বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পরও শরীরে অ্যান্টিবডি: গবেষণা

September 21, 2021 | 7:24 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোভিড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, যা ছয় মাস পর্যন্ত অক্ষুন্ন থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীকে সুরক্ষা দেয়। সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী ও পোশাক শ্রমিকদের শরীরে অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) এক গবেষণায় এমনটি দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ছয় মাস ধরে চলা গবেষণায় পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে ফলাফল জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ শুরুর এক মাস পর মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, রোগীর অ্যাটেনডেন্ট, আউটডোর ও ইনডোরে আসা রোগী (কোভিড আক্রান্ত নয় এমন), পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ওপর গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়।

প্রথম ডোজ এবং উভয় ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন এমন ৭৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রক্তে সার্স কোভিড অ্যান্টিবডির উপস্থিতি অর্থাৎ সেরোপজিটিভিটি বিশ্লেষণ করা হয়। ছয় মাস পর ১ সেপ্টেম্বর বিশ্লেষণের ফলাফল চূড়ান্ত হয়েছে। ৭৪৬ জনের মধ্যে ২২৩ জন কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ২৩১ জন উভয় ডোজ নিয়েছেন। ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি এমন আছেন ২৯২ জন।

বিজ্ঞাপন

গবেষণায় প্রাপ্ত ফল সম্পর্কে সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ সারাবাংলাকে জানান, প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। আর উভয় ডোজ ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। আর যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন যারা নেননি তাদের শরীরে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ কম অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘গবেষণায় আমরা কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে একটা চমৎকার বিষয় পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, যারা ভ্যাকসিন নেননি, তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি আছে তা প্রথম ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের চেয়ে তিনগুণ কম। আর যারা দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের চেয়ে পাঁচগুণ কম। ফলে এটাই প্রমাণ হয় যে, কোভিড ভ্যাকসিন নিলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে বেশি, যা করোনা রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে। এই ফলাফল মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।’

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গবেষণায় ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডি হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে- প্রথম ডোজ গ্রহণের পর প্রথম মাসে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি শরীরে থাকে তা দ্বিতীয় মাসে এসে ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর দুই মাস পর্যন্ত শরীরে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি থাকে তা চতুর্থ মাসে এসে ২১ শতাংশ হ্রাস পায় এবং ষষ্ঠ মাসে এসে চতুর্থ মাসের চেয়ে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কমে যায়।

অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘এতে প্রমাণ হয় যে, কোভিড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত করোনা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিবডি শরীরে থাকে।’

সিভাসু’র উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন- ওয়ান হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম.এ. হাসান চৌধুরী এবং সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন সিভাসু’র চিকিৎসক জাহান আরা, সিরাজুল ইসলাম, তারেক উল কাদের, আনান দাশ, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইয়াসির হাসিব, তাজরিনা রহমান এবং শিক্ষানবীশ চিকিৎসক সীমান্ত দাশ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন