বিজ্ঞাপন

‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারতের মতো বাংলাদেশ ছড়ালে ছারখার হয়ে যাবে’

July 3, 2021 | 6:59 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, দিন দিন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে। এটা বৃদ্ধি পেয়ে কোনো স্তরে গিয়ে পৌঁছবে তা অনিশ্চিত। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভারতের মতো বাংলাদেশ ছড়ালে মহামারিতে সব ছারখার হয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি এক বছর আগে থেকে কাজ শুরু করতো তাহলে হয়তো এ দুর্যোগ মোকাবিলা সহজ হতো। এখনও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর সুবিধা পৌঁছেনি। নেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য কর্মচারী। ফলে সেখানকার হাসপাতালগুলোতে কোভিড রোগীসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। বেসরকারি খাতে কিছু চিকিৎসা সুবিধা তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। এমনকি অত্যন্ত ব্যায়বহুল। ফলে সেখানে মধ্যবিত্তরা অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘সদর হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি পদে সাধারণত পদাধিকার বলে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সভাপতির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব-কর্তব্য কি তা স্পষ্ট নয়। এছাড়া হাসপাতালগুলোর সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দিলেও কোনো কাজ হয় না।’

বিজ্ঞাপন

জিএম কাদের বলেন, ‘উপজেলা ও ইউনিয়নে যত মঞ্জুরীকৃত পদ খালি আছে সেখানে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য কর্মচারী জরুরিভাবে নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসা সহায়ক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের প্রয়োজন নিরূপন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেগুলো যাতে ব্যবহার উপযোগী থাকে ও রোগীদের সেবায় ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক চিকিৎসাস্থল বা চিকিৎসা কেন্দ্রে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতে হবে। জেলার পর উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অক্সিজেন এভং ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ আইসিইউ চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।’

বিচার বিভাগ সর্ম্পকে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, “বাংলাদেশ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন’। এই অনুচ্ছেদের অনুবলে মাজদার হোসেন মামলার রায় হয়েছে এবং সে রায়ে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে নির্বাহী বিভাগ থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি আলাদা করার কথা। কিন্তু তা এখনও সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এর অন্যতম উদাহরণ- মোবাইল কোর্টের নামে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এখনও বিচারিক ক্ষমতা রয়ে গেছে। ক্ষমতাটি আইন এবং সংবিধান বহির্ভূতভাবে তাদের দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ, অপচর্চ্চা ও স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যায়। ফলে সংবিধান ও উচ্চ আদালতের রায়ের দিক নির্দেশনা লঙ্ঘিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য জায়গায় সবসময় যাতায়াত করছে। তাদের অভিভাবকরা জীবিকার প্রয়োজনে অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য বাজার ও অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করছেন তাদের পরিবার-পরিজন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গেলেই শিক্ষার্থীরা সংক্রমিত হবে না- এর পক্ষে কি কোনো যুক্তি আছে? অবশ্য এটাও ঠিক অনেক অভিভাবক এ পরিস্থিতিতে তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক নন। সেক্ষেত্রে তাদের বিষয়ে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তবে এখন সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখছি।’

বিজ্ঞাপন

মাদক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশে মাদকের বিস্তার কোনোভাবেই কমছে না। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই এখন হাতের নাগালে মাদক। এতে যেমন মাদকসেবীদের আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবার। মাদকে অভ্যস্থ হচ্ছে ছিন্নমূল শিশু থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চবিত্তরাও। করোনা মহামারিতে এর বিস্তার আরও বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এলএসডি বা লাইসার্জিক এসিড ডায়েথিলামাইড, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, খাট বা মিরা নামক নতুন নতুন মাদকের সন্ধান পান। সেজন্য মাদক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশেষায়িত বিভাগ খোলা জরুরি।

জিএম কাদের বলেন, ‘সামনে ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ আসছে। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও হয়তো চামড়ার প্রকৃত দাম নিয়ে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। চামড়ার প্রকৃত বাজার দর নিশ্চিত করতে এর সিন্ডিকেট ভাঙতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন