বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার বক্তৃতায় প্রমাণ হয় গ্রেনেড হামলায় তার ইঙ্গিত ছিল

August 21, 2021 | 11:20 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের শান্তি সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন। পরবর্তী সময়ে উন্নত চিকিৎসায় তিনি সুস্থতা ফিরে পেলেও এখনো শরীরে স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন। এখনো অসহ্য ব্যথায় কুঁকড়িয়ে ওঠেন। সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়ের সঙ্গে আহতদের একজন হয়ে কথা বলেছেন।

বিজ্ঞাপন

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের কথা প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এসএম কামাল হোসেন বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরেই আমি ২৩-বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যাই। আমরা সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে সমাবেশে বক্তব্য শুনছিলাম। সেখানে ছিলেন বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতৃবৃন্দ। জননেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিছিল শুরু হবে। তখন ফটোগ্রাফার গোর্কি নেত্রীকে অনুরোধ করলেন, আপা আমি ছবি তুলতে পারি নাই। আপা দাঁড়িয়ে পড়লেন। হঠাৎ করে একটি আওয়াজ হল। সেই আওয়াজে চারদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু হল এবং পরপর বেশ কয়েকটি আওয়াজ হওয়ার মধ্য দিয়ে দেখলাম আমি পড়ে গেছি। আমাকে তখন নেত্রীর ড্রাইভার আলী হোসেন এবং শাজাহান ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক ছিল না, ওষুধ ছিল না। কারণ সব আহত রোগীরা সেখানে যাচ্ছিল। আমাকে দলীয় কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীরা ধানমন্ডির ডেল্টা ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। আমার সাথে এসেছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সেন্টু। কিন্তু হাসপাতালে আসার পর আমাকে ভর্তি করলেও সেন্টুকে ভর্তি করলেন না।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখন আমার জ্ঞান আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম সেন্টুকে ভর্তি করা হল না কেন? চিকিৎসক আমাকে বলল মারা গেছে। এরপর আমি ডেল্টা ক্লিনিকেই ভর্তি ছিলাম। নেত্রীও গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছেন তারপরও তার ব্যক্তিগত সিকিউরিটি পাঠিয়ে দিয়ে আমার খোঁজ নিয়েছেন। আমার চিকিৎসা শুরু হল এবং সবাই মনে করেছিল যে আমাকে বাঁচানো কঠিন। পরের দিন অপারেশন করা হয়। এখানে অপারেশন করে কোনো রকম সুস্থের দিকে এগিয়ে গেলে পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসার জন্য নেত্রীই আমাকে দেশের বাইরে পাঠান।

তৎকালীন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যে উদ্দেশ্য লক্ষ্য নিয়ে গ্রেনেড হামলা সংঘটিত করেছিল, সে প্রসঙ্গেও কথা বলেন এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, মূলত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এই মূল পরিকল্পনা নিয়েই সেদিন গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমরা যেটা জেনেছি যে পঁচাত্তরের খুনিরা এবং একাত্তরে খুনি; এদেরকে নিয়ে তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে বসে বৈঠক করে এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় বিএনপির তৎকালীন উপমন্ত্রী পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে। যে হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার নেতৃত্বে জঙ্গিদের সংগঠিত করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এই হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এসএম কামাল বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ষড়যন্ত্র করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশকে আবার এক অন্ধকার যুগে পরিণত হয়েছিল। খালেদা-নিজামীর ৫ বছরের শাসনামলে জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক ছিল বিএনপির আটজন মন্ত্রী। তাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তারেক জিয়া। তারা বাংলাদেশকে একটি খুনের বাংলাদেশে পরিণত করেছিল। সন্ত্রাসের বাংলাদেশে পরিণত করেছিল। কিন্তু এই দুঃশাসন-অপশাসনের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন আবার সেই দুঃসময়ে ঘুরে দাঁড়াল তখন এই পঁচাত্তর এবং একাত্তরের খুনিরা মনে করল শেখ হাসিনা যদি আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় বাস্তবায়িত হবে। এই কারণে সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়।

এসএম কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তৃতার ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এই হামলায় তার ইঙ্গিত ছিল। কারণ সেদিনকার যিনি ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল রুমি তার বক্তব্যে পাওয়া গেছে, তিনি খালেদা জিয়ার কাছে হামলার পরে জানতে গিয়েছিলেন। এই বিষয়ে তদন্ত করতে চাইলে রুমিকে ধমক দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ২০০৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে দেওয়া বক্তব্যে বলেছিলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল আসামি জজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়।

এস এম কামাল বলেন, পার্লামেন্ট যখন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট নিয়ে কথা বলতে দাঁড়ালেন, তখন তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হল। আর খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে বললেন, ওনাকে আবার মারবে কে? ভানিটি ভ্যাগ করে উনি গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। এই সমস্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে খালেদা জিয়াও বিষয়টি জানতেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা মনে করি- আজকে যেমন দাবি উঠেছে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত করার। তেমনই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার নেপথ্যে যারা ছিলেন তাদেরকেও খুঁজে করতে হবে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে আমরা জেনেছি তারেক জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা। এর বাইরেও কারা মূল পরিকল্পনাকারী, খালেদা জিয়া এই পরিকল্পনার সাথে ছিলেন কি না? কমিশন গঠন করে এটাও জাতির সামনে প্রকাশ করা উচিত।

সারাবাংলা/এনআর/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন