বিজ্ঞাপন

১০ জেলাতেই গণহত্যার ঘটনা ১৭৫২ টি!

March 30, 2018 | 3:34 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: একাত্তরে দেশের মাত্র ১০ জেলাতেই ১ হাজার ৭৫২টি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এমন তথ্য উঠে এসেছে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রের এক জরিপে। অথচ পূর্বের ধারণা ছিল সারাদেশে গণহত্যার ঘটনা ঘটে মাত্র ৯০৫টি। এই জরিপের ফলে গণহত্যার ভয়াবহতার চিত্র আরও স্পষ্ট হলো বলে দাবি জরিপ কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ১০ জেলায় নির্যাতন কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪২টি, বধ্যভূমি ২০৪ টি ও গণকবর ১৫১ টি। জেলাগুলো হচ্ছে- নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, ভোলা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, খুলনা, পাবনা ও কুড়িগ্রাম।

শুক্রবার (৩০ মার্চ) সকালে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান হল মিলনায়তনে এই জরিপের তথ্য তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

বিজ্ঞাপন

‘গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই সেমিনারে ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এদেশে জানা-অজানা অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জানাতে হবে, সারাবিশ্বকে জানাতে হবে। আজকে মিয়ানমারের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দিলেও বাংলাদেশের গণহত্যার কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা ছিল আরও ভয়াবহ।

তিনি বলেন, গণহত্যা-গণকবর নিয়ে কাজ কতটা প্রয়োজনীয় তা বলে বোঝানো যাবে না। এই কাজটি দেশের প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না এমন কোনো দলের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। বিশ্বের কোনো দেশেই এমন হয় না। তাহলে বাংলাদেশ কেন এমন অদ্ভূত পরিস্থিতিতে পড়বে? যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়। এক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের সব নাগরিককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ইতিহাস বিকৃতি রোধে এখনও আইন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তা দাবি করে আসলেও তার কোনো প্রতিফলন ঘটছে না। যারা ইতিহাস বিকৃতি করবে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের গবেষণার ফলাফল পুস্তক আকারে বের করতে হবে। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন বইগুলো পৌঁছায়। তাহলেই এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো সংগ্রহ করতে হবে। সেখানে প্রকাশিত বইগুলো সংগ্রহেও উদ্যোগ নিতে হবে। গণহত্যার বহু প্রমাণ পাকিস্তানেও রয়েছে। এগুলো সংগ্রহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।

গবেষক মুনতাসির মামুন বলেন, ৪৭ বছর পর প্রথমবারের মতো আমরা গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর নিয়ে জরিপ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলায় এই জরিপ করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জেলায় এই জরিপ চালানো হবে। গণহত্যার ওপর দুই শ’ থেকে তিন শ’ বই বের করতে পারলে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ১০ জেলায় যদি ১ হাজার ৭৫২টি গণহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে ৬৪ জেলায় সে সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে? তাহলে গণহত্যার সংখ্যা কি ৩০ লাখে সীমাবদ্ধ থাকে প্রশ্ন রাখেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের ২৬০ দিন হিসাব করে আমরা মনে করছি হয়তো ১০০ দিন গণহত্যা হয়েছে। তবে এর চেয়ে আরও বেশি সময় ধরে গণহত্যা হয়েছে। এছাড়া ১০ জেলায় গণহত্যার ঘটনার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে- আমরা মনে করি।

অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেনঅধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানের । এছাড়া  বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও শিল্পী হাশেম খান । সেমিনারের দ্বিতীয় অধীবেশন শুরু হয় দুপুর ২টায়। এই অধিবেশেনের সভাপতিত্ব করছেন মুনতাসীর মামুন।  উপস্থিত আছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ( আব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। দ্বিতীয় অধিবেশন শেষ হবে বিকেল ৪টায়।

সারাবাংলা/এমআর/ইএইচটি/আইএ

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন