বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দরে আরটি পিসিআর ল্যাবে আমিরাতের শর্ত পূরণ নিয়ে প্রশ্ন

September 20, 2021 | 12:25 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য টেস্ট ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্ত শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছে— প্রস্তাবিত আরটি-পিসিআর পদ্ধতির টেস্ট ল্যাব কি আদৌ আরব আমিরাতে বাংলাদেশি যাত্রীদের প্রবেশের মূল শর্তটি পূরণ করছে কি? এছাড়াও আরটি-পিসিআর পদ্ধতির জৈব সুরক্ষা এবং আমাদের বিমানবন্দরে সেই জৈব সুরক্ষার প্রয়োগের কার্যকারিতা নিয়েও উদ্বেগ এসেছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশসহ ১০টি দেশ থেকে আগতদের জন্য ফ্লাইটের ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দর থেকেই করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদের বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে এ পরীক্ষাটি র‌্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে হতে হবে বলে জানানো হয়েছে আরব আমিরাতের তরফ থেকেই। বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদেরও বড় একটি অংশ এই দেশটিতেই কর্মরত, যারা করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন দেশে। তাদের দাবির মুখে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এরই মধ্যে তা বাস্তবায়নের পথে। কিন্তু র‌্যাপিড পিসিআর পরীক্ষার বদলে সেখানে বসছে সাধারণ আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ল্যাব। এতে আদৌ বাংলাদেশ থেকে আমিরাতে যাত্রী প্রবেশের শর্ত পূরণ হচ্ছে কি না, তা নিয়েই থেকে যাচ্ছে বড় প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, র‌্যাপিড পিসিআরের বদলে আরটি-পিসিআর গ্রহণযোগ্য না হলে আমিরাতগামী যাত্রীদের যেমন পোহাতে হবে ভোগান্তি, তেমনি কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিমানবন্দরে স্থাপন করা পিসিআর ল্যাবগুলোও সে অর্থে কাজে আসবে না। অন্যদিকে, র‌্যাপিড পিসিআরের বদলে কেন আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে— এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কারও কাছ থেকেই স্পষ্ট কোনো বক্তব্য মিলছে না।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ ৩০ আগস্ট এক নির্দেশনায় জানিয়েছে, দেশটিতে প্রবেশের জন্য ১০টি দেশের নাগরিকদের দুইটি নির্দেশনা মানতে হবে। প্রথমত, এসব দেশের নাগরিকদের ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগে আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা যাত্রীদের ভ্রমণের ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আরেকটি নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। র‌্যাপিড পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে করা এই পরীক্ষাতেও ফল নেগেটিভ আসতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলছে, দুই পরীক্ষার ফলই কিউআর কোডের মাধ্যমে জেনারেট করা সনদের মাধ্যমে বহন করতে হবে যাত্রীকে। আর বিশেষ নির্দেশনার আওতায় থোকা ১০টি দেশ হলো— বাংলাদেশ, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

আমিরাত সরকারের এমন নির্দেশনার পরই দেশে আটকে পরা আমিরাত প্রবাসীরা বিমানবন্দরে দ্রুততম সময়ে র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন বসানোর জন্য আন্দোলন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে কারিগরি বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর অবকাঠামোগত বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় বেবিচককে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর র‌্যাপিড পিসিআর ল্যাব বসানোর জন্য কর্মযজ্ঞ শুরু হলেও ক্রমে সেই উদ্যোগ এসে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চলমান কার্যক্রম বলছে, শাহজালালে সাতটি বেসরকারি কোম্পানি আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিতে শুরু করেছে।

শাহজালালে নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ

গত ১ সেপ্টেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জানান, প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ যাত্রী বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। এর মধ্যে ৮০০ যাত্রী এককভাবে নির্দষ্ট একটি সময়ে বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ থাকেন। তাদের সবার জন্য বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পিসিআর টেস্ট চালু করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে এই টেস্টের ব্যবস্থা করার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়। বলা হয়, বেবিচক বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় জায়গা দেবে এবং অবকাঠামো নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেবে। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নির্দেশনা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে দুইটি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়।

ওই বৈঠক থেকেই সিদ্ধান্ত হয়, বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। পত্রিকায় ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ প্রকাশের মাধ্যমে আগ্রহীদের মধ্য থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হবে। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হলেও পত্রিকায় কোনো ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ও প্রকাশ করা হয়নি। আর র‌্যাপিড পিসিআরের বদলে এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে যাচ্ছে আরটি-পিসিআর ল্যাব।

র‌্যাপিড পিসিআর থেকে আরটি-পিসিআরের সিদ্ধান্ত যেভাবে

৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের আরেক বৈঠকেও র‍্যাপিড পিসিআর মেশিন স্থাপন নিয়েই আলোচনা হয়। ওই রাতেই কারিগরি কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া না হলেও বৈঠকে ডিএমএফআর মলিউকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকস লিমিটেডের সঙ্গে ল্যাব স্থাপন নিয়ে আলোচনা করা হয়। একদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ডিএমএফআরের পক্ষ থেকে ফের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। কোনো যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ল্যাব স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে সমালোচনাও ওঠে।

পরে ১৩ সেপ্টেম্বর কারিগরি কমিটির আরেক বৈঠকে জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেটের দুইটি ল্যাবসহ মোট ২৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দরে নমুনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনে আগ্রহী। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান র‍্যাপিড পিসিআর মেশিন বসানোর কথা বললেও বাকিরা আরটি-পিসিআর মেশিনে নমুনা পরীক্ষা করবে বলে জানায়। ওই বৈঠক থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায়, বিমানবন্দরে মূলত আরটি-পিসিআর মেশিনই বসতে যাচ্ছে নমুনা পরীক্ষার জন্য।

বিজ্ঞাপন

পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া আবেদনগুলো থেকে কম সময় ও কম মূল্য বিবেচনায় সাতটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সাত প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ১৬ সেপ্টেম্বর জায়গা বুঝে নিতে বিমানবন্দরে গেলে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়, ১৪ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশনা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। আবু জাফর নামে এক ব্যক্তির সই করা চিঠিতে দুইটি র‍্যাপিড পিসিআর মেশিন ও দুইটি আরটি-পিসিআর মেশিনের নাম জানানো হয়। ওই চিঠিতে জানানো হয়, সাতটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের কর্মপদ্ধতি ও পরিকল্পনা অবহিত করতে হবে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারপর ল্যাব স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে।

আরব আমিরাতের চাহিদা র‌্যাপিড পিসিআর হলেও বাংলাদেশে কেন আরটি-পিসিআর ল্যাব বসানো হচ্ছে— এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এরকম একটি ডক্যুমেন্টের তথ্য জানা গেছে, যেখানে র‌্যাপিড পিসিআর ব্যয়বহুল হওয়ায় বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হলেই সেটি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য গ্রহণ করার আবেদনে আমিরাত কর্তৃপক্ষ সায় দিয়েছে বলে জানানো হয়।

তবে ১৪ সেপ্টেম্বর আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফকির মোহাম্মদ মনওয়ার হোসেনের সই করা আরেক চিঠিতে দেখা যায়, দুইটি র‍্যাপিড পিসিআর মেশিনে নমুনা পরীক্ষা করে আমিরাতে যাচ্ছেন যাত্রীরা। অন্য আরেক চিঠিতে নেপালের বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে আমিরাতে যাত্রী পাঠানোর কথা বলা হয়। কিন্তু আমিরাত যে ১০ দেশের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে, সেই দেশের তালিকায় নেপাল নেই।

র‌্যাপিড পিসিআরের বদলে আরটি-পিসিআর— চলছে চাপান-উতোর

বিমানবন্দর র‌্যাপিড পিসিআর না বসিয়ে আরটি-পিসিআর বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, র‍্যাপিড পিসিআর টেস্টের বিষয়ে নির্দেশনা থাকলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেবিচক। আর বেবিচক বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেওয়ার পরেই আরটি-পিসিআর মেশিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

অন্যান্য দেশে কী করা হচ্ছে?

ভারতের একাধিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। এইচএলএল হেলথ কেয়ার কর্তৃপক্ষ বেসরকারিভাবে একটি বিমানবন্দরে র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে। একইভাবে ভারতের দিল্লি, মুম্বাইয়ের বিমানবন্দরগুলোতেও র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কাতেও র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এসব কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পদ্ধতিতে বিমানবন্দরের ভেতরে তুলনামূলক কম টেকনোলজিস্ট দিয়ে অল্প সময়ে অনেক বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। আর এসব বিমানবন্দরে যে র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্তৃপক্ষ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপানের অনুমোদনপ্রাপ্ত।

র‌্যাপিড পিসিআরে পরীক্ষা হয় দ্রুত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরটি-পিসিআর বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রচলিত একটি পদ্ধতি। কিন্তু র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিও বিশ্বজুড়েই ‘পয়েন্ট অব এন্ট্রি টেস্ট’ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হলেও সামগ্রিক বিবেচনায় বিদেশগামী কর্মীদের ওয়ার্ক পারমিট ও চাকরি হারানোর যে আশঙ্ক তৈরি হয়েছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে র‌্যাপিড পিসিআর স্থাপনের ব্যবস্থাই করা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আরটি-পিসিআর তুলনামূলকভাবে কম খরচেও হলেও এই পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করতে হলে ন্যূনতম বায়োসেফটি লেভেল-২ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন ন্যূনতম ৪০০ বর্গফুটের মতো জায়গা। একইসঙ্গে ‘জিরো প্রেশার’ নিশ্চিত করার জন্যও একটি আলাদা কেবিনেট প্রয়োজন হয়। সরাসরি মেশিনের দাম কম হলেও তাই অবকাঠামো বিবেচনায় আরটি-পিসিআরের খরচও কম নয়। এদিকে, ৯৬টি নমুনা না হলে আরটি-পিসিআর মেশিন রান করবে না। এক্ষেত্রে ৯৬টি নমুনার একটি লট পরীক্ষায় সময় লাগবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা।

বিপরীতে একটি টেবিলেই র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন বসিয়ে নমুনা পরীক্ষা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বায়োসেফটি লেভেল নিশ্চিত করার প্রয়োজন নেই। আর র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে মেশিনের ভিন্নতায় যেকোনো সময় ৭ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে একটি নমুনাও পরীক্ষা করা সম্ভব।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজিস্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আরটি-পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে আমাদের দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতি চাইলে সেটিও সম্ভব। কারণ বিশ্বের অনেক দেশেই এর ব্যবহার রয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমার কাছে না থাকায় এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

তিনি বলেন, সাধারণ আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনে বেশি সময় লাগবে— এটিই স্বাভাবিক। অন্যদিকে র‍্যাপিড পিসিআর মেশিন সরাসরি ব্যবহার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আসলে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা না পেলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

কোভিড-১৯ ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, আরটি পিসিআর পদ্ধতিতেই মূলত আমাদের দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ। তাই ‘পয়েন্ট অব এন্ট্রি’ বিবেচনায় র‍্যাপিড পিসিআর নমুনা পরীক্ষা আর আরটি-ল্যাম্প পদ্ধতিতে পরীক্ষা বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এসব প্রযুক্তির বিষয়ে ২০২০ সালে মাঝামাঝি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের চাহিদা। ওরা কী চাচ্ছে? আরটি পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করালে তারা গ্রহণ করবে কি না— এ বিষয়টি তাদের কাছেই নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া আসলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

কী বলছে কর্তৃপক্ষ?

র‌্যাপিড পিসিআর নাকি আরটি-পিসিআর— এ বিষয়ে জানতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে জনশক্তি , কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহীদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন,  ল্যাবের বিষয়টি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। এর কারিগরি দিক দেখবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আমি একজন সদস্য মাত্র। এরই মধ্যে যাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের কর্মপদ্ধতি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখান থেকে অনুমোদন হওয়ার পর নির্বাচিতরা ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু করবে।

র‌্যাপিড পিসিআর ও আরটি-পিসিআর সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই পিসিআর ল্যাবের বিষয়ে জানানো হয়েছে। আর তাই এতে সমস্যা হওয়ার কথা না।

অন্যান্য দেশে র‍্যাপিড পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। নেপালের একটি ফ্লাইটের যাত্রীদের আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করানোর কারণে এয়ার-অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে তাদের ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাদের দেশের যাত্রীদের ক্ষেত্রে এমন কিছু হলে দায় কে নেবে?— এমন প্রশ্নের উত্তরে মফিদুর রহমান বলেন, এটি আমাদের বিষয় না। আমরা এখানে স্থান দিয়েছি। অন্যান্য নিরাপত্তার বিষয়গুলোও আমরা জানিয়েছি। পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে।

তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এসবি/এএম/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন