বিজ্ঞাপন

এত প্রভাব বিস্তার সালমান শাহ্‌ বাদে আর কেউ পারেনি

September 6, 2021 | 3:25 pm

রহমান মতি

‘যদি সামর্থ্য থাকত দেশের সব সিনেমাহলে সালমান শাহ্‌-র ছবি চালাতাম এতে দর্শক বাংলা ছবি দেখার আগ্রহ বোধ করত।’

বিজ্ঞাপন

অমর নায়ক সালমান শাহর এক ভক্তের কথা ছিল এটি। একজন সালমান শাহ তার নিজের সময়কে জয় করে পরবর্তী প্রজন্মকেও কীভাবে জয় করেছে তারই একটা উদাহরণ এই কথাটি। আমি আজকে আমার একান্ত সালমান শাহর কথা বলতে এসেও সেই প্রজন্মজয়ী সালমান শাহর কথা বলব। যে সালমান শাহ তার ছোট ক্যারিয়ার দিয়ে বড় প্রভাব রেখে গেছেন।

যখন একজন নায়ক নিজের সময়কে জয় করার পাশাপাশি নতুন নতুন সময়েও নিজের গুণে মানুষের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে তার বিশেষত্ব বেড়ে যায়। সালমান শাহ এটা পেরেছিলেন। তার নিজের সময় ছিল নব্বই দশক এখন শূন্যের দ্বিতীয় দশকে এসেও নতুনভাবে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে, আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে সালমান শাহ। কালোত্তীর্ণ হওয়া যাকে বলে সেটিই হয়ে উঠেছেন সালমান। কম কাজ দিয়ে এতটা প্রভাব বিস্তার করা আর কোনো নায়কের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

সালমান শাহ পরবর্তী যে নায়কেরা এসেছিল তাদের বেশিরভাগই তাকে দেখে বা ফলো করে চলচ্চিত্রে এসেছে। একটা প্রজন্মের ভালো লাগায় পরিণত হয়ে সালমান নিজেকে পরবর্তী নায়কদের আইডল হতে পেরেছিলেন। তার পরবর্তী নায়কেরা সালমানের মধ্যে নিজেদের খুঁজে দেখার একটা আভাস পেয়েছিল কারণ তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যটি সালমান ধারণ করেছিলেন বিশেষভাবে। সালমান পরবর্তী নায়কদের বিভিন্ন সময়ের স্টেটমেন্টে সালমানকে ফলো করে বা ভালোবেসে চলচ্চিত্রে আসার আগ্রহের কথাটা তারা জানিয়েছেন। এই যে তারুণ্যের নায়ক হয়ে ওঠার একটা কাজ এটা সালমান করেছিলেন। তার পরবর্তী প্রজন্মকে জয় করার একটা উদাহরণ তিনি সেই ইন্ডাস্ট্রিতেই রেখে গেছেন যেখানে তিনি কাজ করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

ভার্চুয়াল লেখালেখিতে নায়কদের বিশ্লেষণে বা দর্শকভক্তদের অনুভূতির প্রকাশে অন্য নায়কদের চেয়ে সালমান শাহ বিষয়ক টপিকে আগ্রহ যে কোনোভাবেই হোক বেশি থাকে। তাকে নিয়ে ট্রল হয় না কারণ তার মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার মাত্রাটা অন্যরকম। কমেন্টবক্সে বা লাইক/রিঅ্যাক্টের ক্ষেত্রেও পজেটিভ রেসপন্স বেশি আসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেওবা দু’একজন নব্য অন্য নায়কের ভক্তদর্শক না বুঝে দু’একটা আপত্তিকর মন্তব্য করে তখন দায়িত্ব নিয়ে সেটার ডিফেন্ড করতে দেখা যায় অনেককে। তার মানে সালমান শাহ নামটাই সিরিয়াস বিষয়। এটাকে হালকাভাবে মূল্যায়নের কিছু নেই।

সালমান শাহ নামটি এখন এমন হয়ে গেছে প্রতি বছর এ নামটি বিশেষভাবে উচ্চারিত হয় চলচ্চিত্রপাড়ায়। চলচ্চিত্রপ্রেমী, চলচ্চিত্রজন বা মিডিয়া যাই বলি না কেন সবখানেই সালমান শাহ নামটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তার মৃত্যুবার্ষিকী সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয় এমনকি চর্চাও হয়। এই ইতিহাসটা আর কারো ক্ষেত্রে সেভাবে হয়নি এদেশে। অন্যদের ক্ষেত্রে অবশ্যই হওয়া উচিত তাদের কাজ অনুযায়ী কিন্তু সালমানের ক্ষেত্রে ইতিহাসটা অলিখিতভাবেই যেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভার্চুয়াল লেখালেখি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও তার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয় নিয়ম করে প্রতি বছর। সবার মাঝে যে আফসোস বা বার্তাটা প্রকাশ পায় সেটার মাধ্যমে সালমান শাহকে হারানোর বেদনার পাশাপাশি তাকে চলচ্চিত্রে যে বিশেষভাবে প্রয়োজন ছিল সেটাও প্রকাশ পায়। এর থেকে বোঝা যায় সালমান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, কেন এত বিশেষ কেউ।

সালমান চলে যাওয়ার পর নব্বই দশকের শেষের দিকে অশ্লীল সময় আসার পর সালমানের অভাব নিয়ে তখনকার দর্শক কথা বলত। রাস্তার নোংরা পোস্টার দেখে লোকে থু থু দিত। থু থু তারাই দিত যারা ছিল সালমান শাহর দর্শক। দর্শক সরাসরি বলত-‘সালমান মরে গিয়ে এদের ভাগ্য খুলে দিয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

সালমান বেঁচে থাকলে অশ্লীল সময়টি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কোনোভাবেই আসত না অনেকেই বিশ্বাস করত। তার মানে সালমানকেন্দ্রিক একটা বিশেষ রেভুলুশন অনেকেই বিশ্বাস করত, ধারণ করত। এ সময়ের পর কেটে গেছে আরও একটি দশক। এখন এই একুশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে ডিজিটাল চলচ্চিত্রের সময়েও সালমানকে নিয়ে শূন্যতা কমেনি বরং বেড়েছে। এই শূন্যতাটা আবার আলাদা। নতুন প্রজন্মের নায়কদের মধ্যে যে কমতি এবং মানসম্পন্ন ছবির বিশাল ঘাটতি এসব দিক থেকে সালমান শাহকে উদাহরণ করে দর্শক। সালমান থাকলে আজকের প্রযুক্তিগত সুফলের পরেও চলচ্চিত্রের যে অবনতি সেটা থাকত না বলে। সালমানকেন্দ্রিক এই শূন্যতা তো একেবারেই আলাদা।

যে উঠতি প্রজন্ম চোখের সামনে বেড়ে উঠছে তাদের জন্য সালমান শাহকেন্দ্রিক দর্শক প্রস্তুতি লাগবে ভবিষ্যতে। শুনতে কী অদ্ভুত লাগছে কথাটি! তার ছবি দেখার সময় তাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। বড়দের কাছ থেকে সালমান শাহকে নিয়ে যে কথাগুলো শুনে এসেছে সেগুলোকে পর্যবেক্ষণ করবে তারা।ছবিতে থাকা নায়িকা, মা-বাবা, খলনায়ক সবকিছুর ভেতর থেকে সালমান শাহ-র জন্য আলাদাভাবে সচেতন থাকতে হবে কারণ সালমান তাদেরকে আলাদাভাবে আকর্ষণ করার মতো গুণ নিয়েই পর্দায় হাজির হবে। তার প্রভাব কী, ইমেজ কী এ দিকগুলোকে মস্তিষ্কের এক জায়গায় রেখেই তাদেরকে সালমান শাহর ছবি দেখতে হবে। তাদের চিন্তার সে জায়গাটি একজন সালমান শাহ দখল করে ফেলবে।

একজন সালমান শাহর জন্য এত বিশাল কলেবরে প্রজন্মজয়ী হওয়ার যে অনন্য সুযোগ তা আর ক’জনের ভাগ্যে জুটেছে ভাবুন তো!

লেখক: চলচ্চিত্র বিষয়ক ব্লগার

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন