বিজ্ঞাপন

নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ, মন্ত্রী বললেন প্রয়োজনে

July 27, 2021 | 9:21 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। তবে বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনে এসে রাজধানীর কিছু এলাকার চিত্র দেখলে মনে হয় না দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। নানা কারণে, নানা অজুহাতে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। শারীরিক দূরত্বের বালাই তো নেই-ই, মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতাও কম। দুয়েকজন ছাড়া প্রায় সবার মুখেই মাস্ক দেখা গেলেও তাদের অধিকাংশেরই থুতনিতে ঝুলতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর গুলিস্তান, জিরোপয়েন্ট, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীর এই এলাকাগুলোতে বেশ জনসমাগম থাকে। কিন্তু বিধিনিষেধের মধ্যেও এসব এলাকার চিত্র ছিল প্রায় স্বাভাবিক দিনের মতো। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না।

রাজধানীর সচিবালয় সংলগ্ন ফুটপাথে গাছের ছায়ায় রাস্তার পাশে এক রকম জড়ো হয়েই বসে আছেন কিছু মানুষ। একজনকে নাম জিজ্ঞেস করতেই একে অপরের থেকে দূরে সরে বসলেন। দুএকজন উঠে গেলেন। একজন সাইদুর রহমান, তিনি বলেন টানা পাঁচদিন ঘরে থেকে দমবন্ধ লেগেছিলো তাই কিছু কেনার জন্য বাইরে এসে এখানে জিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় অনেক শান্তি লাগছে।

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় স্টেডিয়াম সংলগ্ন বাসন্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে ছিল সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বাইরে আসার কারণ জানতে চাইলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমার বাসা শনির আখড়া। গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় আজিমপুরে বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। গাড়ি বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে এ পর্যন্ত এসেছি।’

বিজ্ঞাপন

তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আতাহার আলীর হাতে বাজারের ব্যাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি বাজার করতে বেরিয়েছেন। সাড়ে তিনটার সময় বাজারে যাচ্ছেন কেন?- জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলে উঠলেন, ‘মাস্ক পড়েছি এবং দূরত্ব বজায় রেখেই দাঁড়িয়েছি।? আসল প্রশ্নের জবাব না দিয়েই হাঁটা শুরু করলেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জরিমানা, গ্রেফতারের পরেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। কেউ অফিসে যাবেন, কেউ বাজারে, কেউ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাবেন- এমন অজুহাত প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে টানা ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলমান। ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বিধিনিষেধে মানুষের চলাচল, প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা থাকলেও প্রতিটি সড়কে মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। পাড়া মহল্লা, অলি-গলিতে তো আছেই, মানুষের সমাগম দেখা যায় প্রধান সড়কেও। প্রধান সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে মানুষ কিংবা গাড়ির গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদে বের হওয়ার প্রমাণ দিতে পারলেই ছাড়া পাচ্ছে। আর যার প্রমাণ যথোপযুক্ত মনে হচ্ছে না তাদের গুনতে হচ্ছে জরিমানা। প্রতিদিন সারাদেশে পাঁচশ’র বেশি মানুষকে জরিমানা করা হলেও তাদের চলাচল রোধ করা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের বাইরে কেউ বের হচ্ছে না। যার প্রয়োজন হচ্ছে সে-ই বাইরে বের হচ্ছেন। কারও জরুরী সেবার প্রয়োজন হতে পারে- সে-ই বাইরে যাচ্ছেন।’

তবে ঢিলেঢালা এই বিধিনিষেধ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার (২৬ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে হলে বিধিনিষেধের বিকল্প নেই। মানুষকে বিধিনিষেধ মানাতে হবে। তাদেরকে ঘরে রাখতে হবে।’ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সবাই মাস্ক পরিধান নিশ্চিতের তাগিদ দেন তিনি।

এদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রচুর মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যে অজুহাত দেখাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) মৃতের সংখ্যা ২৫৮ জন। অন্যদিকে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৯২৫ জন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন