বিজ্ঞাপন

তরুণদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষতি পোষাতে টিআইবির ৯ সুপারিশ

August 11, 2021 | 8:10 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারিতে দীর্ঘদিন সশরীরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জে দেশের তরুণদের মধ্যে যে মানসিক ও আর্থসামাজিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা নিরসণে ৯টি সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে বুধবার (১১ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার ১৬ মাস পার হলেও সেগুলো খোলার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সমন্বিত ও কার্যকর কোনো কর্মপরিকল্পনা নেওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসের চেষ্টা করা হলেও কারিগরি দক্ষতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে তা অনেকাংশেই সফল হয়নি। বরং এটি শিক্ষা খাতকে নতুন এক বৈষম্যের মুখোমুখি করেছে।

তিনি আরও বলেন, বেশকিছু গবেষণা বলছে, গ্রামাঞ্চলের ৬৩ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং ব্যবহারের দক্ষতা নেই ৮৭ শতাংশ পরিবারের। ফলে গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ধনী-গরীব ও শহর-গ্রামের মধ্যে শিক্ষা পাওয়ার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হয়েছে, যা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো সরকারি উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। এটি সত্যিই হতাশার।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ও পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পরিমাণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী করোনা মহামারির থাবায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথাক্রমে ১৯ ও ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার বাইরে চলে গেছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় বাল্য বিয়ে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে (২৬ শতাংশ)।

তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষার্থীদের কীভাবে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা হবে, আদৌ ফিরিয়ে আনা যাবে কি না— এসব নিয়ে কারও মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষা খাতের নতুন এসব চ্যালঞ্জে মোকাবিলায় নতুন করে যে বাড়তি বিনিয়োগ বা সহায়তা প্রয়োজন, তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ এখনো দৃশ্যমান নয়, যাকে অপরিনামদর্শী বলাটা মোটেও বাহুল্য হবে না।

মহামারিতে যুব বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সত্যি হতে চলেছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, মহামারির প্রভাবে গত বছরই যুব-বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হওয়ার যে আশঙ্কা আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা করেছিল, এতদিনে তা আরও বেড়েছে— এটি অনায়াসে বলা যায়। মহামারিতে কাজ হারানো মানুষের বড় অংশই তরুণ ও যুবক, এদের বেশিরভাগই আবার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী— যাদের জন্য সরকারি উদ্যোগে পরিকল্পিত বড় ধরনের কোনো সহায়তা এখনো অনুপস্থিত।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, কেবল চাকরি হারানোই নয়, চাকরির বাজারে মহামারি নতুন ধরনের পরিবর্তনও নিয়ে এসেছে, যেখানে খাপ খাওয়াতে প্রযুক্তিগত ও কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন বেড়েছে ব্যাপকভাবে। নতুন এসব দক্ষতা অর্জনে যথাযথ শিক্ষার আয়োজন দ্রুত সময়ে করা না গেলে কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা আরও প্রকট হবে, যা যুব সমাজকে দীর্ঘমেয়াদে হতাশার দিকে ঠেলে দেবে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি অর্থনীতিতে যুব শ্রমশক্তির ইতিবাচক অবস্থানকেও নড়বড়ে করে দেবে।

মহামারির এই সময়ে তরুণদের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও স্বাধীন মতপ্রকাশ নিশ্চিত করতে টিআইবির ৯টি সুপারিশ হচ্ছে—

১. শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন দিয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতি দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে;

২. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করে পরবর্তী স্তরে উত্তরণের ব্যবস্থা নিতে হবে;

বিজ্ঞাপন

৩. ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে নারী, প্রতিবন্ধী, আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল, আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে;

৪. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের যথাযথ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে;

৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার পাশাপাশি করোনায় যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে, বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে;

৬. কারিগরি ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করতে হবে;

৭. সরকারি-বেসরকারি যেসব চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, অবিলম্বে সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং নতুন বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে করোনা মহামারির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে;

৮. সব চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত রেখে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে; এবং

৯. তরুণ সমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইনি ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন