বিজ্ঞাপন

একটি নৌযান, একটি স্বপ্ন

June 23, 2021 | 2:38 am

ফিচার ডেস্ক

গুস্তাভ ট্রুভে ছিলেন একজন ফ্রেঞ্চ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং আবিষ্কারক। মেটাল ডিটেকটর থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়িসহ অসংখ্য আবিষ্কার এসেছে তার হাত ধরে। এজন্য অনেকে তাকে ফ্রান্সের আলফা এডিসন বলে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

১৮৮১ সালে তিনি প্রথম ইলেকট্রিক-আউটবোর্ড মোটর তৈরি করেন, এবং সেই মোটর দিয়ে প্যারিসের সেইন নদীতে ভাসে পৃথিবীর প্রথম বিদ্যুৎচালিত নৌযান।

গুস্তাভে ট্রুভোর সম্মানে ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় পৃথিবীর প্রথম ইলেকট্রিক-বোট কম্পিটিশন। প্রথম বৈদ্যুতিক নৌযানের ১৪০ বছরপূর্তী উপলক্ষে এ বছর দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিযোগিতাটি। চারটি বিভাগে অংশ নিচ্ছে প্রায় ২০টি দেশের ৭৩টি বোট।

নৌযান শিল্পে এ অঞ্চল তথা বাংলাদেশের রয়েছে সহস্র বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। কিন্তু আধুনিক নৌযানে আমরা সবচয়ে পিছিয়ে। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনে ব্যবহৃত নৌযানের সংখ্যায় চীনের পরেই বাংলাদেশের স্থান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আধুনিকতায় আমরা রয়েছি সবচেয়ে পেছনের কাতারে। উন্নত বিশ্বে প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নৌযানকে করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব ও অধিক নিরাপদ। পক্ষান্তরে আমরা ব্যবসায়ীক স্বার্থে বেশি যাত্রী ও পণ্য বহনের জন্য প্রতিনিয়ত অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানের দিকে এগিয়ে গিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে আছি ক্ষুদ্র নৌযানের ক্ষেত্রে। উন্নত বিশ্বে স্পিডবোট কিংবা স্বল্পপাল্লার ছোট নৌযানগুলো হয় সবচেয়ে আধুনিক, নয়নাভিরাম এবং রোলস রয়েস ফেরারির মতো আভিজাত্যের প্রতীক। সেখানে আমাদের ছোট নৌযানগুলো এখনও টেম্পু কিংবা লেগুনার পর্যায়ে আটকে রয়েছে।

উন্নত বিশ্বে ক্ষুদ্র নৌযান হলো কোটিপতিদের আভিজাত্যের প্রতীক। একটি ১৫-২০ মিটার নৌযান তৈরিতে তারা পাঁচ দশ কোটি টাকা ব্যয় করে। গাড়ির জগতে টেসলা বৈদ্যুতিক গাড়ি নামিয়ে চমক দেখিয়েছে, কিন্তু এখন তার মূল্য তেলের গাড়ির চেয়ে বেশি। তবুও টেসলার পথ ধরে এগিয়ে আসছে অনেক কোম্পানি। ক্ষুদ্র নৌযানের ক্ষেত্রেও শুরু হয়েছে ইলেকট্রিক বোটের নবযাত্রা। এখন শৌখিন বিলিয়নিয়ারদের নতুন আভিজাত্য ইলেকট্রিক বোট।

লাখো শ্যালো নৌকার দেশে ইলেকট্রিক বোট নিয়ে চিন্তা গরীবের ঘোড়া রোগের মতোই। তারপরও বাংলাদেশের একজন নাবিক, ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, অনেকটা শখ, নেশা ও জেদের বশবর্তী হয়ে হাতে নেন এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প। তিনি তৈরি করেন এক বৈদ্যুতিক নৌযান। শুধু তাই নয়, বিদেশে যেখানে উচ্চমূল্যের আধুনিক ব্যটারিনির্ভর নৌযান তৈরি করা হয়, সেখানে খরচ কমানো এবং আরও পরিবেশবান্ধব করার জন্য তিনি সোলার পাওয়ারের উপর নির্ভর করেন। ফ্রেঞ্চ নেভাল আর্কিটেক্ট মাইকেল ও’কনরের নকশা নিয়ে এগিয়ে চলে তার প্রকল্প।

বিজ্ঞাপন

কয়েকজন বন্ধু আর স্থানীয় দুই তিন জন কর্মীদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। পানিতে ভাসে ৬৭ ফুট দীর্ঘ সোলার শক্তিতে চলা দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ক্যাটামারান।

আর্থিক টানাপড়েনে অনেকটা টেনেহিঁচড়ে তৈরি করা সোলার বোট ‘আয়রন’ নিয়েই আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ নেন তিনি। তৃতীয় বিশ্বের দুর্বল ঘোড়াটি নিয়ে হাজির হন আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায়। যোগ্যতাবলে কিংবা সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশে প্রস্তুত ইলেকট্রিক বোটটি কাস্টমাইজড বোট ক্যাটাগরির ১৭টি নৌযানের মধ্যে জায়গা করে নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ভোটের মাধ্যমে ১৭টি নৌযান থেকে ৬টি নৌযান যাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে বৈদ্যুতিক নৌযানের বাজার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক নৌযানের বাজার হবে প্রায় এক লাখ দশ হাজার কোটি টাকার। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ কিংবা সাফল্য, বাংলাদেশের সক্ষমতাকে বিশ্ব বাজারে পরিচিত করতে পারে ।

চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হতে আগামী পাঁচ জুলাই পর্যন্ত ভোট চলবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুবাদে স্বদেশিদের ভোট হয়তো স্বল্প টাকায় তৈরি করা নৌযানটিকে নিয়ে যেতে পারে চূড়ান্ত পর্যায়ে।

বিজ্ঞাপন

আয়রন নামক নৌযানটিকে ভোট দিতে চাইলে নিচের লিংকটিতে ক্লিক করে যে পেইজটি খুলবে তার নিচে চলে যেতে হবে। নিচের দিকে রয়েছে ব্যালট। সেখানে রয়েছে ১৭টি নৌযানের নাম।

সেখান থেকে আয়রন (IRON)-এ ক্লিক করে নিজের ইমেইল লিখে ব্যালটের নিচে ‘vote now’ এ ক্লিক করলেই ভোট দেওয়া হয়ে যাবে। হয়ত স্বপ্ন এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ।

লিঙ্ক: https://plugboats.com/2021-gussies-electric-boat-awards-customized-diy/

সারাবাংলা/আইই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন