বিজ্ঞাপন

সিদ্ধান্তের দুর্বলতার কারণে অনুপ্রবেশকারীদের বিদায় করা যাচ্ছে না

August 13, 2021 | 11:10 pm

অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতবিদ হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। আগের কমিটিতে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সবশেষ কাউন্সিলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে স্থান পেয়েছেন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীতে। এর আগে ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে নানা সময়েই দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা উঠে এসেছে। বিশেষ করে সবশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় এ সংক্রান্ত ঘটনাগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে অভিযোগ ওঠে, দীর্ঘ দিন ধরে দলের জন্য তারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের তুলনায় দলে তথাকথিত হাইব্রিড নেতাদের মূল্যায়ন বেশি হচ্ছে। একসময় ভিন্ন আদর্শের রাজনীতি করলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের সুবিধা নিতে অনেকেরই দলে ‘অনুপ্রবেশে’র অভিযোগও ওঠে। দলের বিভিন্ন পর্যায়সহ উপকমিটিতেও এমন বিতর্কিত অনেকের স্থান পাওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে দলের মধ্যেও। নামের সঙ্গে ‘লীগ’ ব্যবহার করে ভুঁইফোড় কিছু সংগঠন গড়ে ওঠার নজিরও দেখা যাচ্ছে।

এসব বিষয় নিয়েই সারাবাংলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর কবির নানকসাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়তাদের কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো সারাবাংলার পাঠকদের জন্য—

সারাবাংলা: আওয়ামী লীগ টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন। ক্ষমতার এই দীর্ঘ সময়ে ‘লীগ’ নাম জুড়ে দিয়ে একদিকে কিছু ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে দলের উপকমিটিতে বিতর্কিত অনেকে স্থান পাওয়ায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

বিজ্ঞাপন

জাহাঙ্গীর কবির নানক: ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো গড়ে উঠেছে, অস্বীকার করার কিছু নেই। আসলে দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। এই দলের নাম ব্যবহার করে কিছু কিছু মতলববাজ তাদের মতলব হাসিল করতে লীগ ব্যবহার করে এসব সংগঠন গড়ে তুলেছে। সৃষ্টির লগ্নেই এদের প্রতিহত করা দরকার ছিল, ঠেকিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কেউ ইচ্ছা করলেই ‘লীগ’ ব্যবহার করে ‘অমুক লীগ-তমুক লীগ’ করবে— এটি কাম্য হতে এরা কার হাত ধরে কোন পথে ঢোকে, সেই পথগুলো বন্ধ করা উচিত। এরা যদি কারও কোনো সুপারিশে ঢুকে থাকে, তাহলে সেই সুপারিশকারীকেও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।

সারাবাংলা: আপনাদের দল আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় রয়েছে এক যুগের বেশি সময়। আপনারা কেন এই দীর্ঘ সময়ে বা এত দিন এই বিষয়গুলো নজরে আনতে পারেননি?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আমার (আওয়ামী লীগ) কার্যালয়, আমার ব্র্যান্ড। আমার নাম ব্যবহার করলে এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেন সেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এর কোনো উত্তর আমি পাই না! অস্বীকার করার উপায় নেই, এটি একটি বড় দুর্বলতা। তারপরও বলব, সতর্ক হওয়া উচিত। শুধু ঘটনা ঘটলেই নয়, এ বিষয়ে সামগ্রিক একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত এবং তা বাস্তবায়ন করা উচিত। সেই বাস্তবায়নের দুর্বলতা থাকলে সেটি আমাদের জন্য আত্মহননের সামিল হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: বিভিন্ন কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তি ও ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর বিষয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপের কথা শুনছি। এসব পদক্ষেপ কতটা কঠোর হতে পারে?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এদের এখনই থামিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। আমি দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করব— এ ধরনের নাম কেউ ব্যবহার করলে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন।

সারাবাংলা: তথাকথিত বা ভুঁইফোড় সংগঠনের বিপরীতে কিন্তু আবার অনেক সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনই মাঠে সক্রিয় ছিল, যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। যারা নামের সঙ্গে ‘লীগ’ ব্যবহার করেনি কিন্তু বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে দলের দুর্দিনে কাজ করেছে, সহায়তা করেছে। তাদের ক্ষেত্রে দলীয় কী সিদ্ধান্ত বা অবস্থান হতে পারে বলে মনে করেন?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: হ্যাঁ, এমন উদাহরণ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদের কথা যদি বলি— এটি কিন্তু আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য জায়গা। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যখন আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ করা যায় না, বঙ্গবন্ধুর নাম যখন উচ্চারণ করা যায় না, ওই সময় বঙ্গবন্ধু পরিষদ কিন্তু কথা বলেছে, প্রতিবাদ করেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কাঠামোর মধ্যে ঢুকতে চাইতেন না বা ঢোকার অসুবিধা ছিল বলে মনে করতেন— এমন বিজ্ঞজন-পণ্ডিতরা এই বঙ্গবন্ধু পরিষদ করেছেন। পরিষদের মাধ্যমে তারা সোচ্চার ছিলেন। কাজেই বঙ্গবন্ধু পরিষদ বা এমন যারা আছে, তাদের সঙ্গে ওই সব অমুক লীগ, তমুক লীগকে মেলানো যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আর বঙ্গবন্ধু পরিষদের মতো যারা, এসব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কিন্তু দলের পদ-পদবীর জন্য কাজ করেন না। কিন্তু আমরা সবসময় তাদের ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে থাকি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা যারা আছেন, তাদের কাছে ভুঁইফোড়দের ব্যাপারে আপনারা কোনো মেসেজ দিতে চান কি?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: আমাদের দুর্দিনের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের একধরনের আর্তনাদ রয়েছে। তাদের অনেকেই অবহেলিত, বঞ্চিতদের কাতারে রয়েছেন। বিপরীতে ভুইফোঁড়দের বাড়াবাড়ি, হঠাৎ করে দলে এসে পদ-পদবী নিয়ে বুক ফুলিয়ে কথা বলার মতো লোকও আছে। তারাই আবার দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে থাকেন! ফলে ত্যাগী নেতাদের আর্তনাদ, বুক ফাটা কান্না রয়েছেই। এটি সারাদেশেই রয়েছে। তাদের সেই কান্নার সঙ্গে আমিও একাত্ম। দুঃসময়-দুর্দিনের নেতা যারা অবহেলিত-বঞ্চিত, যারা ভুইফোঁড়-হাইব্রিডদের ধাক্কায় দলে ভিড়তে পারছেন না, তাদের দলে ফিরিয়ে আনা, যথাযথ মর্যাদা দেওয়া— এটিকে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।

সারাবাংলা: ভুইফোঁড়দের বাদ দিয়ে ত্যাগীদের মূল্যায়নের কাজটি সহজ বলে মনে করেন কি? এর আগে তো বিভিন্ন উপকমিটিতে হেলেনা জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ শাহেদসহ বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিরা প্রবেশ করেছেন। তারা আসলে কীভাবে এসব কমিটিতে স্থান পেয়েছেন?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: এটি একেবারেই কঠিন না, সহজ বিষয়। আমি একজনকে চিনি না, নাম জানি না— তাহলে সে বা তারা কে? আমি তো ৫০ বছর ধরে এই দলের স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত। সেই আমি যখন কাউকে চিনি না, তাকে নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কিংবা এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দেখিনি, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে দেখিনি— এমন কেউ এসে দলের ভেতরে বুক ফুলিয়ে কথা বলবে, জায়গা করে নেবে— এটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, এই দলটিতে কোনো দলের নেতা সংগঠক বা কর্মীর কোনো আকাল পড়েনি। তাই এসব অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমার মনে হয় শুধু আমাদের সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্তের দুর্বলতার কারণেই এটি করা যাচ্ছে না।

সারাবাংলা: তাহলে কি দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

জাহাঙ্গীর কবির নানক: অবশ্যই। দলের মধ্যে একটি শুদ্ধি অভিযান চালানোর সম্পূর্ণ পক্ষে আমি। এই অভিযানে আগাছা-পরগাছা সব একদম ছেঁটে, ঝেটিয়ে বের করে দেওয়ার পক্ষে আমি। এটা শুরু করার জন্য নিয়তটা করতে পারলেই হবে। আমরা নিয়ত ঠিক করেছি। এই করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে বসতে পারছি না। বসতে পারলেই বিষয়গুলো নিয়ে খুব কঠিনভাবে কথাবার্তা বলব।

সারাবাংলা: সারাবাংলাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

জাহাঙ্গীর কবির নানক: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন