বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা নিজেই বাংলাদেশ হয়ে উঠেছেন

June 23, 2021 | 10:58 am

আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। কৈশোর থেকেই প্রতিবাদী চরিত্র নিয়ে রাজনীতিতে আসেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে আজকের পর্যায়ে। ১৯৭৩ সালে ফরিদপুর সরকারি ইয়াছিন কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে প্রতিরোধ আন্দোলন ও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ১৯৮৪ সালে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ২০০১-০২ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্বেক্ষক সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের ১৭তম সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯তম সম্মেলনে কার্যনির্বাহী সদস্য হন। এরপর ২০তম সম্মেলনে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সবশেষ ২০১৯ সালের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। একইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডেও স্থান পান। এরই মধ্যে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ঐতিহ্য, গৌরব, সংগ্রাম ও আগামী দিনের পথচলা নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা। তার সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নিয়েছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়। সেই কথোপকথনের চুম্বর অংশ তুলে ধরা হলো—

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২ বছর অতিক্রম করে ৭৩ বছরে পদার্পণ করছে। দীর্ঘ পথচলার লড়াই-সংগ্রাম-অর্জনের ঐতিহ্যবাহী একটি দল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দলের অনেক নেতাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থাকতে পারেননি। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরলেও অনেক শীর্ষ নেতাও তার প্রতি আস্থা রাখেননি। এর পরের চার দশকে আরও অনেক পথপরিক্রমা পেরিয়ৈ আজকের আওয়ামী লীগ। তখনকার সেই আওয়ামী লীগ আর আজকের এই টানা একযুগ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য দেখেন কি? আওয়ামী লীগের এই সুদীর্ঘ পথচলাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আব্দুর রহমান: আওয়ামী লীগকে আমি দুই ভাগে ভাগ করতে চাই না। আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের জন্মের যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-আদর্শ— তার ধারাবাহিকতায় সংগ্রামের সব মাইলফলক, সব সংগ্রাম-ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করা, লালন করা— এটাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের ল্যান্ডমার্ক। সুতরাং এই আওয়ামী লীগের ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে জন্ম, দলকে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত করতে মুসলিম শব্দটি তুলে ফেলা, এরপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জন— এই তো আওয়ামী লীগ। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ আজও সামনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ পেছনে ফিরে কখনো তাকায়নি। সমাজ প্রগতি বলুন আর অর্থনৈতিক মুক্তি কিংবা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিবাচক দিকগুলোই বলুন— সবই কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। এর মধ্যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকেই হত্যার অপচেষ্টা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা ও আদর্শকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেখান থেকে ফের আওয়ামী লীগকে লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে, আবার তার অতীত-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক রক্ত, ত্যাগ, মায়ের অশ্রুধারা বিসর্জন দিতে হয়েছে।

১৯৮১ সালে যখন দেশে আমাদের প্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা, জাতির জনকের বড় আদরের দুলালী যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন, তাকে আবর্তন করেই কিন্তু গোটা দলে আবার নতুন করে প্রাণসঞ্চার হলো। স্বৈরাচারী-স্বেচ্ছাচারী ও সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে গণতন্ত্রের ধারাকে পুনঃপ্রবর্তন করেছে। এর ফসল হিসাবেই কিন্তু আজ একটি অবাধ, মুক্ত বাকস্বাধীনতা বা মুক্তচিন্তার বিকাশ কিন্তু হয়েছে। এগুলো যেমন একদিকে বিকশিত হয়েছে, অন্যদিকে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও সাফল্যও এসেছে। বাংলাদেশকে একদিন যারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, তারাই কিন্তু আজ উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হিসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এই উন্নয়নের চাকা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। একটি স্বল্পোন্নত দেশকে তিনি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন। এখানেই শেষ নয়, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং সেখান থেকে উন্নত একটি দেশের মর্যাদা অর্জন— এই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু তিনি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। এর সুফল কিন্তু গোটা জাতি পাবে।

বিজ্ঞাপন

আজ যে দেশে হতদরিদ্রের হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ২১ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে— এগুলো কিন্তু বড় অর্জন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলুন, রেমিট্যান্সের কথা বলুন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কথা বলুন— সব দিক থেকেই কিন্তু বাংলাদেশ আজ দৃষ্টান্ত। বিশেষ করে করোনাকালেও আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বের কাছে বিস্ময়ের বিষয়। আর এই বিস্ময়ের রূপকার শেখ হাসিনা। দেশ ও অঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি নিজেকে বিশ্বসভায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। একজন সৎ জননেতার স্বীকৃতি পেয়েছেন। আর এর সবকিছুর পেছনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের জনকল্যাণের আদর্শ। পিতার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্য নিয়েই শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন ক্লান্তিহীনভাবে। তাই এই আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ অবধি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। এই আওয়ামী লীগ আগামী দিনেও সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বিশেষত বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়তে লড়াই করে যাচ্ছেন। আমি আশা করি, এই আওয়ামী লীগের জন্মের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং আদর্শ-লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই ভবিষ্যতে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাব, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ টানা মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। বর্তমানে দলের সাংগঠনিক কাঠামো কতটা শক্তিশালী হয়েছে? তৃণমূলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে দলীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তৃণমূলের এই সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

আব্দুর রহমান: আওয়ামী লীগের এ ধরনের ব্যত্যয় বা অসঙ্গতির কথাগুলো বললেন, এগুলো নতুন বিষয় নয় কিন্তু। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, সব রাজনৈতিক দলেই এরকম ক্ষমতার লড়াই থাকে। আওয়ামী লীগকেও জন্মলগ্ন থেকেই ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এসবকিছু অতিক্রম করেই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য পূরণের যে যাত্রা, সেখানে কিন্তু আদর্শ থেকে কোনো বিচ্যুতি নেই। আজ টানা তিনবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় কিছু মতলববাজ, কিছু ধান্ধবাজ এবং কিছু সুবিধাভোগীরা এই সংগঠনে জায়গা করে নিতে চায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের প্রশ্রয়ও দিয়ে থাকি আমরা। ফলে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘটনা ঘটছে। এগুলো কারও কাছেই কাম্য নয়। তবে আমরা খুবই সতর্ক, এই ধরনের অসঙ্গতি বা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব— এগুলো দলের অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে পারবে না, ক্ষতি করতে পারবে না।

বিজ্ঞাপন

আমরা দলের অভ্যন্তরীণ এই বিষয়গুলো দেখভাল করতে আটটি টিম করেছি। যেখানেই এ ধরনের অসঙ্গতি আমাদের চোখে ধরা পড়ছে, আমরা সেগুলো নিরসনের চেষ্টা করছি এবং আমরা সফলও হচ্ছি। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে— আওয়ামী লীগকে অনেকটা মুরগির খোপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। খোপে যেমন মুরগি থাকে, দিনে বেরিয়ে যায়, ছোটাছুটি করতে থাকে। সারাদিন চড়ে বেড়িয়ে যেখানেই থাকুক না কেন, সন্ধ্যায় কিন্তু ঠিক ঘরে ফেরে। এই আওয়ামী লীগেরও যারা নেতাকর্মী, তাদের মধ্যেও এরকম বিভেদ, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা মতানৈক্য দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এসব ঘিরে আপাতদৃষ্টিতে বিশৃঙ্খলা বা সংকটও দেখা দিচ্ছে মনে হতে পারে। দিনশেষে কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা এবং সেটি যায়ও।

আর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার বিষয় একটি কথা সুষ্পষ্টভাবে বলি— এই দলে একমাত্র অপরিহার্য নেতৃত্ব হলেন শেখ হাসিনা। তিনি ছাড়া দলের আর কোনো নেতাই অপরিহার্য নন। কাজেই আমরা নিজেদের স্বার্থে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে লড়াই করলেও দিনশেষে দেখা যাবে এর ফলাফল শূন্য। কারণ শেষ পর্যন্ত সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন সেই শেখ হাসিনাই। তার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারও নেই। সেই সিদ্ধান্তের বাইরে কারও ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা যাই বলুন না কেন,  কিছুই কাজে আসবে না।

সারাবাংলা: ১৯৮১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৪ দশক ধরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে এটিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আব্দুর রহমান: আমি এক কথায় মূল্যায়ন করি— তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে এই দেশে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশটা জীবন ফিরে পেয়েছে। জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশকে যে নির্বাসনে নিয়ে যেতে চাওয়া হয়েছিল, প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে তিনি ফের জাতির পিতার বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করেছেন। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের কাঙ্ক্ষিত সেই জায়গায় পৌঁছে দিতে তিনি আজও লড়াই-সংগ্রাম তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং জাতির পিতার হাতে স্বাধীনতা অর্জনের পর এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাতে গড়া বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতার প্রতিফলন। শেখ হাসিনা যেন নিজের মধ্যে বাংলাদেশকে ধারণ করেন। আমি অবশ্যই আজ এ কথা বলব— আজ শেখ হাসিনা নিজেই একটি বাংলাদেশে পরিণত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন