বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস ও আস্থার সম্মান রাখব

July 18, 2021 | 10:04 pm

নতুন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ড. শামসুল আলম। দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সচিব পদমর্যাদায়, পরবর্তী সময়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে গত এক যুগে সরকারের সব ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। সরকারের টানা তিন মেয়াদের ভিশনারি পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। ষষ্ঠ, সপ্তম ও চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ একাধিক পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে যুক্ত ছিলেন তিনি। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী তার প্রণয়ন করা দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১) সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করে ‘দিন বদলের পদক্ষেপ’ ২০১১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০১০-২০২১’ তার তত্ত্বাবধানে তৈরি। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২০২১) ও সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (২০১৫-২০২৫) তত্ত্বাবধানেও ছিলেন তিনি। এছাড়া শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ তথা ডেল্টা প্ল্যানও প্রণীত হয়েছে তার হাত ধরে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অর্থনীতিতে একুশে পদক। এবারে সরকারের পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত হতে টেকনোক্র্যাট হিসেবে পেয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ড. শামসুল আলম। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এর আগে শুক্রবার সকালে তিনি নিজেই সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছিলেন, এই দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। শনিবার (১৭ জুলাই) একান্ত সাক্ষাৎকারে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এই দায়িত্বেও সফল হতে চান তিনি। নতুন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো সারাবাংলার পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জোসনা জামান

সারাবাংলা: দীর্ঘ এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এবারে সেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নতুন এই দায়িত্ব পাওয়ার পর কেমন মনে হচ্ছে?

ড. শামসুল আলম: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাস ও আস্থার সম্মান রাখব। তিনি আমার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটি সঠিকভাবে পালন করা আমর অন্যতম দায়িত্ব। তিনি আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। এর চেয়ে বড় কী হতে পারে! এর আগে তিনি জিইডিতে (সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ) আমাকে কাজের সুযোগ দিয়েছিলেন। এক দিন, দু’দিন নয়, দীর্ঘ ১২ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেটি কাজে লাগিয়ে শুধু কাজ করে গেছি। এদিক-ওদিক তাকাইনি। অন্যায়ের সঙ্গে কখনও আপস করিনি। ভালো কাজ করলে যে তার ফল পাওয়া যায়, আমি মনে করি সেটি আমার জীবনে প্রমাণিত।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: জিইডিতে আপনি যে কাজ করেছেন, নিজেকে নিজে মূল্যায়ন করবেন কীভাবে?

ড. শামসুল আলম: জিইডি একসময় মানুষ ওইভাবে চিনত না। আমি চেষ্টা করেছি এই বিভাগের সঙ্গে দেশের নামকরা অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পাবিদ, গবেষকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির। দেশের উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর পরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা করেছি। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১) সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করেছি। পরবর্তী সময়ে সেটি ‘দিন বদলের পদক্ষেপ’ ২০১১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০১০-২০২১’ ছাড়াও দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) আমার তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে। এছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যে দু’টি এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও আমার হাতেই তৈরি। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২০২১) ও সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রও (২০১৫-২০২৫) তৈরি করেছি। এছাড়া শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ তথা ডেল্টা প্ল্যানও প্রণয়ন করেছি। এতগুলো পরিকল্পনা করার সৌভাগ্য ক’জনের হয়? আমি সেই সৌভাগ্যবান। আর সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ব্যাপক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। তার সরাসরি তত্বাবধানে জিইডি হতে প্রকাশ হয়েছে ১১৩টি বই, যেগুলো একেকটি জ্ঞানের ভাণ্ডার। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যায় বেরিয়েছে আরও ২৬টি বই এবং আমার নিজের সম্পাদনায় বেরিয়েছে ৩৫টি বই।

সারাবাংলা: এর আগে জিইডি সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। এখন তো প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেক্ষেত্রে গবেষণায় কতটুকু জোর দেবেন?

বিজ্ঞাপন

ড. শামসুল আলম: সত্যিকার অর্থেই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই। একনেক বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়ে বলেন, গবেষণা বাড়াতে হবে। গবেষণার জন্য অর্থ কোনো সমস্যা নয়। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি চেষ্টা করব বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে কীভাবে আরও বাস্তবভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানো যায়। এটি আমার কাজের একটি অন্যতম অংশ হবে।

সারাবাংলা: রূপকল্প ২০৪১ সম্পর্কে কিছু বলুন।

ড. শামসুল আলম: রূপকল্প ২০৪১ রূপায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১)। ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় এই পরিকল্পনা সিঁড়ি বেয়েই বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে মর্যাদাশীল উন্নত দেশে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) অনুমোদনের পর অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এই রূপকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ হয়েছে। এমডিজি অর্জনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে বাংলাদেশ। এখন চলছে এসডিজির বাস্তবায়ন। এজন্য দরকার তড়িৎ, অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য টেকসই রূপান্তর। দীর্ঘ মেয়াদি এ পরিকল্পনাটির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব হবে।

সারাবাংলা: ডেল্টা প্ল্যান তথা শতবর্ষী ব-দ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নের তত্ত্বাবধানেও ছিলেন আপনি। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের পক্ষে এরকম শতবর্ষব্যাপী পরিকল্পনা কতটা উপযোগী? এ পরিকল্পনাটি নিয়ে কিছু বলুন।

বিজ্ঞাপন

ড. শামসুল আলম: ব-দ্বীপ পরিকল্পনা আমাদের অন্যতম বড় ও উল্লেখযোগ্য একটি কাজ। বাংলাদেশ কিন্তু আগের বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর একটি দেশ কতটা এগিয়ে যেতে পারবে সেটি নির্ভর করে তারা কতটা দূরদর্শী, তার ওপর। ফলে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দূরদর্শী পরিকল্পনা থাকতে হবে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা তেমনই একটি পরিকল্পনা।

প্রথম পর্যায়ে এই পরিকল্পনায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন হবে ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলের ৯টি প্রকল্পের জন্য লাগবে ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এছাড়া হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ছয়টি প্রকল্পে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮ প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা, নদী ও মোহনা অঞ্চলে সাতটি প্রকল্পে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে। পরিকল্পনায় ঝুঁকি বিবেচনায় ছয়টি হটস্পট চিহ্নত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব হটস্পটে ৩৩ ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। হটস্পটগুলো হচ্ছে— উপকূলীয় অঞ্চল, বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল, হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, নদী ও মোহনা অঞ্চল এবং নগরাঞ্চল। পরিকল্পনায় অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সে অঞ্চলের পানি বিজ্ঞান ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে দেশের আটটি হাইড্রোলজিক্যাল অঞ্চলকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে প্রতিটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকি মাত্রার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা: উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের অনুশাসন দিয়ে থাকেন। সেসব অনুশাসন কতটা বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়টি কীভাবে মনিটরিং করা হয়? এটি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

ড. শামসুল আলম: অবশ্যই মনিটরিং জোরদার করা হবে। এরই মধ্যে পরিকল্পনা বিভাগ থেকে এ বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া আছে। মনিটরিং কীভাবে করতে হবে, তা পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করা হয়েছে। সেটি আপডেট করার কাজও চলছে। মনিটরিং কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমি সচেষ্ট থাকব।

সারাবাংলা: করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এই বিপর্যয় ঠেকাতে অর্থনীতি কিভাবে পুনরুদ্ধার হবে?

ড. শামসুল আলম: জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা এই মুহূর্তের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলোর বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় নানা কৌশল রয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এই পরিকল্পনায়। সেগুলো যেন বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্যোগ থাকবে আমার পক্ষ থেকে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে করোনা মহামারিসহ ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে একটি সার্বজনীনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা ইউনিভার্সেল হেলথ সিস্টেম প্রবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানোসহ আরও অনেক কৌশল রয়েছে।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. শামসুল আলম: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন