বিজ্ঞাপন

ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আবেদন

September 21, 2021 | 9:45 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্কলাসটিকা স্কুলের কর্মকর্তা ইভানা লায়লা চৌধুরীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি আবেদন জমা দিয়েছেন আইনজীবীরা। আবেদনে সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীনভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ বিন আনওয়ারসহ কয়েকজন আইনজীবী শাহবাগ থানায় যান। পরে সন্ধ্যা রাত সাড়ে ৯টার দিকে থানায় আবেদনটি জমা দেন তারা।

ইভানা যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, এ সম্পর্কিত কিছু তথ্যপ্রমাণও তারা আবেদনের সঙ্গে জমা দেন।

জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার সারাবাংলাকে বলেন, ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর একটি মামলা হয়েছিল। আজ আইনজীবীদের একটি দল যে তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত যে আবেদন দিয়েছে, সেটি আমরা তদন্তের স্বার্থে আমলে নেব। ইভানার মৃত্যুর পেছনে যদি অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, আমরা সে বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেব। সেক্ষেত্রে অপমৃত্যুর মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রূপান্তরিত হবে।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবীদের পক্ষে আবেদনটি জমা দিয়েছেন আসিফ বিন আনওয়ার। তিনি লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজ সাউথে (এলসিএলএস) শিক্ষকতা করতেন। সেখানে ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তার ছাত্রী ছিলেন ইভানা। এছাড়া এলসিএলএস ডিবেট অ্যান্ড মুটিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে ইভানা দায়িত্ব পালনের সময় ব্যারিস্টার আসিফ ওই ক্লাবের এক্সিকিউটিভ মডারেটর পদে নিযুক্ত ছিলেন।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

আবেদনে আসিফ বিন আনওয়ার জানিয়েছেন, এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই ইভানা তার দাম্পত্য জীবনের অস্থিরতা অনেক তথ্যই তার সঙ্গে শেয়ার করেছেন, যেগুলো থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে ইভানাকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন।

আইনজীবী আসিফ বিন আনওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ইভানা ইমেইলের মাধ্যমে আমাকে তার পারিবারিক সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর দুই দিন আগেও ফেসবুক মেসেঞ্জারে তার সঙ্গে আমার কিছু কথা হয়। ওই কথাতেও উঠে আসে, তার স্বামী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, কথিত সেই প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলতে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতেন। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের নানা আচরণের কথা জানা গেছে, যা তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে থাকতে পারে বলে আমাদের মনে হয়েছে। এ কারণেই আমরা তার মৃত্যুর ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

আসিফ বিন আনওয়ারের সঙ্গে শাহবাগ থানায় আইনজীবীদের দলে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার হোমায়রা ফায়জা শিফা, ব্যারিস্টার শিফাত মাহমুদ শুভ, ব্যারিস্টার জাকিউল হক, ব্যারিস্টার আবু সাঈদ আহমেদ, ব্যারিস্টার রাশিদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আক্তারুন্নেছা খানম এশা, ব্যারিস্টার ওসমান মীর, ব্যারিস্টার সুমাইয়া আহমেদ, অ্যাডভোকেট সাঈদ মিঠু, অ্যাডভোকেট অনন্যা মারিয়াম, ইভানার বন্ধু নেহরীন মোস্তফা, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রভাষক পারিসা শাকুর।

এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শাহবাগ থানা পুলিশ ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পরীবাগের দুই ভবনের মাঝখান থেকে ইভানার মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

ইভানা লায়লা চৌধুরী স্কলাসটিকার ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি উত্তরা ও মিরপুর শাখার স্কলাস্টিকা স্কুলের ইউনিভার্সিটি প্লেসমেন্ট সার্ভিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব করতেন। ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ মাহমুদ হাসানের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে দুই সন্তানের জননী ছিলেন।

ইভানার পরিবারের অভিযোগ, ইভানার স্বামী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ মাহমুদ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ইভানা বছরখানেক আগেই বিষয়টি জানতে পারেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে নিগ্রহের শিকার হন ইভানা। এছাড়া ইভানাকে তার স্বামী নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খাইয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরিবারের অভিযোগ, এক বছর ধরে বয়ে চলা মানসিক যন্ত্রণা, ডিভোর্সের হুমকি, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ ইভানাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন