বিজ্ঞাপন

কোভিড চিকিৎসায় অনিয়ম: উত্তরার ৩ হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ

August 3, 2021 | 10:55 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অনুমোদন ছাড়াই নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া এবং চিকিৎসা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মসহ সরকারকে তথ্য না দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর তিনটি হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হাসপাতাল তিনটি হলো— আল আশরাফ জেনারেল হাসপাতাল, রেডিকেল হাসপাতাল লিমিটেডে ও শিনশিন জাপান হাসপাতাল। এর মাঝে রেডিকেল হাসপাতাল লিমিটেডের সকল চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অন্য দুইটি হাসপাতালের কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিন হাসপাতালের লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না— সে বিষয়েও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ৩১ জুলাই সকালে ‘অনুমতি ছাড়াই চলছে করোনা চিকিৎসা, তথ্য যাচ্ছে না সরকারি তালিকায়’  শিরোনামে এই তিন হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয় সারাবাংলা ডটনেটে। ওই দিনই স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি দল হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালিয়ে এসব অনিয়মের প্রমাণ পায়। অভিযানিক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে অধিদফতর।

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা। এরই মধ্যে তিনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই আল আশরাফ জেনারেল হাসপাতাল, রেডিকেল হাসপাতাল লিমিটেডে ও শিনশিন জাপান হাসপাতাল— অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় এই তিন হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রমই বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স কেনো বাতিল করা হবে না— এ বিষয়ে তিন হাসপাতালকেই আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আল আশরাফ জেনারেল হাসপাতালের অনিয়ম

উত্তরার গরীব-ই-নেওয়াজ রোডে অবস্থিত এই হাসপাতালে কেবল একটি ভেন্টিলেটর ও একটি হাই-ফ্লো ন্যাজাল দিয়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সুবিধা ছাড়াই ৯ বেডের কোভিড আইসিইউ ইউনিট পরিচালনা করা হচ্ছিল। প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীও ছিল না। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াই আইসিইউ পরিচালনার কারণে আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের জন্য হাসপাতালটি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছিল বলে মনে করছেন অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, হাসপাতালটি একইসঙ্গে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে এবং কোভিড আক্রান্ত রোগীর তথ্য গোপন করে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য রোগীদের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করছিল। পাশাপাশি কোভিড রোগীর চিকিৎসা ও মৃত্যুর তথ্য গোপন করে প্রতিষ্ঠানটিতে জাতীয় কোভিড ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বলেও মনে করছে স্বাস্থ্য অধিফতর। এর বাইরে কোভিড রোগীদের কাছ থেকে অক্সিজেনের অতিরিক্ত বিল ছাড়াও কার্ডিয়াক মনিটর চার্জ, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি খাতে বাড়তি বিল আদায়ের অভিযোগও পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রেডিকেল হাসপাতালের অনিয়ম

উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের শাহ মখদুম অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এই হাসপাতালের বিরুদ্ধেও আল আশরাফ হাসপাতালের মতোই প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো ছাড়াই কোভিড আইসিইউ পরিচালনার অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। শুধু তাই নয়, যথাযথ সুযোগ সুবিধা ছাড়াই আইসিইউ ইউনিট পরিচালনার নামে ভর্তি কোভিড রোগীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত বিল আদায় করা হচ্ছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে অধিদফতর।

এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও কোভিড রোগীদের তথ্য গোপনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, প্রতিষ্ঠানটির নিচতলায় বিপৎজনকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়েছে, যা যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। একই ভবনে একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং কোভিড রোগীদের প্রবেশ বা বের হওয়ার আলাদা পথ নেই। এই হাসপাতালে কোভিড আক্রান্তের পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের একসঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ার কারণে সাধারণ জনগণকে কোভিড আক্রান্তে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে।

শিনশিন জাপান হাসপাতালের অনিয়ম

উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের গরীব-ই-নেওয়াজ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার তথ্য গোপনের প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই প্রতিষ্ঠানেও যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা ছাড়াই একইসঙ্গে কোভিড ও নন-কোভিড চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া শিনশিন জাপান হাসপাতালের বিরুদ্ধেও কোভিড আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে অক্সিজেনের অতিরিক্ত বিল ছাড়াও কার্ডিয়াক মনিটর চার্জ, হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা চার্জ, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি বিভিন্ন খাতে সরকার নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত বিল আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে অধিদফতর। চিকিৎসা ব্যয় সংক্রান্ত বিভিন্ন ফি দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন না করে রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো বিল আদায় করেছে হাসপাতালটি— অভিযানে অধিদফতর এমন প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র বলছে, তিনটি আলাদা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হাসপাতাল তিনটির কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধের এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছেও পাঠানো হয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন