বিজ্ঞাপন

নেকড়ে যোদ্ধাকে কাবু করতে কৌশলী বাইডেন

September 19, 2021 | 2:38 pm

আতিকুল ইসলাম ইমন, নিউজরুম এডিটর

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় বেইজিং-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। চীনা পণ্যের উপর একের পর এক শুল্ক আরোপ ও নানা বিধিনিষেধ জারি করে মহাকাব্যিক এক বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মারমুখী আচরণের জবাবে বেইজিংও প্রতিক্রিয়া দেখাতে বিরত থাকেনি। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে বেইজিং। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে পরিস্থিতি ঠিক আগের মতো নয়।

বিজ্ঞাপন

মাত্র কয়েক মাস আগেও চীনের কূটনীতিকরা একের পর এক কঠোর মন্তব্য আর তীব্র বাক্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। কোয়াড সক্রিয় হওয়ার পর সেটিকে চীন বিরোধী জোট আখ্যায়িত করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে ওই জোটের সঙ্গে না মিশতে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছেন চীনের কূটনীতিকরা। আবার ওয়াশিংটনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হতেও দেখা গেছে তাদের। বিশ্বের নানা ইস্যুতে বেইজিংয়ের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় জানাতে এবং প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করেননি চীনা কূটনীতিকরা।

তবে বর্তমানে চীনের সদা মুখর কূটনীতিকরা দৃশ্যত মৌনব্রত ধারণ করেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বরাবরই সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে থাকে। সম্প্রতি এসব সংবাদমাধ্যমও যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ থেকে বিরত রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আগস্টের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উভয়ই সংঘাত এড়িয়ে একে অন্যকে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার বার্তা দিতে থাকে। প্রকাশ্যে দুই পক্ষই এতে সাড়া দেয়। এর পর থেকেই নমনীয় হয়েছে বেইজিং।

গত ৩১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে গঠিত নিউইয়র্ক ভিত্তিক ন্যাশনাল কমিটিতে একটি উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা প্রদান করেন। এতে রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের স্থবির সম্পর্কে গতি আনার উপায় খুঁজতে বেইজিংয়ের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। আক্রমণাত্মক মানসিকতার চীনা কূটনৈতিক কিন গ্যাং তার বক্তব্যে সর্বোচ্চ নমনীয়তা প্রদর্শন করেন।

বিজ্ঞাপন

বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাং বলেন, “চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, অবমূল্যায়ন দ্বন্দ্ব বা বিরোধিতা থাকা উচিত নয়। কিছু লোক মনে করে, চীন আমেরিকার সঙ্গে বাজি ধরেছে, চীনের লক্ষ্য হলো আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে স্থানচ্যুত করা—চীনের কৌশলগত অভিপ্রায়ের ব্যাপারে তাদের এমন ভাবনা মারাত্মক ভুল।”  রাষ্ট্রদূত কিনের এমন মন্তব্যে বেইজিংয়ের নমনীয় নীতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও চীনের সঙ্গে আলোচনায় বারবার আগ্রহ প্রকাশ করছে। যুক্তরাষ্ট্র এক ধাপ এগিয়ে শি-বাইডেন শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ৯০ মিনিট ফোনে কথা বলেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা ওই ফোনালাপের সম্পর্কে জানিয়েছেন, দুই নেতা সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলেছে, দুই নেতার কথোপকথনটি ছিল অকপট এবং বিস্তারিত। এসময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাইডেনকে জানান, চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করছে। চীনের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফোনালাপে উভয়পক্ষ ঘন ঘন পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখতে সম্মত হন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শি-বাইডেন ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে সে সময় জলবায়ু, মানবাধিকার ও করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কারণে দুই পরাশক্তির সম্পর্কে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। এবার দুই নেতা যখন পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনে দৃশ্যত ঐক্যমত্য প্রকাশ করছেন—ঠিক তখন ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্নায়ুযুদ্ধের আদলে এক খেলা শুরু করেছে ওয়াশিংটন।

‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের শিকার হয়েছে চীন। তবে ট্রাম্পের ওই নীতিতে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আমেরিকার দীর্ঘদিনের কয়েকটি মিত্র দেশও। ট্রাম্পের এমন নীতির ফলে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন একাধিক সামরিক ও বাণিজ্যিক জোটের সঙ্গেও বনিবনা হয়নি ওয়াশিংটনের।

বেইজিংয়ের প্রভাব রুখতে বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্র কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (সিপিটিপিপি) জোটের উদ্যোগ নিয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে সেই জোট থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নেন। উল্লেখ্য যে, এবার সেই জোটেই যোগ দিতে ১৮ সেপ্টেম্বর আবেদন করেছে চীন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কও তলানিতে ঠেকে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মিত্র ইইউ’র সঙ্গে রীতিমতো বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপসহ রাজনৈতিক নানা সিদ্ধান্তের কারণে আমেরিকার সঙ্গে ইইউ’র সম্পর্ক অবনতি ঘটে। এ সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করে বেইজিং।

২০১৮ সালের দিকে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈরি আচরণে ইইউ নাজেহাল, ঠিক তখন ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা চালায় চীন। সে সময় বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সিনো-ইউরোপীয় সম্মেলনে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে ইইউকে যৌথ বিবৃতি প্রদানে চাপ দেয় চীন। যদিও চীনের ওই পদক্ষেপ সফল হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তবে ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বড় একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে সক্ষম হয় চীন। সাত বছর ধরে শি জিনপিংয়ের প্রচেষ্টার পর ওই বছর চীন-ইইউ একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির আওতায় ইউরোপে একাধিক ক্ষেত্রে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ পেত চীন। চীনেও ইউরোপের কোম্পানিগুলো বাজার তৈরির সুযোগ তৈরি হয়। ইতালি-জার্মানির মতো দেশ সরাসরি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে পড়ে। এ চুক্তি স্বাক্ষরে শি জিনপিং ইইউ-এ আমেরিকার প্রভাব কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করা হয়েছিল। চীনের সাত বছরের প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেছিল অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইইউ’র সঙ্গে বাণিজ্য লড়াই শুরু না করলে এ চুক্তি আদৌ হতো কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এরকম একাধিক ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মারমুখী নীতি শি জিনপিংকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায়। যদিও চীনের সঙ্গে আমেরিকার সরাসরি বাণিজ্য যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতিও হয় বেইজিংয়ের।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন আমেরিকা ফার্স্ট নীতি অবলম্বন করে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত মিত্র, সহযোগী এবং কৌশলগত সঙ্গীদের দূরে ঠেলে দিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায়, ঠিক তখন জো বাইডেন ফেরেন হোয়াইট হাউজে। চীনকে দমনের বেলায় ট্রাম্পের বিপরীত নীতি অবলম্বন করেন জো বাইডেন। তিনি ওভাল অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন। ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’। জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই চীনের সঙ্গে ইইউ’র ওই বাণিজ্য চুক্তটি বাতিল হয়ে যায়। ইইউ’র এমন সিদ্ধান্তে ইউরোপ নিয়ে শি জিনপিংয়ের স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে।

জো বাইডেন মিত্রদের আশ্বস্ত করার পাশাপাশি তাদের চীনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানতালে সম্পর্ক বজায় রেখে চলা কিছু দেশকেও পুরোপুরি তার দলে ভেড়ানোর উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম।

চীনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা
গত জুনে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-সেভেন সম্মেলনে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিকল্প হিসেবে একটি বিশাল বাজেটের বৈশ্বিক অবকাঠামো পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। জি-সেভেনের এমন পরিকল্পনা মূলত ওয়াশিংটন থেকেই উদ্ভূত। চীন অবশ্য জি-সেভেনের এ পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেছে, ছোট একটি গ্রুপ বিশ্বের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে, সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। তবে চীন বিরোধী ওই অবকাঠামো পরিকল্পনাটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের উপযুক্ত বিকল্প বলেও মত দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

২০১৮ সালে চীনের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০২১ সালের এপ্রিলে এ চুক্তি বাতিল করে ক্যানবেরা। কারণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া দেখায়, এ চুক্তি জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। অস্ট্রেলিয়ার এমন সিদ্ধান্তে ফের একবার বড় ধাক্কা খায় শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প।

অস্ট্রেলিয়া শুধু চীনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেই ক্ষান্ত থাকেনি, আরও এক ধাপ এগিয়ে, দীর্ঘদিনের ভারসাম্য রক্ষা নীতি বিসর্জন দিয়ে সরাসরি চীনবিরোধী জোটে যোগ দেয়। উল্লেখ্য যে, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। তবুও চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক মার্কিন পদক্ষেপে সরাসরি সমর্থন এবং যুক্ত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।


অস্ট্রেলিয়ার সাবমেরিন বহরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহে রাজি যুক্তরাষ্ট্র 

জো বাইডেনের উদ্যোগে চারটি দেশের জোট কোয়াড সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে অবাধ ও স্বাধীন নৌ চলাচল নিশ্চিত করতে ২০০৭ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ জোটের যাত্রা শুরু হয়। তবে দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে বা সরাসরি চীনের বিরুদ্ধে কাজ করেনি এ জোট। কিন্তু এবার জো বাইডেনের নেতৃত্বে চীনবিরোধী একটি জোট হিসবে কোয়াড পূর্ণ আত্মপ্রকাশ করেছে। এ জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য তিনটি দেশ ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে চীনবিরোধী তৎপরতায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছে।

এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্র যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইনের সঙ্গেই শুধু সম্পর্ক ঝালাই করেননি বাইডেন, চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বা সীমান্ত ইস্যুতে বিবাদ রয়েছে এমন কয়েকটি দেশকেও ঘনিষ্ঠভাবে নিজের দলে টেনেছেন তিনি। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি দেশ ভিয়েতনাম ও ভারত। এই দুটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদ রয়েছে চীনের। ভারতের সঙ্গে গত বছর প্রায় যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে পড়েছিল চীন। অতীতেও দুই দেশ সীমান্ত ইস্যুতে যুদ্ধ করেছে। এছাড়া আঞ্চলিক আধিপত্য প্রশ্নে বরাবরই চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে ভারতের। দক্ষিণ চীন সাগরে জলসীমা সংক্রান্ত বিবাদ নিয়ে চীনের সঙ্গে ভিয়েতনামের টানাপড়েন দীর্ঘদিনের। বেইজিংয়ের অত্যধিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে ভালো চোখে দেখে না হ্যানয়। দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্নে  ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও চীনের বিরোধ রয়েছে। উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ চীন সাগরের পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে চীন। চীনের এমন দাবি প্রতিবেশীদের বিরক্তির বড় কারণ। এসব প্রতিবেশীর মধ্যে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও রয়েছে মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, তাইওয়ান, ফিলিপাইন।

ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত অস্ত্র প্রেরণ
চলতি সপ্তাহে আরও একটি চীন বিরোধী জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওই জোটের আলোচিত সদস্য অস্ট্রেলিয়া চীনের জন্য প্রধান হুমকি হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মিলে অস্ট্রেলিয়া একটি বিশেষ কৌশলগত নিরাপত্তা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। এ চুক্তির আওতায় তিন দেশ নিজেদের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় করবে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো চীনকে দমন করা। ইতিমধ্যে চীনও চুক্তিটির ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এমন সামরিক চুক্তির ফলে চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সরাসরি বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। এ সামরিক চুক্তির মাধ্যমে দেশটি প্রথমবারের মতো পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে। অকাস (এইউকেইউএস) নামের এ চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম টেকনোলজির মতো উন্নত প্রযুক্তিও লাভ করবে। গভীর সমুদ্রে চীনের সামরিক দুর্বলতা রয়েছে। সেই দুর্বলতার সুযোগ অস্ট্রেলিয়াকে নেওয়ার পথ করে দিচ্ছেন বাইডেন।


দক্ষিণ চীন সাগরে টহলরত জার্মান ফ্রিগেট বায়ার্ন

যুক্তরাষ্ট্রের চীন বিরোধী তৎপরতায় অস্ট্রেলিয়া সক্রিয়ভাবে যোগ দেওয়ায় এ অঞ্চলে ক্যানবেরার কিছু কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক তৈরি এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির কৌশল নিতে পারে অস্ট্রেলিয়া। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বেইজিংয়ের আধিপত্যে ভাগ বসাবে ক্যানবেরা।

যখন শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্মেলনের প্রস্তাব দিচ্ছেন বাইডেন, ঠিক তখন আমেরিকায় তিনি কোয়াড সম্মেলনেরও ডাক দিয়েছেন। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর হতে যাচ্ছে কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন। চার রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিতিতে এই শীর্ষ সম্মেলনে মূলত চীনকে দমনের রূপরেখা আলোচিত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই কোয়াড সম্মেলনের আগে অবশ্য দক্ষিণ চীন সাগরে আমেরিকার পাশাপাশি মিত্র কয়েকটি দেশের রণতরী টহল বসিয়েছে।

গত ২ আগস্ট দক্ষিণ চীন সাগরে প্রায় দুই দশক পর একটি রণতরী পাঠায় জার্মানি। এ রণতরীটি দক্ষিণ চীন সাগরে বাণিজ্য পথে চীনের হুমকি মোকাবিলায় নিযুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে রণতরীটি নিয়ে উপকূলে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। এর আগে গত জুলাইয়ে দক্ষিণ চীন সাগর স্থায়ীভাবে দুটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ঘোষণা দেয় ব্রিটেন। আগস্টে দক্ষিণ চীন সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী একটি রণতরী এবং একটি ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রিগেটসহ মোট চারটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায় ভারত। প্রশান্ত মহাসাগরে আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শক্তিশালী নৌবহর রয়েছে।

চীন যখন নেকড়ে যোদ্ধা কূটনীতি সর্বোচ্চ মাত্রায় চর্চা করছিল—তখন প্রতিপক্ষকে ঘিরে ফেলার নীতি গ্রহণ করেছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত এড়ানোর বার্তা দিলেও ইতিমধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে শক্তিবৃদ্ধি করেছে। জো বাইডেন চীনের আশেপাশে একের পর এক জোট গড়ছেন। অস্ট্রেলিয়াকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহের চুক্তি করেছেন। দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েন করা হয়েছে ভারী অস্ত্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেকড়ে যোদ্ধা চীনকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছেন। এ কাজে অনেকটাই এগিয়েছেন তিনি। এবার দেখার অপেক্ষা, শি জিনপিংয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে।

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন