বিজ্ঞাপন

শেবাচিমে অক্সিজেন সংকট: সিলিন্ডার লুকিয়ে রাখছেন রোগীর স্বজনরা

August 4, 2021 | 3:41 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

বরিশাল: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিল্ডারের জন্য রোগীদের সিরিয়াল লিখে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে মুমূর্ষ রোগীরা ঢলে পড়ছেন। কোনো কোনো রোগীর স্বজন অর্থের বিনিময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে অভিযানে কোনো রোগীর শয্যার নিচে, আবার কারও পেটিকোটের নিচে অক্সিজেন সিলিন্ডার লুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

 করোনা ওয়ার্ডে ২টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ পাচ্ছেন না রোগীরা। অপরদিকে ভাড়া দিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ইউনিসেফের বসানো অক্সিজেন প্ল্যান্টের কার্যক্রমই শুরু হয়নি।

শের-ই বাংলা মেডিকেলের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, করোনা ওয়ার্ডে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত করোনা ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে এখন ৩৪৯ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ১২৪ জন করোনা ওয়ার্ডে এবং ২২৫ জন আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে আইসিইউ সেবা পাচ্ছেন ২৫ জন রোগী। ১৫ জন রোগী পাচ্ছেন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সেবা। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা পাচ্ছেন ৮৫ জন রোগী। বাকী রোগীদের সিলিন্ডার সেবা প্রয়োজন।

বুধবার (৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী খালি ক্যারিয়ার (ট্রলি) নিয়ে তীর্থের কাকের মতো দাঁড়িয়ে আছে অর্ধশতাধিক রোগীর স্বজন। তারা সিরিয়ালে নাম লিখে অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ পর প্রায় অর্ধশত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে করোনা ওয়ার্ডের সামনে আসে একটি পিকআপ। এসময় রোগীর স্বজনদের মধ্যে সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

রোগীর স্বজন মো. আরিফ বলেন, গত রোববার তার মায়ের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেয়েছিলেন। অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন সিলিন্ডার পাওয়ার জন্য গত সোমবার সিরিয়ালে তার মায়ের নাম লিখিয়েছেন। তার মায়ের জন্য কখন সিলিন্ডার পাবেন তা অনিশ্চিত।

জাহিদুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, অক্সিজেন সিচুরেশন কমে যাওয়ার পর রোগীরা যখন ছটফট করে তখন তাকে জরুরিভাবে অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সময়মতো অক্সিজেন সরবরাহ না পেয়ে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন।

করোনা ওয়ার্ডের ওয়ার্ড মাস্টার মশিউর রহমান ফেরদৌস বলেন, বাঙালী কোনদিন ভালো হবে না। কেউ কেউ ২/৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে লুকিয়ে মজুদ করে। আর কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার পায় না। কয়েকদিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডার তল্লাশি করেছে। এ সময় কোনো রোগীর শয্যার নিচে, আবার কারও পেটিকোটের নিচে অক্সিজেন সিলিন্ডার লুকিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের জন্য লিন্ডা বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানির অক্সিজেন ব্যাংক থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে পর্যাপ্ত ফ্লোসহ অক্সিজেন সরবরাহ পাচ্ছে না রোগীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই ব্যাংক থেকে ৪২ মিলিমিটার ডায়ার সরবরাহ লাইন প্রয়োজন হলেও কর্তৃপক্ষ ২২ মিলিমিটার ডায়ার

অক্সিজেন সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপন করেছে। এ কারণে রোগীরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন টানতে পারছেন না ওই লাইন থেকে।

সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ২ মাস আগে ইউনিসেফের সহায়তায় ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অক্সিজেন ব্যাংক স্থাপন করা হয়। কিন্তু ভাড়া এবং রিফিল নিয়ে আর্থিক বনিবনা না হওয়ায় ওই অক্সিজেন ব্যাংক চালু হচ্ছে না। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত হলে করোনা ওয়ার্ডে রোগী মৃত্যুর হার অনেক কমবে বলে আশা করেন রোগীর স্বজনরা।

করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা শিগগিরই স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন