বিজ্ঞাপন

ঢাকার বস্তি এলাকায় অ্যান্টিবডি ৭১%, চট্টগ্রামে ৫৫%

June 22, 2021 | 5:45 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকার সোয়া তিন হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে মানুষের নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) তাদের এক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য জানিয়েছে। এর মাঝে ঢাকার বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জন ও চট্টগ্রামে বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন এলাকায় ৫৫ জনের মাঝে এই অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার এই ফলাফলে জানা যায়, বস্তি এবং বস্তির আশপাশের এলাকার এই অধিবাসীরা কোনো না কোনো সময় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন অথবা সংস্পর্শে এসেছিলেন।

মঙ্গলবার (২২ জুন) এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশ করে আইসিডিডিআর,বি। দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্তার নির্ণয়ের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন এলাকায় ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই গবেষণা চালায়।

গবেষণায় প্রধান গবেষক ছিলেন আইসিডিডিআর,বির ডা. রুবহানা রাকিব ও ড. আবদুর রাজ্জাক। গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এ গবেষণায় অ্যাডভোকেসি পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় গৃহস্থালি পর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, রক্তচাপ পরীক্ষা ও পুষ্টি পরিস্থিতি জানার পাশাপাশি মোট ৩ হাজার ২২০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বস্তি এবং বস্তির বাইরে বসবাসকারীদের রক্তে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি এবং তার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করা।

এরই অংশ হিসেবে গত পাঁচ মাসে তিন হাজার ২২০ জনের মধ্যে করা এ গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বয়স্ক ও তরুণদের মাঝে এর হার প্রায় সমান। গবেষণার জন্য এসব এলাকায় বসবাসকারী করোনার উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন ব্যক্তিদের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়।

বিজ্ঞাপন

আইসিডিডিআর,বি জানায়, এ সমীক্ষার মাধ্যমে সেরোপজিটিভিটি (রক্তে SARS-CoV-2–এর উপস্থিতি) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য যেসব কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেগুলো হলো- শরীরে অন্য কোনো শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের উপস্থিতি, পুষ্টিগত অবস্থা (যেমন: ভিটামিন ডি, জিংক, সেলেনিয়াম) এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।

গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় অ্যান্টিবডির হার (সেরোপজিটিভিটি) বেশি। চট্টগ্রামে যেটি ৫৫ শতাংশ, ঢাকায় সেটি ৭১ শতাংশ। অপরদিকে, বয়স্ক ও তরুণদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার প্রায় সমান।

আইসিডিডিআর,বি জানায়, যেসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির (মোট ২ হাজার ২০৯ জন) মধ্যে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে শুধু ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। স্বল্পশিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস যাদের আছে, তাদের মধ্যে অধিক মাত্রায় সেরোপ্রিভ্যালেন্স (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গেছে।

গবেষণায় ফলাফলে জানানো হয়, বস্তির বাইরে, বস্তিসংলগ্ন এলাকার নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের তুলনায় করোনা অ্যান্টিবডি হার বস্তিতে বেশি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে ঘন ঘন হাত ধোয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রভাব ফেলেছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা ফলাফলে আরও জানানো হয়, সেরোপজিটিভিটির সঙ্গে যুক্ত অন্য প্রভাবক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। মাঝারি কায়িকশ্রম যারা করেন, তাদের মধ্যে সেরোপজিটিভিটির সম্ভাবনা কম দেখা গেছে।

আইসিডিডিআর,বি তাদের গবেষণা ফলাফলে জানায়, বারবার হাত ধোয়ার প্রবণতা, নাক-মুখ কম স্পর্শ করা, বিসিজি টিকা গ্রহণ এবং মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের মধ্যে কম মাত্রার সেরোপ্রিভ্যালেন্স দেখা গেছে।

এতে জানানো হয়, সেরোনেগেটিভ ব্যক্তিদের তুলনায় সেরোপজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে সেরাম জিংকের মাত্রা বেশি দেখা গেছে। এটাই হয়তো গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে রোগের মৃদু লক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও অ্যান্টিবডি পাওয়ার কারণ জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়াও অনেকে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন। যে কারণে তাদের মধ্যে সেরোপজিটিভিটি তৈরি হয়েছে। তবে তা কেন হয়েছে, তা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই স্টাডি ছাড়াও আরও কয়েকটি স্টাডিতে একই প্যাটার্ন দেখেছি। যেখানে দেখানো হয়েছে, বস্তি এলাকার মানুষ ভাইরাসের সংস্পর্শে বেশি এসেছে। যে কারণে তাদের শরীরে অ্যান্টবডি তৈরি হযেছে। করোনাভাইরাসের ৯০ শতাংশই লক্ষণ-উপসর্গহীন হয়, সুতরাং বস্তিতে বেশি হওয়ার কারণ এটা।’ তবে কেন হয়েছে তা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেও জানান ডা. মাহমুদুর রহমান।

গবেষণা ফলাফলের সূত্র দিয়ে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়ানো যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে, ব্যয়াম করতে হবে। করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে।’

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির প্রধান গবেষক ডা. রুবহানা রাকিব। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর, আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরিসহ আরও অনেকে ওয়েবিনারে অংশ নেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন