বিজ্ঞাপন

কেন্দ্র-তৃণমূল ডিজিটাল সমন্বয়ে আ.লীগ সভাপতির কাছে প্রস্তাবনা

September 15, 2021 | 11:08 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ডিজিটাল মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, প্রচার-প্রচারণা ও গুজব-অপপ্রচারের পাল্টা জবাবের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। চলমান করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই দলের দফতর ও উপদফতর সম্পাদকের সঙ্গে তৃণমূলের দফতর ও উপদফতর সম্পাদকদের সঙ্গে ধারাবাহিক ভার্চুয়াল মতবিনিময়ে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের দফতর সেল থেকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনাগুলো রেজ্যুলেশন আকারে তৈরি করে এরই মধ্যে অনুমোদনের জন্য দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় সামনাসামনি বৈঠক করার সুযোগ ছিল না। এ অবস্থায় ধাপে ধাপে দেশের সব জেলার দফতর ও উপদফতর সম্পাদকের সঙ্গে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মতবিনিময় করেছে কেন্দ্রীয় দফতর। এসব সভায় দলের কাজ ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, দলীয় প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা, তৃণমূল পর্যায়ের সব কর্মকাণ্ড জোরালোভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরা এবং বিরোধী পক্ষের অপপ্রচার প্রতিরোধ, গুজব অপপ্রচারের পাল্টা জবাব দেওয়ার কৌশল নিয়ে বিভিন্ন দিক আলোচনায় উঠে আসে। এর ভিত্তিতেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দলের কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনাগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।

দলের নেতারা বলছেন, টানা মেয়াদে সরকার গঠন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ধাপ অতিক্রম করে ডিজিটাল সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সমন্বয়ের কাজটি এখনো পরিচালিত হয়ে আসছে সাবেকি পদ্ধতিতেই। সে কারণেই  আগামী দিনে দলের কর্মসূচি, প্রচার-প্রচারণা, গুজব-অপপ্রচারের পাল্টা প্রতিরোধ প্রস্তুতি, তৃণমূলের সঙ্গে কাজের সমন্বয়ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীতা অনুভব করেছে আওয়ামী লীগ। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তৃণমূলের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে দল সমন্বয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের বিষয়টি উঠে আসে। আর সেটিই এখন অনুমোদনের জন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার অপেক্ষায়।

দীর্ঘ এক বছর পর গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দফতর সেলের পক্ষ থেকে লিখিত সুপারিশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আরও জোরদার করার পদক্ষেপ নিতে হবে; দলের তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে; তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সারাদেশের সাংগঠনিক জেলার দফতর বরাবর পাঠাতে হবে; এবং ডাটাবেজ টিম ও সিআরআইয়ের কাজের সঙ্গে তৃণমূলের সমন্বয় জোরদার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের নেত্রীই (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাঙালি জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। করোনাকালীন আমরা যে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ওয়ালের ওপর কতটা নির্ভরশীল, তার প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতিদিনের কাজে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সেভাবে হচ্ছে না। সংগঠন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় যেন তথ্যপযুক্তি ব্যবহার করা যায়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করলে খুব দ্রুত প্রতিটি সাংগঠনিক নির্দেশনা তৃণমূলে পৌঁছানো সম্ভব হবে। একইভাবে আমাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যায়, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। সংগঠনের সব ডাটা, বিভিন্ন কমিটি সংক্রান্ত তথ্য, গবেষণা কর্ম ও দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দল পরিচালনার বিষয়ে দুই বছর আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে জানান বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি জানান, পরে তারা বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে বসেছেন। এর পরের ধাপে তৃণমূলের দফতর সম্পাদক ও উপদফতর সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা অনুসরণ করে ধারাবাহিকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। এসব সভায় উঠে আসা সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে রেজ্যুলেশন আকারে নেত্রীর কাছে ৯ তারিখের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় হস্তান্তর করেছি।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এ ক্ষেত্রে অনলাইনেই এসব অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনায় অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও উন্নয়ন প্রচারের বিষয়েও তাগিদ এসেছে।

বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, এখন নিউ মিডিয়া হলো অনলাইন গণমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যম। আমরা সেই জায়গাগুলোতে আমাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে চাই। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সোস্যাল মিডিয়ায় আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, গুজব ও অপপ্রচার করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সেখানেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেখানে সঠিক তথ্য দিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি দূর করারও আমাদের একটি কাজ। আমরা এই জায়গায় একটি সংগঠিত কার্যক্রম চালাতে চাই। আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন ধাপে সে প্রস্তুতি নিয়েছি। আওয়ামী লীগের দফতর বিভাগ থেকে সারাদেশের দফতর-উপদফতর সম্পাদকদের সংযুক্ত করা হচ্ছে। সিআরআই আমাদের সহযোগিতা দিচ্ছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালা করছে। দফতর ও উপদফতর সম্পাদকদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। আমরা সমস্যা ও সংকট সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনাগুলো রেজ্যুলেশন আকারে নেত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছি।

এর আগে গত ৭ মে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক জেলাগুলোর দফতর ও উপদফতর সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় দফতর। এরপর ধাপে ধাপে বিভাগ ধরে দেশের বাকি সাংগঠনিক জেলাগুলোর সঙ্গেও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষ ১৩ জুলাই ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক আট জেলার সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হয় এই প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০১৭ সালে সংসদ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় করতে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছিল আওয়ামী লীগ। ওই বছরই সংগঠনের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে জেলা আওয়ামী লীগকে ল্যাপটপ সরবরাহ করা হয়েছিল। তবে পরে এ উদ্যোগ খুব বেশি কাজে আসেনি।

এরপর গত বছর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি বিভাগীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন শুরু করে। মার্চে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ কার্যক্রমকে একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করার নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনায় প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা-উপজেলার দফতর, প্রচার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও গবেষণা বিভাগের নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের সহযোগী সংগঠনের নেতারাও পাচ্ছেন এই প্রশিক্ষণ। আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সিআরআইয়ের মাধ্যমে দেওয়া এ প্রশিক্ষণে নেতাদের ইমেইল ব্যবহার, টাইপ, চিঠিপত্র লেখা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় শেখানো হচ্ছে।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন