বিজ্ঞাপন

আ.লীগে ‘হাইব্রিড’ ঠেকাতে সদস্য পদে কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত

September 19, 2021 | 9:41 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আগামী ১২ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে তৃণমূল পর্যায়ে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন দলটির চট্টগ্রামের নেতারা। নতুনভাবে দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহীকে তার নিজের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস জানাতে হবে। একইসঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্যও দিতে হবে নির্দিষ্ট ফরমে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলের সম্মেলনের আগে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে ১৫ দিন। নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য একটি ফরম চূড়ান্ত করা হয়েছে। সদস্য হতে আগ্রহী ব্যক্তিকে ওই ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমে তিনি ছাত্রজীবনে অথবা পরবর্তী সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না, জড়িত থাকলে কোনো পদ-পদবিতে ছিলেন কি না, তার পরিবারের কোনো সদস্য আওয়ামী লীগ ছাড়া ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কি না, পরিবারে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাবলম্বী অথবা সমর্থক কেউ আছেন কি না- সেটা উল্লেখ করতে হবে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন ফরমে আছে। আগ্রহী ব্যক্তি কেন আওয়ামী লীগে যোগ দিতে আগ্রহী, আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ সম্পর্কে তার জানা আছে কি না, সে বিষয়ও উল্লেখ করতে হবে। তাদের দেওয়া তথ্য সঠিক কি না যাচাই বাছাই করে তারপর সদস্যপদ দেওয়া হবে।

সোমবার থেকে দলীয় কার্যালয় নগরীর দারুল ফজল মার্কেট থেকে এ ফরম বিতরণ শুরু হবে। প্রতি ইউনিটকে ১৫০টি করে ফরম দেওয়া হবে। ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক একসঙ্গে এসে ফরম সংগ্রহ করে নেবেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ শেষ করে আবার জমা দেবেন। এরপর ১২ অক্টোবর থেকে তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হবে। সার্বিক বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্যকে ওয়ার্ড ভাগ করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সভায় উপস্থিত কয়েক নেতা আরও জানান, সভায় নগরীর শুলকবহর ওয়ার্ডের এক নেতা জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ নিয়ে কথা বলতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এ বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। উভয় নেতা সাংগঠনিক সভায় এ বিষয়ে কথা না বলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিষয়টি জানাতে বলেন। তবে সেসময় নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সভায় ছিলেন না। পরে তিনি সভায় যোগ দেন।

সভায় নগর আওয়ামী লীগের সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘অন্যান্য সাংগঠনিক জেলার চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এক্ষেত্রে তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। এর প্রথম শর্ত হচ্ছে- দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখা।’

চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে আছেন, তাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। অনুপ্রবেশকারী যাতে দলে ঢুকতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিরোধ-বিভেদ শুধরে সামনের দিকে এগুতে হবে। আমাদের সামনে কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জ। মোকাবিলার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। দলের মধ্যে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি বড় করে দেখা অবকাশ নেই।’

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সভায় সম্মিলিতভাবে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা সবাইকে অবশ্যই মেনে নিতে হবে। বিশৃঙ্খলা-বিভেদ কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। যারা দলে থেকে শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড করবেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। যারা দায়িত্বে থেকে সংগঠনের কাজ নিয়ে অবহেলা করেন এবং বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করেন তারা দয়া করে পদ থেকে সরে দাঁড়ান।’

নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাদের মধ্যে আবদুল মান্নান চৌধুরী, ফরিদ আহমদ চৌধুরী, আবদুস শুক্কুর ফারুকী, আইয়ুব খান, খালেদ হোসেন মাশুক, শামসুল আলম, আবদুর রহিম, শেখ সরওয়ার্দী, সরওয়ার মোরশেদ কচি, ইকবাল চৌধুরী, আসলাম সওদাগর, নুরুল আমিন কালুসহ ৪৩ জন বক্তব্য দেন।

এছাড়া বর্ধিত সভায় নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সুনীল কুমার সরকার, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বদিউল আলম, আবদুচ ছালাম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসান মাহমুদ শমসের, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণার দাবি আ.লীগের

এদিকে রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ। সভায় সাংসদ মোছলেম দক্ষিণ চট্টগ্রামকে স্বতন্ত্র জেলা ঘোষণার দাবিসম্বলিত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সর্বসম্মতিক্রমে সেটি অনুমোদন হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দক্ষিণ চট্টগ্রামকে একটা স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে দেখতে চাই। বিষয়টি সর্বসম্মত দাবি হিসেবে সভায় গৃহীত হয়েছে। এছাড়া তৃণমূলের সম্মেলনের বিষয় এসেছে। এখন যেহেতু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচন চলছে, সেজন্য সুবিধাজনকভাবে ওয়ার্ড সম্মেলনগুলো শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পৌরসভা ও ইউনিয়নের সম্মেলন পরে হবে।’

এছাড়া সভায় জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমেরিকা সফরকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলার নিন্দা জানানো হয়েছে বলে মফিজুর রহমান জানান।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন