বিজ্ঞাপন

করোনায় ১৩ মাসের মৃত্যু সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেল শেষ ১০৫ দিন

July 28, 2021 | 9:42 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ ২০২০ করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর পেরিয়ে গেছে আরও ৫০৮ দিন। এই সময়ে করোনায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। দেশে প্রথম ১৩ মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে সরকারি হিসেবে ৯ হাজার ৯৮৭ জন মারা গেলেও ১৫ এপ্রিল থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত শেষ ১০৫ দিনে মারা গেছে ১০ হাজার ২৯ জন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতেই দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে করোনায় মৃত্যু ১৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৪ জুলাই। তার ঠিক ৫ দিনের মাথায় ২৮ জুলাই এসে সেই সংখ্যা ২০ হাজার পেরিয়েছে। এর আগে ৯ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত মাত্র পাঁচ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায় এক হাজারের অধিক।

১০৫ দিনের পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেলো ১৩ মাসের মৃত্যুসংখ্যা

বিজ্ঞাপন

দেশে প্রথম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর পর দেশে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০৩ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যায়। ১৩ মাসেরও বেশি সময়ের এই পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে বিগত ১০৫ দিনের পরিসংখ্যান। ১৫ এপ্রিল থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে ১০ হাজার ২৯ জন।

যেভাবে ২০ হাজার মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। প্রায় একমাস পর ১৫ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০-এর ঘরে পৌঁছায়।

২০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন। একমাস পাঁচ দিন পর ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়ে যায়।

১৫ দিনের মাথায় ১০ জুন এই সংখ্যা স্পর্শ করে হাজারের ঘর। সে হিসাবে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫ দিনে করোনায় মৃত্যু স্পর্শ করে হাজারের ঘর।

এর ২৫ দিনের মধ্যেই করোনায় আরও এক হাজার মৃত্যু হয়। ৫ জুলাই দুই হাজার ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু।

বিজ্ঞাপন

এরপরের এক হাজার মৃত্যু হয় আরও দ্রুত— মাত্র ২৩ দিনে। ২৮ জুলাই তিন হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু।

দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চার এবং পাঁচ হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে সময় লাগে ২৮ দিন করে। ২৫ আগস্ট চার হাজার ও ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু।

তারপর করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর গতি সামান্য কমে যায়।

২২ সেপ্টেম্বরের ৪৩ দিন পর ৪ নভেম্বর ছয় হাজার এবং এর ৩৮ দিন পর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং তার ৪২ দিন পর ২৩ জানুয়ারি করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু পেরিয়ে যায় আট হাজারের ঘর।

এরপর করোনায় মৃত্যুর গতিতে লাগাম টানা সম্ভব হয়। আট হাজারের পর মৃত্যু ৯ হাজারের ঘরে যেতে সময় লাগে দুই মাসেরও বেশি— ৬৭ দিন। এ বছরের ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার পেরিয়ে যায়।

এপ্রিলে দেশে করোনায় মৃত্যু আগের সকল পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যায়। এ মাসের এক দিনে ওই সময়কার সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুও দেখেছে বাংলাদেশ। তাতে এপ্রিলের প্রথম ২৫ দিনেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে দুই হাজার ৭ জনের মৃত্যু হয়। ২৫ এপ্রিল করোনায় মোট মৃত্যু ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর ১৬ দিন পরে অর্থাৎ ১১ মে মৃত্যু ছাড়ায় ১২ হাজারের ঘর।

১১ জুন দেশে করোনায় মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়ায়। এর পরের হাজার মৃত্যুতে সময় লাগে ১৫ দিন। ২৬ জুন দেশে করোনায় মৃত্যু ১৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর ঠিক আট দিন পরেই ৪ জুলাই দেশে করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজারে পৌঁছায়। এই আট দিনের প্রতিদিনই করোনায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

৪-৯ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিনে দেশে এক হাজার ৯২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর মধ্যে ৭ জুলাই প্রথমবারের মতন মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়।

৯ জুলাই দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে ২১২ জন মৃত্যুবরণ করেন।

১০-১৪ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ দিনে দেশে করোনায় এক হাজার ৪৮ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যু সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১৭ হাজার।

১৫ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়ায়।

১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়ায়। এই পাঁচ দিনে দেশে এক হাজার ১৫২ জন মৃত্যুবরণ করেন।

২৫ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়ায়। এই পাঁচ দিনে দেশে এক হাজার ১৬৫ জন মৃত্যুবরণ করেন।

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ৫ দিন

২৭ জুলাই: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৫৮ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

২৬ জুলাই: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৪৭ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

২৮ জুলাই: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৩৭ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

১৯ জুলাই: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৩১ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

১১ জুলাই: ২৩০ জনের মৃত্যু, যা ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে পঞ্চম সর্বোচ্চ মৃত্যু

এদিকে, দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৬২৭ জন পুরুষ এবং ছয় হাজার ৩৮৯ জন নারী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। শতাংশ হিসাবে করোনায় মোট মৃত ব্যক্তির ৬৮ দশমিক ০৮ শতাংশ পুরুষ, ৩১ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী।

বয়সভিত্তিক মৃত্যুর হিসাব

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারী ২০ হাজার ১৬ জনের মধ্যে ১১ হাজার ৫২ জনই ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ, করোনায় মৃতদের ৫৫ দশমিক ২৩ শতাংশই এই বয়সী। আর, সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে নবজাতকসহ অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সীদের।

এছাড়াও, ৫১-৬০ বছর বয়সী চার হাজার ৭৭১ জন (২৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ) ও ৪১-৫০ বছর বয়সী দুই হাজার ৪০৯ জন (১২ দশমিক ০৪ শতাংশ) মানুষ করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন।

অন্যদিকে, নবজাতক থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে মারা গেছে ৫৭ জন (শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ), ১১-২০ বছর বয়সী মারা গেছে ১২৯ জন (শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ), ২১-৩০ বছর বয়সী ৪৩৩ জন (২ দশমিক ১৬ শতাংশ) এবং ৩১-৪০ বছর বয়সী এক হাজার ১৬৫ জন (৫ দশমিক ৮২ শতাংশ) মারা গেছেন।

করোনায় বিভাগওয়ারি মৃত্যু

দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিয়ে ৯ হাজার ২৭৩ জন মারা গেছেন। যা মোট মৃত্যুর ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিন হাজার ৬৯৬ জন জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ১৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬৪৫ জন মারা গেছেন খুলনা বিভাগে। যা মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।

এর বাইরেও, রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৫৪৮ জন (সাত দশমিক ৭৩ শতাংশ), রংপুর বিভাগে ৯৮৯ জন (চার দশমিক ৯৪ শতাংশ), সিলেট বিভাগে ৭২২ জন (তিন দশমিক ৬১ শতাংশ), বরিশাল বিভাগে ৬২১ জন (তিন দশমিক ১০ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ৫২২ জন (দুই দশমিক ৬১ শতাংশ)।

এ পরিস্থিতিতে করণীয়

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় কী— জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় সম্প্রতি ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে একই সময়ে কিন্তু সংক্রমণও অনেক বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়লেই বয়স্ক মানুষদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। যারা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আর বয়স্ক এবং এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই, সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

ডা. আলমগীর আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যক্তির সচেতনতা। সরকার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করবে কিন্তু ব্যক্তি যদি সচেতন হয়ে সরকারি পদক্ষেপে সহযোগিতা না করে; তবে বিপদ বাড়বে।’

কারণ, কোনো এলাকায় একজন সংক্রমিত হলেই তার পরিবার-সমাজে সংক্রমণ ছড়াবে। এ কারণেই সকলকে মাস্ক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সচেতন থাকার পাশাপাশি, মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এবং নমুনা পরীক্ষা করে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন আইইডিসিআরের এই কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/এসবি/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন