বিজ্ঞাপন

‘ছাত্রনেতাদের কথায় উঠাবসা শিক্ষকতার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে’

September 17, 2021 | 3:42 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যারা শিক্ষক; যারা মূল দায়িত্বে আছেন তারা সেখানকার প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের কথায় ওঠেন আর বসেন। এই ব্যক্তিত্বহীনতা আমাদের শিক্ষকতার মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ‘শিক্ষা: ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাস্তবিক কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন। শিক্ষা দিবস উপলক্ষে দলটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে।

শিক্ষা দিবস নিয়ে ছাত্র সংগঠনের কোনো কর্মসূচি না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের দিবসটা ছাত্র সমাজের জন্য অপরিহার্য, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে আজ কয়জনে জানে? তা জানা নেই। ছাত্রনেতারা এখন তাদের ক্যাম্পাস, শিক্ষা,শিক্ষার সমস্যা এমনকি কোনো সংগঠন এই দিবসের তাৎপর্য নিয়ে সেমিনারও করে না।’

এ ধারা চলতে থাকলে ছাত্র সংগঠনগুলোর জৌলুস হারিয়ে যাবে দাবি করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘এমনিতেই আজকে ছাত্ররাজনীতি আজকাল তেমন আকর্ষণীয় নেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে। ছাত্ররাজনীতি যদি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় না হয় তাহলে সেই ছাত্ররাজনীতি মূল্যহীন। এর কোনো গুরুত্ব নেই। কোনো মূল্য নেই।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষা নিয়ে নতুন কর্মপরিকল্পনা ঘোষণার কথা তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই পথে চললে হয়ত সুদিন আমাদের আসবে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর গৌরব আজ অস্তাচল। আজকে বিশ্বের প্রথম সারির পাঁচশ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তালিকা টাইম ম্যাগাজিন প্রতিবছর প্রকাশ করে সেটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে খুঁজে পাওয়া যায় না। একশোটির মধ্যে তো খুঁজে পাওয়া যাবে না, ৫’শ টির মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজে পাই না। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়কেও খুঁজে পাই না। আমাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হতে পারল না, এটি খুবই দুভার্গ্যের বিষয়।’

আসলে আমাদের শিক্ষার কতকগুলো বিষয় আমরা উপেক্ষা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাংকিংয়ে রিসার্চ অ্যাকটিভিটিজ খুবই জরুরি। র‌্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থান পাওয়ার জন্য। সেই গবেষণা খাতে আমাদের বাজেট আগে একেবারেই কম ছিল। এখন কিছু হয়েছে তারপরও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।’

গবেষণাখাতে তথা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে আমাদের আরও বিনিয়োগ দরকার। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে প্রায়োগিক বাস্তবতায় আরও নতুন কলাকৌশলে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ওবায়দুল কাদের আরও আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাই, করোনাকালে হয়ত যাওয়া হয়নি। তার আগে গিয়েছি। এটা অবাক লাগে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যারা শিক্ষক; যারা মূল দায়িত্বে আছেন, তারা সেখানকার প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের কথায় উঠেন আর বসেন। এই ব্যক্তিত্বহীনতা আমাদের শিক্ষকতার মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করে।’

‘শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও খুবই বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে। এখানে তদবিরকে, কে কত প্রভাবশালী তদবির সেটার ওপর নিয়োগ হয়, মেধা যোগ্যতা এখানে মূল ব্যাপার নয়। এটা বিভিন্ন জায়গায় লক্ষ্য করেছি’ বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা শিক্ষার যে কোয়ালিটি চেঞ্জ করতে চাই, সেটি করতে গেলে শিক্ষকতার কোয়ালিটিও বাড়াতে হবে। শিক্ষার মান যেমন বাড়াতে হবে। শিক্ষতার মানও আমাদেরকে বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট যত্নশীল হতে হবে এবং আরও মনোযোগ দিতে হবে।’

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন পরে সামনে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে যাচ্ছে। হল হোস্টেলগুলো খুলে যাবে। কিন্তু এই হল-হোস্টেলগুলোতে পলিটিক্যাল রুম থাকার একটা অলিখিত নিয়ম চালু রয়েছে অছাত্রদের পুনর্বাসনের জন্য। অনেকে ছাত্র না তারপরও রুম দখল করে থাকে। শিক্ষার উন্নয়ন করতে হলে সবদিক দেখতে হবে। হল-হোস্টেলে জীবনযাত্রাটা কেমন সেটাও দেখতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘এতে কে খুশি হল, কোন নেতা খুশি হলো, কে অখুশি হলো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না’ বলেও জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের।

শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট উপ-কমিটির সদস্য সচিব শামসুন্নাহার চাঁপা।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন