বিজ্ঞাপন

সারাদেশে হামলার পরিকল্পনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নব্য জেএমবির বৈঠক

August 11, 2021 | 5:02 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান জাহিদ হাসান রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকানসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) জানিয়েছে, নব্য জেএমবির এই গ্রুপটির সারাদেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নব্য জেএমবির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক এবং বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এই জাহিদ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান প্রশিক্ষক ও বোমা প্রস্তুতকারক জাহিদসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- সাইফুল ইসলাম মারুফ ওরফে বাসিরা ও রুম্মান হোসেন ফাহাদ ওরফে আব্দুল্লাহ। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে বিস্ফোরক পদার্থ, ঢাকনাযুক্ত জিআই পাইপ, রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, লোহার বল, সাংগঠনিক কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়।’

তিনি জানান, জাহিদ অল্প দিনে গ্রেনেড ও বোমা বানানোয় দক্ষতা অর্জন করেন। আইইডি প্রস্তুতেও দক্ষ জাহিদ সংগঠনের বেশ কয়েকজন বিশ্বস্ত সদস্যকে বোমা ও গ্রেনেড তৈরির দিয়েছেন প্রশিক্ষণ।

বিজ্ঞাপন

ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান রাজু ওরফে ইসমাঈল হাসান ওরফে ফোরকান। তিনি রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করার পর ২০১৬ সালে অনলাইনে ‘হোয়াইট হাউজের মুফতি’ নামক আইডির মাধ্যমে তৎকালীন আমির মুসার হাত ধরে নব্য জেএমবিতে যোগদান করেন। আমির মুসার সঙ্গে কাজের সুবাদে সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিদের নজরে আসেন তিনি।”

তিনি জানান, রসায়নে পারদর্শী হওয়ার কারণে তার মেধা এবং সাহসের জন্য তাকে এই সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অল্প দিনের মধ্যেই গ্রেনেড ও বোমা বানানোয় অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠেন। নিত্য-নতুন কৌশলে আইইডি, বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী জাহিদ বিশ্বস্ত সহযোগীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ডিএমপির সিটিটিসি তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় জঙ্গিরা গ্রেফতার বা নিহত হলে এই সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। জাহিদ তখন গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। পরে তিনি আমিরের নেতৃত্বে সংগঠনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। তারই অংশ হিসেবে অনলাইনে আইডি খোলার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামরিক বিভাগে কাজ করতে আগ্রহী সাহসী সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের টাইম ও রিমোট কন্ট্রোল বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতেন।’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনের জানানো হয়, নব্য জেএমবির কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা ছিল জাহিদের। রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক নব্য জেএমবিকে বিস্তৃত করতে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিকবার মিটিং ও যাতায়াত করেন। বড় কোনো কেমিক্যাল সাপ্লাই কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে বিস্ফোরক সামগ্রী নিয়ে আইইডি তৈরির পরিকল্পনাও করেছিলেন জাহিদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, জাহিদ শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের আওতাধীন মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে কারাতে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। সর্বশেষ তিনি ড্রোন বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। ড্রোনের সঙ্গে এক্সপ্লোসিভ যুক্ত করে কোনো জায়গায় আক্রমণের পরিকল্পনার পাশাপাশি সামরিক শাখার প্রধান নিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। আমির মুসার নির্দেশে যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেসব হামলায় জাহিদ সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন বলেও দাবি সিটিটিসির।

গ্রেফতার অপর অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মারুফ একজন দক্ষ বোমা তৈরির কারিগর। তিনি অনলাইনে জাহিদের কাছ থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। বেশ কয়েকটি বোমা হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। সাইফুল ইসলাম মারুফ এবং গ্রেফতার অপর অভিযুক্ত মো. রুম্মান হোসেন ফাহাদসহ সংগঠনের সিদ্ধান্তে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার লক্ষ্যে বান্দরবান এলাকায় হিজরত করেন জাহিদ।

নব্য জেএমবি’র বিস্তৃতি ও সংগঠনের অর্থের জোগান দিতে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন রেলগেট এলাকায় রুম ভাড়া নেন তারা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ইলেকট্রিক শক থেরাপির মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাই ও ডাকাতির চেষ্টাও করছিলেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন