বিজ্ঞাপন

ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ৬২ শতাংশ নারী সদস্য যৌন হয়রানির শিকার

July 25, 2021 | 11:52 pm

রোকেয়া সরণি ডেস্ক

ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত তিন ভাগের দুই ভাগ নারী সদস্য তাদের কর্মজীবনে নানা ধরনের হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনীর নারী সদস্যদের চিকিৎসা সংক্রান্ত এক তদন্তের অংশ হিসেবে পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপকমিটি এক জরিপ চালায়। জরিপে অংশ নেওয়া ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত ৪ হাজার ১০৬ জন নারী সদস্যের মধ্যে ৬২ শতাংশই তাদের সঙ্গে ঘটা নানা মাত্রা ও ধরনের নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

গণধর্ষণ, পদোন্নতির জন্য যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা, পুরুষদের মধ্যে নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তৈরি করার পুরষ্কার হিসেবে ‘ব্যাগ দ্য উইম্যান’ নামক ট্রফি দেওয়াসহ নানা ধরনের নির্যাতনের কথা উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে ওই সংসদীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী নারীদের ‘সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ’ হচ্ছে।

প্রতিবেদনে ‘সত্যিকারের মর্মস্পর্শী ঘটনা’ শিরোনামে নির্যাতনের ভয়াবহ সব বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণ, পদোন্নতির জন্য যৌন সম্পর্কসহ সামরিক জাহাজ ও ক্যাম্পে নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ার বিশেষ পুরষ্কার ঘোষণার রেওয়াজের কথা উঠে এসেছে।

এ তদন্তে নারীরা তাদের বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে জানান, যৌন সম্পর্ক স্থাপন না করলে কীভাবে পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা। আবার কেউ কেউ তার নারী সহকর্মীকে একদল পুরুষ দ্বারা হামলার শিকার হতে দেখেও ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি বা কোনো অভিযোগ জানাতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন। তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে এক নারী বলেন, ‘নারী সৈনিকদের জন্য সামরিক মেস এবং সামরিক আবাসগুলো বিদেশে যুদ্ধের ময়দানের চেয়েও ভয়ংকর জায়গা’। তিনি সামরিক মেসগুলোকে ‘বিপজ্জনক স্থান’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান সারা অ্যাথার্টন বলেন, ‘যে কাহিনীগুলি শুনছি তার মাধ্যমে নারীদের কঠিন পরিস্থিতির একটি চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সামরিক বাহিনীতে ধর্ষণের শিকার নারীটিকে হয়ত তার ধর্ষকের সঙ্গেই কাজ করতে হয়। আবার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভয়ে সে মুখ খুলতেও পারে না’।

উল্লেখ্য যে, সামরিক বাহিনীতে কাজ করা অবস্থায় কর্মক্ষেত্র নিয়ে এমন মন্তব্য করা বিধিবহির্ভূত। তবে এবারের এ তদন্তে নারী সদস্যরা বিনা বাধায় নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে পেরেছেন। কেননা, এ তদন্তে প্রথমবারের মতো সামরিক বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় স্বাধীন মতামত দেওয়ার জন্য সৈনিকদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে অনেক নারী সদস্য তাদের অভিজ্ঞতার কথা অকপটে জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর প্রতি ১০ জনের একজন নারী সদস্য এ তদন্তে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৭০০ সদস্য তদন্ত প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন যে, তারা পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত এ সংস্কৃতির পরিবর্তন চান। অনেকেই ‘মেস হল সংস্কৃতি’ বিলুপ্ত এবং যৌন নির্যাতন মোকাবিলায় আরও কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানান। মতামত জানানো এসব নারীদের মধ্যে ১১ শতাংশই গত এক বছরের মধ্যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপকমিটির সদস্যরা আরও জানতে পারেন, সামরিক বাহিনীতে নারীরা শুধু নির্যাতনেরই শিকার হন তা নয়, বরং নির্যাতিত হলে তারা এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ জানাতেও ভয় পান। অভিযোগ জানালে তারা আরও বেশি নির্যাতন-হয়রানির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কায় থাকেন। প্রতি ১০ জনে ৬ জন নারী বলেছেন, তারা হুমকি, হয়রানি ও বৈষম্যের শিকার হলেও  ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার কারণে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন বলেই নারী সৈনিকদের বড় অংশ অভিযোগ ব্যবস্থাকে ‘অত্যন্ত বাজে’ বলে অভিহিত করেছেন।

অনুসন্ধানে সামরিক বাহিনীর মধ্যে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি ঘটনায় অভিযোগ করলে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে— তাতেও গুরুতর সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো নারী অভিযোগ জানালে তা যেভাবে নেওয়া হয়, তা প্রায়শই ভুক্তভোগীর ট্রমা আরও জটিল করে তোলে। দেখা যায়, কর্তব্যরত পুলিশের কাছে হয়রানি বা নির্যাতনের অভিযোগ করার ক্ষেত্রে ‘চেন অব কমান্ড’ লঙ্ঘনের বাধা সামনে চলে আসে। ফলে নির্যাতনের শিকার হয়ে অভিযোগ করার মতো যথাযথ কোনো পক্ষই খোঁজে পান না তারা। শেষ পর্যন্ত তারা বঞ্চিত হন সুবিচার থেকে।

অ্যাথার্টন নামের সাবেক নারী সৈনিক বলেন, ‘শুনেছি প্রবীণ সেনা কর্মকর্তারা তাদের নিজস্ব খ্যাতি এবং কর্মজীবন রক্ষার জন্য তাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো আমলে নেন না। এমনকি অভিযোগকারী মিথ্যাচার করছে বলেও মুখবন্ধ করে দেওয়া হয়। উল্টো অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়। অনেক জুনিয়র অফিসার এসব অভিযোগ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলেও ‘চেন অব কমান্ড’  ভাঙার দায়ে উল্টো নির্যাতিত নারীটিকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়’।

সংসদীয় প্রতিবেদনে তাই যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ক্ষেত্রে ‘চেন অব কমান্ড’ মানার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এসব অভিযোগ শুনানির পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওই সংসদীয় প্রতিবেদনে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলাগুলো সামরিক বিচার ব্যবস্থার এখতিয়ার থেকে বের করে এনে বেসামরিক আদালতে স্থানান্তরের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সামরিক আদালত বিশেষ করে ধর্ষণের মামলায় বিচার ও সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসামরিক আদালতের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন