়ী হিসেবে ইট বা কংক্রিট দিয়ে করতে চাইলে বেডগুলো ছাদের বাউন্ডারি রেলিং লাগোয়া হলে উত্তম। এধরণের শাক চাষের জন্য কংক্রিটের বেডের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ জায়গার পর্যাপ্ততা ও প্রয়োজন মাফিক নির্ধারণ করার সুযোগ থাকলেও বেডের গভীরতা ন্যুনতম ৮ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট রাখতে হবে। সম্ভব হলে বেডের ভেতরের পুরো অংশ ড্যাম্প প্রুফ করে নিতে পারলে উত্তম। পাশাপাশি ছাদের মেঝে থেকে কংক্রিটের বেডটিও হতে হবে অন্তত ৮ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট উচ্চতায় এবং বেডের তলায় প্রতি বর্গফুটে ২ থেকে ৩ টি হাফ ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্র রাখতে হবে। তা না হলে বেডের তলদেশে জমতে থাকা পানি বের হয়ে যেতে পারে না। যার ফলে গাছের শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বাতাসের চলাচলও সহজ হয় না, আবার ছাদ আর্দ্র বা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়ে।

তবে বর্ষাকালে ছাদে এসব শাক-সবজি চাষ করার আগে ভাবতে হবে যে কোথায় কোথায় সারাদিন রোদ পড়ে, কোথায় বা কোন অংশজুড়ে পাশের বিল্ডিংয়ের ছায়া পড়ে। ছাদের কোন অংশে মাচা তৈরি করা সহজ সে অনুযায়ী কোন অংশে কোন সবজি লাগানো যায় তার পরিকল্পনা করতে হবে। এসব বিবেচনা করেই দরকারি জিনিসপত্র যোগাড় করতে হবে।

স্থায়ী বা অস্থায়ী যে ধরনের বেডই হোক না কেন বর্ষাকালে এ সকল শাক-সবজি চাষের জন্য ড্রাম, ট্রে কিংবা বেডগুলো অর্ধেক মটি ও অর্ধেক কম্পোস্ট দিয়ে ভরতে হয়। কম্পোস্ট না পেলে মাটির তিন ভাগের একভাগ গোবর দিতে হবে। এ সময় শুকনো মাটি ও গোবর পাওয়া তুলনামূলক কঠিন। তবে চেষ্টা করতে হবে যেন অধিকতর শুকনা বেলে দো-আঁশ মাটি সংগ্রহ করা যায়৷ আর বর্ষায় বাগান করতে চাইলে ভালো মানের শুকনা গোবর সম্ভব হলে বর্ষার আগেই সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে তা সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে উত্তম।

বিজ্ঞাপন

এরপর ছাদের অবস্থান ও আকার অনুযায়ী বর্ষাকালীন চাষাবাদের জন্য একটি নকশা তৈরি করে নিতে হবে। সবশেষ ধাপে নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী চারা ও বীজ কেনার পালা। সবজির চারা কিনতে নিকটস্থ বিশ্বস্ত নার্সারির উপর ভরসা রাখাই উত্তম। পাশাপাশি একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও ভালো কোম্পানির বীজ কিনতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন তা মেয়াদোত্তীর্ণ না হয়।

বেডে বীজ ফেলার পরপরই পাখির আনাগোনা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে পুরোনো মশারী বা নেট ব্যবহার করা যেতে পারে৷ তাছাড়া সবজির চারা রোপনের কিছুদিন পর খুঁটির প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে গাছের উচ্চতা ভেদে বাঁশের খুঁটি বা প্লাস্টিকের চিকন পাইপ প্রস্তুত রাখতে হবে। বেডে যে সবজিই লাগাবেন সেগুলো সারি করে লাগানো ভালো। সারি করে লাগালে ছাদের সৌন্দর্য্যও অনেক গুনে বেড়ে যায়।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসএসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন