বিজ্ঞাপন

বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল, ১ আগস্ট পোশাককর্মীদের কাজে যেতে নির্দেশ

July 27, 2021 | 10:13 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন কিছু পোশাক কারখানার মালিক। ঈদুল আজহার পর ২৩ জুলাই থেকে কার্যকর রয়েছে এই কঠোর বিধিনিষেধ, যার আওতায় সব ধরনের শিল্প কারখানাও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু ঈদের পর থেকেই এই নির্দেশনা অমান্য করে বেশকিছু পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল। পরে পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের চাপে কিছু কারখানা বন্ধ করা হলেও কিছু কারখানা খোলা রয়েছে এখনো। অথচ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সরকার ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ জারির ঘোষণা দিয়ে রাখলেও অনেক কারখানাই পোশাক শ্রমিকদের কারখানায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছে। কিছু কিছু কারখানা কর্মীদের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে জানায়, ২৫ জুলাই তাদের কারখানায় হাজির থাকতে হবে। আর কিছু কারখানা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে, ১ আগস্ট থেকে কারখানায় কাজে যোগ দিতে হবে। যেসব কারখানা শ্রমিকদের ২৫ জুলাই কাজে আসতে বলেছিল, সেসব কারখানাও পরে শ্রমিকদের আপাতত বাসায় অবস্থান করে ১ তারিখ থেকে কাজে যোগ দিতে বলেছে।

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও যেসব পোশাক কারখানা খোলা রাখা হয়েছিল বা হয়েছে, তার সবগুলোই গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার ও নারায়ণগঞ্জের। কারখানা খোলা রাখার ছবি ও ভিডিও এবং কর্মীদের বক্তব্য সারাবাংলার হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। তবে রাজধানী ঢাকার কোনো পোশাক কারখানা খোলা রাখার খবর পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি রেখেছিল সরকার। পরবর্তী সময়ে ঈদুল আজহা সামনে রেখে ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। তবে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং সব ধরনের কল-কারখানাও বন্ধ থাকবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- কঠোর বিধিনিষেধ চলবে, খুলছে না শিল্প কারখানা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের এই নির্দেশনা অমান্য করেই নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের বেশকিছু পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়। গাজীপুরের স্কয়ার টেক্সটাইল, আশুলিয়ার সাদাতিয়া ও এসসুহি কারখানা, নারায়ণগঞ্জের ফকির ডায়িং এর মধ্যে অন্যতম।

কারখানাগুলোর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবারেই (২৩ জুলাই) বেশ কিছু কারখানা খুলে দেওয়া হয়। ২৪ জুলাই খোলা রাখা কারখানার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। তবে বেশিরভাগ কারখানা খোলা ছিল আংশিক। এসব কারখানা শ্রমিকদের আসতে বাধ্য করেছে। কোনো কোনো কারখানা শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করার ভয়ও দেখিয়েছে। শ্রমিকরা চাকরি হারানোর ভয়ে বাধ্য হয়ে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও কারখানায় এসে কাজে যোগ দেন। বেশকিছু শ্রমিকের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে সারাবাংলার কথা হলেও তারা চাকরির ভয়ে নাম প্রকাশে রাজি হননি।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার একজন সহকারী ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, প্রথমে শ্রমিকদের ২৫ জুলাই কারখানায় হাজির হতে বলা হয়। শ্রমিকরা হাজির হলে তাদের বাসায় চলে যেতে বলে। তারপর বলা হয়, আগামী ১ আগস্ট শ্রমিকদের কারখানায় উপস্থিত থাকতে হবে। সেদিন কারখানা খোলা সম্ভব হবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে মালিকপক্ষ থেকে আপাতত আমাদের জানানো হয়েছে, ১ আগস্ট পোশাক কারখানা খুলছে।

আশুলিয়া এলাকার একটি পোশাক কারখানার একজন কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি ছিলাম। এর মধ্যে মেসেজ পাই, ২৫ জুলাই কারখানায় থাকতে হবে। ফরিদপুর থেকে অনেক কৌশল ও অনেক কষ্ট করে আসতে হয়েছে। ওই দিন কারখানা খুলেছিল। তবে দুপুরের দিকে বন্ধ করা হয়। শ্রমিকদের বলা হয়, ১ আগস্ট কারখানা খোলা হবে। কিন্তু সরকার তো ৫ আগস্টের আগে বিধিনিষেধ তুলছে না। সেক্ষেত্রে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এখনো সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে পারেনি।

গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে লালমনিরহাটের শফিকুল ইসলাম। ১ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন তিনিও। শফিকুল বলেন, ১ আগস্ট কারখানা চালু হবে— আমাদের ফোন করে এটি জানানো হয়েছে। কিন্তু বাস-ট্রেন কিছুই চলছে না। এ অবস্থায় কীভাবে গাজীপুর যাব, তা বুঝতে পারছি না। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে হলে যেকোনো উপায়ে হোক না কেন, গাজীপুরে পৌঁছাতে হবে।

ঈদের পর বিধিনিষেধের মধ্যেও যেসব কারখানা খোলা ছিল, সেসব কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল, ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে সরকারের অনুমতিও তারা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। সে কারণেই তারা ১ আগস্ট শ্রমিকদের কারখানায় আসতে বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

এসব বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এম এ শাহীন সারাবাংলাকে বলেন, গার্মেন্টস মালিকদের এই খামখেয়ালির কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় সরকার দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার কথা ভেবেই লকডাউন ঘোষণা করেছে, একইসঙ্গে শিল্পকারখানাও বন্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার বারবার নিশ্চিত করেছে, এই সময়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। তারপরও মালিকরা সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কারখানা খোলা রেখেছে। তারা তাদের মতো করে চলছে। শ্রমিকরা এ বিষয়ে নিরুপায়। কেউ এর অনিয়মের প্রতিবাদ করলে বা কারখানায় উপস্থিত না হলে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই কারখানায় যোগ দিচ্ছেন। মালিকদের এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকারের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার আশুলিয়া ধামরাই আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. বকুল আহমেদ বলেন, শ্রমিকরা যেন করোনা আক্রান্ত না হয়, এজন্য সব শিল্প কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও আশুলিয়ার এসসুহি, সাদাতিয়া নিটওয়্যারসহ বেশ কিছু কারখানা খোলা রাখা হয়েছে। কারখানায় না এলে শ্রমিকদের চাকরি চলে যাওয়ার ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে কারখানায় এসে কাজ করছে। আমরা মালিকের এ ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সারাবাংলা/ই্উজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন