বিজ্ঞাপন

ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ১৫ দিনে ঢামেকে চিকিৎসা নিয়েছেন হাজার রোগী

July 31, 2021 | 5:27 pm

সৈয়দ সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বয়স্কদের পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ছিল এরকম আনুমানিক হাজার খানের রোগী ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের কারও কারও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের মিটফোর্ড ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে পাঠানো হয়েছে। যাদের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো তাদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিকেলেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল বহির্বিভাগের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেলের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সেখানে শনিবার (৩১ জুলাই) নয় জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু ছয় জন, নারী দুই জন ও পুরুষ এক জন।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত বুশরা আক্তার (১০)। তাদের বাড়ি যাত্রাবাড়ী বিবিরবাগিচা এলাকায়।

বিজ্ঞাপন

বুশরার মা সোনিয়া আক্তার জানায়, গত ২৫ জুলাই জ্বর আসে বুশরার। গত ২৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করানো হয়। ২৮ জুলাই ডেঙ্গু পজিটিভ রেজাল্ট আছে। সেদিন থেকেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে।

৭ মাস বয়সী আলিফ। তাকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন মা তাসলিমা আক্তার।

তাসলিমা জানায়, তাদের বাসা বংশাল নাজিমউদ্দিন রোডে। শিশুটির বাবা আমিনুল রিকশা চালায়। গত ২৯ জুলাই হঠাৎ করে জ্বর আসে আলিফের। গতকাল ৩০ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় তাকে।

বিজ্ঞাপন

 চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাসলিমার ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর আলিফকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঢামেক হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সাকিবুল আলম (১১) বছরের এক শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তার পরিবার সাকিবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করছে।

সাকিবের বাবা ঢামেক হাসপাতালের স্টাফ মো. শাহ আলম জানান, তাদের বাসা এলিফ্যান্ড রোডের মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারে। গত ২৭ জুলাই জ্বর আসে সাকিবের। বাসাতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু থেমে জ্বর আসায় তারা ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধারণা করছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজকে সাকিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। সাকিবের ডেঙ্গু পজিটিভ রেজাল্ট আসে।’

শিশুদের ডেঙ্গুর বিষয় নিয়ে কথা হয় বহির্বিভাগের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রাজেশ মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ছয় শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসা শুরু করেছে। এর মধ্যে সবই ঢাকা থেকে এসেছে।’

ডা. রাজেশ বলেন, ‘গত সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ জন শিশু পজিটিভ পেয়েছি। এদের মধ্যে যাদের শারিরীক অবস্থা খারাপ, র‍্যাশ আছ, রক্তের প্লাটিলেট অনেক কম, ভবিষ্যতে খারাপ হতে পারে। সেই সব শিশুকে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে।’

ডা. রাজেশ বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ অনেকেরই জানা, যেমন প্রস্রাব লাল, শরীরে লাল র‍্যাশ ওঠে, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হওয়া, পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত দিয়ে হওয়া। এমনকি জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে পজেটিভ নাও আসতে পারে। আবার মশা কামড়ানোর তিন থেকে সাত পরেও পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু পজেটিভ আসতে পারে।’

ডা. রাজেশ মজুমদার বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে জ্বর আসার পর নাপার অতিরিক্ত কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। জ্বর কয়েকদিন থাকলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। একটি নির্দেশনা পেয়েছি, যারা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসে, সব পরীক্ষার সঙ্গে ডেঙ্গু পরীক্ষাটাও করা হয়।’

পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুজন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্তান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। যাত্রাবাড়ী ধনিয়া থেকে আসা রোগী রুহুল আমিন (৬২)।

তিনি জানান, কুমিল্লা হোমনা উপজেলায় ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার। ঢাকার বাসায় থাকাকালীন গত ২৫ জুলাই জ্বর আসে তার। ২৭ জুলাই মুগদা হাসপাতালে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেদিনই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়।

ঢাকায় এসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় প্রকাশ হালদার (৫০) তার বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায়। সেখানেই কৃষি কাজ করেন। গত ৬ জুলাই গ্রামের বাড়িতে পরে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। সেদিনই তাকে ঢাকায় তার বোন জামাই অশোক সরকারের ফার্মগেট গ্রিনরোডেরর বাসায় আসে। পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়।

অশোক সরকার জানান, গত ২১ জুলাই হঠাৎ তার জ্বর আসে। পরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে যান। সেখানে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। ২৯ জুলাই ঢামেকে ভর্তি হন।

বর্হিবিভাগের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী পাচ্ছি। হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডনগুলো করোনা ইউনিট বানানো হয়েছে। তবে যেসব রোগীর অবস্থা খারাপ থাকে তাদেরকে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে চলে গেছেন। বর্তমানে তিনজন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। এর মধ্যে দুইজন পুরুষ একজন নারী। এরা ভালো আছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগের প্রায় সাত থেকে আটজন রোগী জ্বর নিয়ে বহির্বিভাগে আসে। এর মধ্যে যাদের সমস্যা বেশি তাদেরকেই ভর্তি দেওয়া হচ্ছে।’

দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। বুধবার (২৮ জুলাই) থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৪ জন। আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় এই সংখ্যা ৪১ জন বেশি।  এটি একদিনে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের রেকর্ড।

সারাবাংলা/এসএসআর/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন