বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ কেন ‘ষড়যন্ত্র’ হবে?— প্রশ্ন নওফেলের

August 14, 2021 | 8:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাড়ে চার দশক আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে কেন ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছিলেন তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান— সেই প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, এর থেকেও প্রমাণ হয় যে, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৪ আগস্ট) চট্টগ্রামে জাতীয় শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যায় জিয়াউর রহমানসহ আরও যারা জড়িত ছিলেন তাদের ভূমিকা অনুসন্ধান করে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন উপমন্ত্রী নওফেল। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে নগরীর মোটেল সৈকতে শোক দিবসের আলোচনা সভা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমানের ষড়যন্ত্র ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়ার ভূমিকা কী ছিল, সেটা আমরা একটু বিশ্লেষণ করে দেখতে পারি। সেসময় যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন, এমন শত, শত মানুষকে জিয়াউর রহমান হত্যা করেছেন। প্রতিবাদকারীদের প্রায় সবাইকে মামলা-হামলা, হুলিয়া, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এমনকি সেনাবাহিনী-বিমানবাহিনীতেও যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের হয় বরখাস্ত করেছেন, নয়তো হত্যা করেছেন। অসংখ্য সৈনিককে জিয়া হত্যা করেছেন।’

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ যারা করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা দিয়েছিল জিয়া সরকার। এটা কেন? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ কেন ষড়যন্ত্র হবে, কেন রাষ্ট্রদ্রোহ হবে? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করায় কেন মামলার আসামি হতে হলো? তাদের কেন রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত করা হলো? এসব প্রশ্ন আমাদের তুলতে হবে, অবশ্যই আমাদের করতে হবে’— বলেন নওফেল।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদ করেছিলেন নওফেলের বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (সাবেক মেয়র), তৎকালীন যুবনেতা মৌলভী সৈয়দসহ চট্টগ্রামের একদল নেতাকর্মী। তারা ভারতে অবস্থান করে চট্টগ্রামের বিভিন্নস্থানে হামলার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে। তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে এই প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র’ মামলা করা হয়েছিল। দেশে ফেরার পথে মৌলভী সৈয়দকে গ্রেফতার করে হত্যা করা হয়েছিল। মহিউদ্দিনসহ প্রতিবাদকারীদের দীর্ঘদিন ফেরারি জীবনযাপন করতে হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের মামলায় জড়িয়ে দেওয়ায় জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে নওফেল বলেন, ‘এটা তিনি (জিয়াউর রহমান) করতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি নিজেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় জড়িত ছিলেন। আমি আহ্বান জানাব, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানসহ আরও যারা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে, তাদের ভূমিকা তদন্ত করে বের করা হোক। এই জিয়াউর রহমান কিন্তু শুরুর দিকে মুক্তিযুদ্ধেও যেতে চাননি। মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এখনও বেঁচে আছেন, সেক্টর কমান্ডার রফিকুল ইসলাম এখনও আছেন। উনারা সাক্ষী জিয়াউর রহমান সেসময় কি করেছিলেন ?’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার যদি সত্য প্রকাশের সৎ সাহস থাকে, নৈতিকতা বোধ থাকে তাহলে আপনি বলুন যে, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন। পরোক্ষ নয়, প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত ছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির সমালোচনা করে নওফেল বলেন, ‘বিএনপি এখনও জিয়াউর রহমানের সেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতির পথ ছাড়তে পারেনি। যে ৭ই মার্চের ভাষণকে ইউনেসকো স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই ভাষণ স্বীকার করে না বিএনপি। খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জাতির শোকের দিনে কেক কেটে উৎসব করতেন। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়ে জেলে আছেন বলে গত দুইবছর ধরে তিনি সেটি করছেন না। এই বিএনপির সঙ্গে আসলেই রাজনীতি করা যায় না। তারা একটা মানুষ মারার দল। তারা প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলকে বোমা-গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করে।’

তরুণ বয়সে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হিন্দু-মুসলিম বিভাজন হয়ে কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়েছে। তখন শেখ মুজিবের বয়স কত, মাত্র ৩২-৩৪। তখনই কিন্তু তিনি বলেছেন, মানুষে মানুষে বিভাজন সঠিক নয়। অথচ অনেক পোড়খাওয়া নেতা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন মেনে নিয়েছিলেন।’

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ১০০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতির মগজে ধর্মীয় বিভাজনের বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান এসব করেছেন। এই বিষ কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ১০০ বছর লাগবে।’

নওফেল আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের জনগোষ্ঠীর কোনো অংশ সংখ্যালঘু- এই চিন্তা ধারণ করে না, বিশ্বাসও করে না। এদেশে তারাই সংখ্যালঘু যারা বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। এদেশে তারাই সংখ্যালঘু যারা ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি করে। সৌদিআরবে পর্যন্ত ধর্মের নামে রাজনীতি হয় না। অথচ এদেশে কিছু মানুষ, কিছু মহল ধর্মের নামে মানুষকে বিভাজন করে। বর্তমান সরকার চাই, ধর্মের নামে কোনো বিভাজন নয়, সবাই যেন এক হয়ে মিলেমিশে এই রাষ্ট্রে বসবাস করে।’

বিজ্ঞাপন

হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি উত্তম কুমার শর্মার সভাপতিত্বে এবং মন্দিরভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের সহকারী পরিচালক রিংকু কুমার শর্মার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীন আক্তার, উপ-উপাচার্য ড. বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, আব্দুর ছালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, নিলু নাগ, রুমকি সেনগুপ্ত।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন