বিজ্ঞাপন

ইউনাইটেড-ল্যাবএইড এই সমস্ত হাসপাতাল ডাকাত, সংসদে সমালোচনা

September 15, 2021 | 4:36 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুনীতি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা, চিকিৎসক, চিকিৎসা সেবা ও বেসরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা কঠোর সমালোচনা করেছেন। বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সব সমালোচনা করেন। সংসদে আলোচনা করেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারমানা, হারুনুর রশীদ, মোশারফ হোসেন, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, পীর ফজলুর রহমান। পরে সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাব দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বিজ্ঞাপন

সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ডাক্তাররা রাজনীতি করছেন। বর্তমানে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা। দেশ পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করেছে। যারা আজকে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত, তারাই বেসকারি হাসপাতালে ব্যবসা করছেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, ‘অ্যাডমিন ক্যাডারের লোক, বিচারক বা পুলিশ ক্যাডারের লোক তারাও তো চাকরি করে। কিন্তু তারা অন্য কোনো প্রাইভেট বিষয়ে কনসালটেন্সি করতে পারবেন না। ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে ডিউটির পর যখন প্রাইভেট হাসপাতালে প্র্যাকটিস করেন তখন তারা মূল কাজটিই করতে পারেন না। স্বাস্থ্যখাতের এই সমস্যাটি দীর্ঘদিনের।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘যদি জনগণের উপকার করতে চান, তাহলে ডাক্তার সাহেবদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসটা আপনারা দয়া করে বন্ধ করার চেষ্টা করেন। জনগণের পয়সা দিয়ে তাদের বেতন দেবেন, তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন এটি আমরা করতে পারি না। ভর্তির জন্য মেডিকেল কলেজগুলো আন-অফিসিয়ালি লাখ লাখ টাকা নেয়। অন্যায়ভাবে তারা এই টাকা নিচ্ছেন।’

বিজ্ঞাপন

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা দেখি ঢাকা শহরে ইউনাইটেড, ল্যাবএইড এই সমস্ত হাসপাতাল ডাকাত। এই সব হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গেলে এক লাখ, দুই লাখ, দশ লাখ টাকা বিল করে তাদের আটকে রাখে।’

আলোচনাকাল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বিএনপি করে গিয়েছিল ড্যাব, আওয়ামী লীগ এসে করেছে স্বাচিপ। যদি আইন করা হতো ডাক্তাররা রাজনীতি করতে পারবেন না তাহলে খুব খুশি হতাম। কিন্তু সেটি করা হয়নি। ডাক্তাররা যদি দেশে রাজনীতি করে তাহলে আমরা কী করব? আমাদের কাজটি কী? ওনারা সরাসরি রাজনীতি করতে চলে আসুক। যারা ভালো ছাত্র, তারা ডাক্তারিতে লেখাপড়া করেন। কিন্তু তারা যদি রাজনীতি করেন তাহলে আমরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছি।’

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে বেহাল দশা। দেশের পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করেছি। আমরা এখনও পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারিনি। যারা আজকে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত তারাই বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবসা করছেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এতগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন, এইগুলো মানসম্মত? আজকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে যারা শিক্ষা অর্জন করছে তারা ক’জন বিসিএসে টিকছে? ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে যে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে এই ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন? যে সমস্ত ছাত্ররা, অভিভাবকরা অনিয়ম করে সেখানে ভর্তি হয়েছে যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্ঞান অর্জন করবে, সে ব্যাপারে সরকার বলেছিল এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। কিন্তু সিআইডি রিপোর্ট দিচ্ছে এই খাতে লাগাতারভাবে ৭ বছর অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।’

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘করোনাকালে অর্থনৈতিকভাবে কতগুলো পরিবার পঙ্গু হয়ে গেছে সেই খবর কি আমাদের কাছে আছে? করোনাকালে হাতে গোনা কিছু রিপোর্ট আসছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, করোনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে প্রাণে হয়ত বেঁচে গেছে কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে। জমানো টাকা শেষ হওয়া থেকে শুরু করে বিরাট ঋণের জালে আটকা পড়েছে বহু মানুষ। করোনার আগে যেখানে মধ্যবিত্ত ছিল ৭০ শতাংশ সেখানে মধ্যবিত্ত নেমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। দরিদ্র মানুষ যেখানে ছিল ২০ শতাংশ সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। করোনাকাল বলে হয়ত এ ব্যাপারে মিডিয়ার কিছুটা মনযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেলে গিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার ইতিহাস নতুন কিছু নয়।’

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘করোনাকালে যে কয়টি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মানুষকে সর্বস্বান্ত করার অভিযোগ আসছে তার মধ্যে সব থেকে শীর্ষ আছে বলতে কষ্ট লাগে সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ। এই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সরকার ধীরে ধীরে বেসরকারি খাতে তার কর্মীদের হাতে এমনভাবে তুলে দিচ্ছে। চট্টগ্রামে সিআরবি নামে যে জায়গাটি আছে, যেটিকে চট্টগ্রামের অক্সিজেন বলা হয়; সেটিও নাকি এখন বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য সেই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। রেলওয়ের জায়গা বলতে তো কিছু নেই সবই রাষ্ট্রীয় জায়গা, এই রাষ্ট্রীয় জায়গা বেসরকারি খাতে তুলে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা রাজনীতি করছেন। আমরা রাজনীতি করি রাজনীতিবিদের জায়গায় থাকব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার জায়গায় থাকবে। ডাক্তাররা ডাক্তারদের জায়গায় থাকবে। সেই জায়গাগুলোকে রিপেয়ার করা দরকার।’

জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল ও হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেই। টেকনোলজিস্টের ব্যাপক সংকট। ২০২০ সালের পরীক্ষার ফলাফল এখনও দেওয়া হয়নি। অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক এয়ারপোর্টে পিসিআর ল্যাব দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেওয়ার পরও প্রবাসীদের ঘেরাও করতে হয়েছে।’

বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদা দেশের প্রতিটি কলেজে মেডিকেল কলেজ হবে। সেটি পর্যায়ক্রমে হবে। সেই অনুযায়ী ৩৮টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে সব জেলায় হয়ে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ডাক্তারদের অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। স্বাচিপ, বিএমএ রয়েছে। রাজনীতি তো সবাই করতে পারে। প্রকৌশলী, আইনজীবীরা রাজনীতি করতে পারে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসকরা যদি অ্যাসোসিয়েশন করে তাতে কোনো অন্যায় দেখি না। তারা তো সেবা দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনার সেবা দিয়েছে। সেখানকার চিকিৎসা ফি নির্ধারণে আমরা বৈঠক করছি। আশা করি সেটির সমাধান হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবেন। তারা বিমানবন্দরে জায়গা দেবে। আমরা শুধু কারিগরি সহযোগিতা দেব। আমরা শুনেছি দুই একদিনের মধ্যে বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনা আমাকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে তাদের সেই সমালোচনা ইতিবাচক হতে হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন