বিজ্ঞাপন

রোড টু ওয়েম্বলি- কামিং হোম নাকি গোয়িং রোম?

July 11, 2021 | 12:59 pm

সাহাবার সাগর, নিউজরুম এডিটর

চার চারবার গোটা বিশ্বের চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও ১৯৬৮ সালের পর আর কখনোই ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্টে ইউরোর শিরোপা ঘরে তোলা হয়নি ইতালির। এর মধ্যে যদিও ২০০০ ও ২০১২ সালে দুইবার ফাইনাল খেলেছিল আজ্জুরিরা। তবে ২০০০ সালে ফ্রান্সের কাছে এবং ২০১২ সালে স্পেনের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল ইতালিয়ানদের। এবার ৯ বছর পর আবারও ফাইনালে ইতালি। আর সামনে হাতছানি ৫৩ বছর পর ইউরোপের মুকুট পুনরুদ্ধার করার।

বিজ্ঞাপন

ইটস কামিং হোম নাকি গোয়িং টু রোম? উত্তর মিলবে ফাইনালে আগামী ১২ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ইতালি।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২০-তে অংশগ্রহণের আগে টানা ২৭টি ম্যাচ অপরাজিত ছিল ইতালি। ২০১৮ সালে ইতালির ডাগআউটে দায়িত্ব নিয়ে দলের চিত্রই পালটে দিয়েছেন রবার্ট মানচিনি। এই বিজ্ঞ কোচের হাত ধরেই আজ্জুরিদের প্রত্যাবর্তনের গল্প রচিত হচ্ছে। এবারের ইউরোর গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচ জিতেছিল ইতালি। এরপর শেষ ষোলতে অস্ট্রিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে হট ফেভারিট বেলজিয়ামকে সরাসরি হারায় আজ্জুরিরা। আর সেমিফাইনালে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইতালি।

বিজ্ঞাপন

ফাইনালে মাঠে নামার আগে টানা ৩৩টি ম্যাচ অপরাজিত আজ্জুরিরা। গোটা টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত খেলা মোট ছয়টি ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে ইতালির জয় চারটি ম্যাচে। একটি ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ের গোলে আর সেমিফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জিতে ফাইনালের টিকিট কেটেছে ইতালি।

দেখে নেওয়া যাক ফাইনাল পর্যন্ত ইতালির পারফরম্যান্স-

  • ১২ জুন রোমের এস্তাদিও অলিম্পিকোতে ইতালি ও তুরস্কের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা ওঠে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২০ এর। প্রথম ম্যাচে গোল উৎসব করেই যাত্রা শুভ করে আজ্জুরিরা। তুরস্ককে ৩-০ গোলে হারিয়ে দাপুটে জয়ে আগমনী বার্তা দেয় তারা। ঘরের মাঠে ম্যাচের প্রথমার্ধে ইতালি কোনো গোল করতে না পারলেও হজমও করেনি একটিও। তবে দ্বিতীর্ধেই রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বিরতি থেকে ফিরেই ৫৩ মিনিটে বেরার্দির নেওয়া শট তুরস্কের ডিফেন্ডার মেরিহ ডেমিরালের গায়ে লেগে জালে জড়িয়ে পড়ে। আর তাতেই লিড পায় আজ্জুরিরা। এরপর ৬৬ মিনিটে লেওনার্দো স্পিঞ্জজোলার অ্যাসিস্ট থেকে চিরো ইম্মোবিল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে ইম্মোবিলের অ্যাসিস্ট থেকে লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে গোল করে ব্যবধান ৩-০ করেন।

বিজ্ঞাপন
  • রোমার এস্তাদিও অলিম্পিকোতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২০-এর দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে আতিথ্য দেয় ইতালি। ঘরের মাঠে ম্যানুয়েল লোকাতেল্লির জোড়া গোলের সঙ্গে চিরো ইম্মোবিলের এক গোলে সুইসদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে রবার্তো মানচিনির দল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তুরস্ককে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছিল ইতালি। রোমাতে ম্যাচের ২৬তম মিনিটে দলীয় দারুণ এক মুহূর্তে গোল করে ইতালিকে লিড এনে দেন ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের ৫২তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন প্রথম গোলদাতা লোকাতেল্লিই। আর ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে চিরো ইম্মোবিল গোল করলে ৩-০ ব্যবধানের বড় জয় পায় ইতালি।

  • ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের তিন ম্যাচেই জয় পায় ইতালি। আর তাতেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্ব নিশ্চিত আজ্জুরিদের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে পেসসিনার একমাত্র গোলে জয় পায় ইতালি। এটি ইতালির টানা ১১তম জয় ছিল। আর টানা ৩০তম ম্যাচ অপরাজিত আজ্জুরিরা। শেষবার ২০১৮ সালের সেপ্টেবরে পর্তুগালের বিপক্ষে হেরেছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ওয়েলসের বিপক্ষে জয়ের পরে ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ সালে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার নিজেদের রেকর্ড স্পর্শ করে ইতালি।

  • গ্রুপ পর্বে দাপট দেখালেও নকআউট পর্বের শুরুতেই কিন্তু কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ইতালিকে। শেষ ষোলোয় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে জয় পেতে অতিরিক্ত সময়ে যেতে হয়েছিল তাদের। রক্ষণ যেন ‘চীনের মহাপ্রাচীর’ বানিয়ে রেখেছিল অস্ট্রিয়া। কিছুতেই ভাঙতে পারছিল না ইতালি। অবশেষে গোল মিলেছে দুই বদলির কল্যাণে অতিরিক্ত সময়ের খেলায়। যাতে অস্ট্রিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইতালি। লন্ডনের ওয়েলম্বলি স্টেডিয়ামে পাওয়া এই জয়ে ৮২ বছর আগের একটি রেকর্ড ভেঙেছে ইতালি। ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৯ এই সময়ের মধ্যে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল ইতালি। অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার নতুন রেকর্ড গড়ল রবের্তো মানচিনির দল। নির্ধারিত সময় গোলশূন্যভবে শেষ হওয়ার পর ২-১ গোলে জিতে শেষ ষোলোর বাধা পার হয় ইতালি। অতিরিক্ত সময়ের ১১৪ মিনিটে দারুণ এক গোল করে নাটকীয়তার আভাস দিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ার সাসা কালাইজিচ। তবে এরপর আর অস্ট্রিয়াকে কোনো সুযোগ দেয়নি ইতালির পরীক্ষিত রক্ষণভাগ। যাতে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টার নিশ্চিত করে ইতালি।

  • ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে দুই হট ফেভারিট বেলজিয়াম ও ইতালির দেখা। ইতালির হয়ে নিকোলা বারেল্লা আর লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের দুই গোলের পর বেলজিয়ামের হয়ে পেনাল্টি থেকে এক গোল শোধ করেন রোমেলো লুকাকু। তবে শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি রেড ডেভিলসরা। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ২-১ গোলের ব্যবধানের জয় নিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট কাটে আজ্জুরিরা। নিজেদের শেষ ৩১ ম্যাচে অপরাজিত থেকে বেলজিয়ামের বিপক্ষে মাঠে নামে ইতালি। আর বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচে রেকর্ডটি আরও এক ম্যাচ বর্ধিত করল আজ্জুরিরা। রবার্তো মানচিনির অধীনে বদলে যাওয়া ইতালি এবারের ইউরোতে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ জিতে শেষ ১৬তে জায়গা করে নেয়। এরপরে শেষ ১৬’তে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে জয় পায় আজ্জুরিরা। আর কোয়ার্টার ফাইনালে হট ফেভারিট বেলজিয়ামের বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই জয় নিয়ে সেমি নিশ্চিত করে।

বিজ্ঞাপন
  • প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে মুখোমুখি হয় ইতালি ও স্পেন। দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই সময়েও কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে যায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ২০২০ ইউরোর ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইতালি। ইতালির হয়ে একমাত্র গোলটি আসে ফেদেরিখো কিয়েসার কাছ থেকে আর স্পেনকে সমতায় ফেরান আলভারো মোরাতা। ২০১২ সালের ইউরোর ফাইনালে ইতালিকে ৪-০ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর শিরোপা ঘরে তোলে স্পেন। আর শেষবার ১৯৬৮ সালে ইউরোর শিরোপা ঘরে তোলা ইতালি নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জেতা হয়নি। আর ৮ বছর পরে এসে স্পেনকে টূর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে যেন সেই প্রতিশোধটাই নিল আজ্জুরিরা।

  • ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালে মুহূর্তের মধ্যেই হিরো থেকে ভিলেনে পরিণত হলেন ড্যানি অলমো এবং আলভারো মোরাতা। আজ্জুরিদের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও অলমোর অ্যাসিস্ট থেকে ৮০তম মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান আলভারো মোরাতা। আর স্পেনকে ফাইনালের পথেই রাখেন এই দুই খেলোয়াড়। তবে নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ও ১-১ গোলে শেষ হওয়ায় ফলাফল নির্ধারণের জন্য খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারেই ভিলেনে পরিণত হন এই দুই স্প্যানিয়ার্ড। স্পেনের প্রথম শট নিতে এসে বারের উপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন অলমো আর চতুর্থ পেনাল্টি নিতে আসা মোরাতার শট রুখে দেন ডোনারুমা। এই দুইয়ের পেনাল্টি শট মিসের কারণেই শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ইতালির কাছে ৪-২ ব্যবধানে হেরে যায় স্পেন। তাতেই সেমিফাইনালে শেষ হয়ে যায় স্পেনের ইউরো ২০২০-এর যাত্রা।

এবারে অপেক্ষার পালা ওয়েম্বলির ফাইনালের। ইতালির ৫৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘুচবে নাকি ইংলিশদের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ? উত্তর মিলবে ১২ জুলাই!

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন