অনলাইনে বেড়েছে জঙ্গি তৎপরতা: সিটিটিসি প্রধান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সাম্প্রতিককালে দেশে জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ অপতৎপরতা লক্ষ্য করা না গেলেও অনলাইনে তৎপরতা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জঙ্গি দমনে গঠিত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, অফলাইনে তাদের (জঙ্গিদের) তৎপরতা নেই। তবে তারা অনলাইনে সক্রিয়। যদিও এজন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কোনো ঘটনা ঘটার আগেই জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার করছে সিটিটিসি।

গত ১৬ মে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক বক্সে বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত নব্য জেএমবির দুই সদস্যকে গ্রেফতারের পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দুইজন হলেন, শফিকুর রহমান হৃদয় ওরফে বাইতুল্লাহ মেহসুদ ওরফে ক্যাপ্টেন খাত্তাব ও মো. খালিদ হাসান ভূঁইয়া ওরফে আফনান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ গ্রাম লাল রং এর বিস্ফোরক জাতীয় পদার্থ, তিনটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, একসেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, ৪ প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ১০টি ক্রিসমাস বাল্ব, দুটি কালো রংয়ের ইলেকট্রিক টেপ, একটি আইইডি তৈরির ম্যানুয়াল ও হামলায় ব্যবহৃত লাল রঙের একটি পালসার মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ১১ জুলাই সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও সোয়াট টিম যৌথ অভিযানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার নোয়াগাঁও এলাকা হতে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করে। মামুনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য এবং বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর শফিকুর ও খালিদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান জন ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর নির্দেশে গত ১৬ মে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সাইনবোর্ড ট্রাফিক বক্সে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় তারা। ত্রুটিপূর্ণ রিমোটের কারণে কয়েকবার চেষ্টা করেও বোমাটি বিস্ফোরণে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং রিমোটটি রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। পরবর্তীতে সিটিটিসি’র বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে।

জানা গেছে, মাহাদী হাসান জনের নেতৃত্বে গ্রেফতার শফিকুর রহমান নব্য জেএমবি’র সামরিক শাখার ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। গ্রেফতার শফিকুর ও খালিদ হাসান বোমা তৈরির ম্যানুয়াল ও ভিডিও দেখে বোমা তৈরির অনলাইন প্রশিক্ষক ফোরকানের তত্ত্বাবধানে আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে হামলায় ব্যবহৃত আইইডিটি তৈরি করে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতারকৃতরা তাদের অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে নাশকতা ও পুলিশকে হামলার লক্ষ্যে একত্রিত হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত পলাতক অভিযুক্তদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।

ফোরকান সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ফোরকান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রি বিভাগের ছাত্র। তার বোমা তৈরির দক্ষতা রয়েছে। অনলাইনে প্রশিক্ষক হিসেবে ফোরকান গ্রেফতার আব্দুল্লাহ আল মামুনের কক্ষে আইইডিটি তৈরি করেছিল যা পুলিশের ওপর হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে। ফোরকানকে গ্রেফতারে জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব রহমত চৌধুরী ও সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহমুদুজ্জামান।

সারাবাংলা/ইউজে/এএম