বিজ্ঞাপন

ইভ্যালির মোট দায় হাজার কোটি টাকা: র‌্যাব

September 17, 2021 | 2:00 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ইভ্যালির বর্তমানে মোট দায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিটি শুরু থেকেই লোকসানে ছিল। কোনো লাভ হয়নি। অথচ এমডি ও চেয়ারম্যান একেকজন বেতন নিতেন পাঁচ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ২ হাজার। অস্থায়ী কর্মচারী ছিল প্রায় ১৭শ’। তাদের প্রতি মাসে বেতন দিতে হতো প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সব টাকাই দেওয়া হতো গ্রাহকের জমা পড়া টাকা থেকে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

আল মঈন বলেন, কারসাজির মাধ্যমে লাখ লাখ গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ইভ্যালি প্লাটফর্মে প্রতারিত হয় সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন লোভনীয় গগনচুম্বী অফার দেখিয়ে সাধারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। এছাড়া বিভিন্ন আলোচনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি উঠে আসে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশান থানায় এক ভুক্তভোগী প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল (৩৭) এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের (৩৫) বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ওইদিনই ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল (৩৭) এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে (৩৫) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাব জানায়, ইভ্যালির কারসাজির মূলহোতা মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী অন্যতম সহযোগী। রাসেল ২০০৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন বলে জানান। তিনি ২০০৯ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি ব্যাংকিং সেক্টরে ছয় বছর চাকরি করেন। ২০১৭ সালে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি প্রায় এক বছর শিশুদের ব্যবহার্য একটি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করেন এবং অতঃপর তিনি ওই ব্যবসা বিক্রি করে দেন। ২০১৮ সালে পূর্বের ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু হয়। কোম্পানিতে তিনি সিইও এবং তার স্ত্রী চেয়ারম্যান পদে থাকেন।

র‌্যাব আরও জানায়, ভাড়াকৃত স্পেসে ধানমন্ডিতে প্রধান কার্যালয় এবং কাস্টমার কেয়ার স্থাপিত হয়। একইভাবে ভাড়াকৃত স্পেসে আমিন বাজার ও সাভারে দুটি ওয়ার হাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে একপর্যায়ে প্রায় ২০০০ ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও ১৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ ছিল। যা ব্যবসায়িক অবনতিতে বর্তমানে যথাক্রমে স্টাফ ১৩০০ জনে এবং অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মচারীদের একপর্যায়ে মোট মাসিক বেতন বাবদ দেওয়া হতো প্রায় ৫ কোটি টাকা; যা বর্তমানে দেড় কোটিতে দাঁড়িয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিনি ও তার স্ত্রী পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক ৫ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন। তারা কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামী গাড়ী (রেঞ্চ রোভার ও অডি) ব্যবহার করেন। এছাড়া কোম্পানির প্রায় ২৫-৩০টি যানবাহন রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সাভারে গ্রেফতারকৃত রাসেলের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা-জমিসহ অন্যান্য সম্পদ রয়েছে বলে তিনি জানান।

রাসেল ও তার স্ত্রীর বরাত দিয়ে র‌্যাব আরও জানায়, ইভ্যালির বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি গেটওয়েতে ৩০-৩৫ কোটি গ্রাহকের টাকা আটক হয়ে আছে বলে গ্রেফতারকৃতরা উল্লেখ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

কোম্পানির দায় ও দেনা সম্পর্কে তারা বলেন, একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেনা দাঁড়ায় ৪০৩ কোটি টাকা; চলতি সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন পণ্য বাবদ গ্রাহকদের নিকট থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৪ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন গ্রাহক ও কোম্পানির কাছে বকেয়া প্রায় ১৯০ কোটি টাকা।

বিপুল পরিমাণ দেনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃতরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির আরও দায়-দেনা রয়েছে। সর্বমোট পরিমাণ ১০০০ কোটি টাকার বেশি বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান।

সারাবাংলা/ইউজে/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন