বিজ্ঞাপন

‘যত আঘাত আসে তত জ্যোতি ছড়ায় আওয়ামী লীগ’

June 23, 2021 | 9:25 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোনো ধরনের আঘাত করে আওয়ামী লীগকে দমিয়ে রাখা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং আঘাত এলেই আওয়ামী লীগ নতুন করে জেগে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো ক্ষমতা দখলকারীর হাতে গড়া সংগঠন না। মুসলিম লীগ সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে করতে এই সংগঠন গড়ে উঠেছে। যে সংগঠন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে, সেই সংগঠনকে এত সহজে শেষ করে দেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত এসেছে। বহুবার আওয়ামী লীগ ভেঙে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা। যত কেটেছে তত জ্বল জ্বল করেছে। যত আঘাত এসেছে, আওয়ামী লীগ আরও নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে।

বুধবার (২৩ জুন) বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যুক্ত ছিলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এই বাংলাদেশ আমাদের স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের আদর্শ দিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক। আমরা তারই পথ অনুসরণ করে চলছি। আজকে তিনি আমাদের মাঝে নেই। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ হারিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে, আর আমি হারিয়েছি আমার পরম আপনজনদের।

বিজ্ঞাপন

১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি  বলেন, আমার মাঝে মাঝে এটাই মনে হয়— তিনি এই বাঙালির জন্য সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন দেশের মানুষের কল্যাণে। বাঙালি জাতির জন্য তিনি তার সারাটা জীবনের সব সাধ-আহ্লাদ-সুখ সবকিছু ভুলে কষ্ট করে গেছেন। আর তাকেই জীবন দিতে হলো সেই বাংলাদেশের জনগণের হাতে! এরকম জঘন্য হত্যাকাণ্ড এই বাংলাদেশে ঘটে যায়!

শেখ হাসিনা বলেন, আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। এই শোক-ব্যথা কষ্ট সহ্য করা কঠিন ছিল। কিন্তু সংগঠনটির নাম আওয়ামী লীগ। তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ। তারপরও চেষ্টা করেছি সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই তো জেলে ছিল অথবা বেঈমানি করে মোশতাকের সঙ্গে গেছে। কার সঙ্গে যোগাযোগ করব! তবে জেলখানা থেকে যখন সবাই বেরিয়েছে, তখন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। রেহানা তার আগে থেকে যোগাযোগ করা শুরু করেছে, প্রতিবাদ করেছে। আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল— বাবা যে ভাবনা-আদর্শ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে তার যে স্বপ্ন— আমরা কখনো ব্যর্থ হবে দেবো না।

আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেনম, আওয়ামী লীগের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন তৈরি হয়, তখন থেকে মুসলিম লীগ চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসেছে, সেও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। ইয়াহিয়া খান এসেছে, সেও চেষ্টা করেছে। ঠিক একইভাবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছে, এই আওয়ামী লীগকেই ধ্বংস করতে চেয়েছে। জেনারেল এরশাদ এসেও একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। আর খালেদা জিয়া এসে তো আরও একধাপ ওপরে।

বিজ্ঞাপন

এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারান্তরীণ হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিরোধী দলের থাকা সত্ত্বেও সবার আগে আমাকেই গ্রেফতার করা হলো। আওয়ামী লীগের ওপরই যেন রোষ, কেন? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশের গরীব দুঃখী মানুষ পেটে ভাত পায়, মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়, ঘর পায়, চিকিৎসা পায়, লেখাপড়ার সুযোগ পায়— এটা বোধহয় কিছু শ্রেণির পছন্দ না। যারা ওই মিলিটারি ডিটেকটরদের পদলেহন করে চলেছিল, তাদের পছন্দ না। সেজন্য আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে বারবার উঠেপড়ে লাগে।

কিন্তু শত আঘাত এলেও আওয়ামী লীগ বারবরই সেসব সহ্য করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে এবং আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে সংগঠন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে ওঠে, সেই সংগঠনকে এত সহজে শেষ করে দেওয়া যায় না। হয়তো সাময়িক আঘাত আসে। আওয়ামী লীগের ওপর অনেক আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগের ভিতরের লোকরাই তো আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, তিনি সবার আগে আওয়ামী লীগ ভেঙে চলে গেলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি করতে। ঠিক এভাবে কতবার আওয়ামী লীগ ভেঙেছে!

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দল ছেড়েছেন। সে প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রবাসে থাকতে সংগঠনের জন্য যাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছি, আমি ফিরে এলে তিনিই আমাকে সবার আগে ছেড়ে চলে গেলেন। আমাদের আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। বারবার তাকে বললাম, আপনার তো যাওয়ার দরকার নাই। আপনি থাকেন, আপনি তো পার্টির সেক্রেটারি। ‘না, পার্টি ভেঙে বাকশাল করব’ বলে চলে গেলেন। এসময় ড. কামাল হোসেনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এভাবে বারবার আওয়ামী লীগের ওপরে আঘাত এসেছে। তবে আমি বলব, আওয়ামী লীগ হীরার টুকরা। যতবার কেটেছে তত আরও জ্বলজ্বল করেছে। যত আঘাত এসেছে, ততই আরও নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে। কাজেই এই সংগঠনকে ধ্বংস করার যে যতই চেষ্টা করুক, সেটা পারেনি, পারবে না। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছেই বলেই আজ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক, সামাজিক সব দিক থেকে উন্নতি করছে। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দলকে টিকিয়ে রাখতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। দেশের মানুষ বারবার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। দলকে শক্তিশালী করার জন্য তৃণমূলকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায়, সেদিকে মনোযোগী হতে আহ্বান জানান তিনি। বলেন, এই আওয়ামী লীগ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছে, অনেক চরাই-উৎরাই পার হয়েছে। অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছে। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর যেন কখনো কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেজন্যই আমাদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে— সেটাই আমি চাই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানও জানান তিনি। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এই মহামারিকাল অতিক্রম করা যাবে— এমনটিই মনে করছেন শেখ হাসিনা।

গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সভায় ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বেন চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির সম্পাদনা করেছেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মহিলা সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন