বিজ্ঞাপন

দ্বাদশের মাঠে বিএনপিকে বিবেচনায় রেখেই ছক কষছে আ.লীগ

September 25, 2021 | 10:57 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে বিএনপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের উপস্থিতি ধরে নিয়েই ছক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা তিন জাতীয় নির্বাচনে নৌকার জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সাংগঠনিক শক্তিমত্তা নতুন করে যাচাই করছে দলটি। তৃণমূলকে শক্তিশালী করে এই নির্বাচনেও জয় ছিনিয়েই আনতে হবেএমন প্রত্যয় নিয়েই কৌশল সাজানোর নির্দেশনা রয়েছে দলটির হাইকমান্ড থেকে। পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের বিএনপিকে এক বিন্দুও ছাড় না দেওয়ার কৌশলও রয়েছে দলটির।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি এর সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই সাংগঠনিক ঐক্যবদ্ধ শক্তির মাধ্যমে জবাব দিতে দলের সব পর্যায়কে শক্তিশালী করতে শুরু হয়েছে। আর এর অংশ হিসেবেই সারাদেশে কোথাও স্থানীয়দের নেতাদের মধ্যে বিরোধদ্বন্দ্ব থাকলে সেগুলো মীমাংসা করে নিতে তাগিদ দিয়েছেন। কোথাও স্থানীয় নেতারা একক আধিপত্য ধরে রাখতে ত্যাগী নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করছেন কি না, কোথাও স্থানীয় নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধে জড়াচ্ছে কি না, জেলাউপজেলা পর্যায়ে সভাপতিসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে কি নাএসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দলের নেতারা সমস্যা সমাধানে কাজও শুরু করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আমরা মনে করিআমাদের দল টানা মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। এতে তৃণমূলের কোথাও কোথাও কোনো নেতা বা এমপির একক আধিপত্য তৈরি হয়েছে। আবার কোথাও তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দল সাংগঠনিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেকে অভিমান করে দল থেকে দূরে সরে আছেন। বিষয়গুলো নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গাইডলাইন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের বিশ্বাস, দলীয় সভাপতির নির্দেশনা এসব অভ্যন্তরীণ সমস্যা মিটিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আরও শক্তিশালী সুসংগঠিত করতে পারব। বিএনপিকে দ্বাদশের মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ ধরেই রাজনৈতিক মাঠে প্রতিরোধলড়াইয়ের কৌশল আমাদের আছে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপি রাজপথে নামারষড়যন্ত্রশুরু করতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজপথেও বিএনপিকে প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সে লক্ষ্যেই দলটি কাজ করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, সরকার সংবিধানকে সমুন্নত রেখে এগিয়ে চলছে। আর নির্বাচন পরিচালনা আওয়ামী লীগ করে না, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনের শরিক দল হিসেবে, নির্বাচনে বিশ্বাসী একটি দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত নির্বাচনে অংশ নেয় মাত্র। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু হয়েছে এবং হবে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে অংশ নেবে।

নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন তোলার প্রসঙ্গে নানক বলেন, বিএনপি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন চায়? বিএনপিজামায়াত জোট প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। এটি তাদের একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার অংশ। তারা এখন হতাশার সাগরে নিমজ্জিত। তারা ক্ষমতার জন্য তারা উন্মাদ হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার মধ্যেই তাদের জন্ম। সেই অভ্যাসের ছন্দপতন ঘটানোর কারণে তারা এখন উন্মাদনায় ভুগছে। কিন্তু আগামী নির্বাচন সংবিধান মেনেই হবে।

দীর্ঘ দিন ধরেই রাজনীতির মাঠে প্রত্যক্ষ উপস্থিতি নেই বিএনপির। নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন বা অন্য ইস্যুতে দলটি রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুললে আওয়ামী লীগ কী করবেএমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, গণতন্ত্র মানে শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করা নয়, গণতন্ত্র হলো উন্নয়নের রক্ষাকবচ। কাজেই সেই শান্তি উন্নয়নের ব্যাঘাত ঘটিয়ে কোনো আন্দোলন হলে তা গণতন্ত্রের পক্ষের কেউ মেনে নেবে না। তারা যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে, সেই আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাব। কিন্তু শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করে আন্দোলন করতে চয়, তাহলে আমরা দল হিসেবে তাদের প্রতিহত করব।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে জিততে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?— জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) একটি কথা বলে থাকেনদলের নেতৃত্বে এমন নেতাদের ওপর থাকতে হবে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সাংগঠনিক দক্ষতা রয়েছে। এমন ব্যক্তিদেরই দলে নিয়ে আসতে হবে। তাহলেই জনগণ দলটির প্রতি আস্থাশীল হবে। ভালো মানুষকে এখনো মানুষ গ্রহণ করে। সৎ মানুষকে এখনো মানুষ গ্রহণ করে। সেটি প্রমাণিত সত্য। কাজেই আমরা সেভাবেই দলকে ঢেলে সাজাতে চাই। আমরা সবাই নেত্রীর বার্তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছি। বার্তা বুঝেই সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করব।

ক্ষেত্রে কোথাও কোনো নেতার একাধিপত্য থাকলে সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের নীতিও নিয়েছে দলটি।

নানক বলেন, ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়াটা শুভ লক্ষণ নয়। দল অর্থ সমষ্টিঅনেককে নিয়ে, বহুসংখ্যক মানুষকে নিয়ে দল। সেই দলে একাধিপত্যের সুযোগ নেই। আমরা বলতে পারিসাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পর্যায়ের উপনির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে মনোনয়ন আওয়ামী লীগ দিয়েছে তা থেকেই এটি স্পষ্টসৎ, যোগ্য দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দল হিসেবে সবসময়েই নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকে। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। জনগণের আশাআকাঙ্ক্ষা নিয়েই আমাদের কাজ। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক, জনগণের জনমত প্রতিফলিত হোক এমন নির্বাচনই আমরা চাই। এমন গণমুখী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই এই দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে উন্নয়ন অগ্রগতির জন্যই আওয়ামী লীগ কাজ করে। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি এবং আমাদের দলকে তৃণমূল থেকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আরও আগেই আমাদের দলকে গুছিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সেই প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন করোনা সংক্রমণের হার কমছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) নির্দেশনায় আমরা দলকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল থেকে সব পর্যায় ঢেলে সাজাব। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে, নৌকার পক্ষে যেন গণজোয়ার তৈরি হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলাথানাপৌরসভা, জেলামহানগর সম্মেলন করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের জনমতের প্রতিফলন নৌকার বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, একটি নির্বাচনে জয়ের পেছনে কিছু কারণ থাকে। প্রথমত দলের নির্বাচনি ইশতেহার বা কর্মসূচি, দ্বিতীয়ত প্রার্থী, তৃতীয়ত ঐক্যবদ্ধতা। এই তিনটি জিনিসের সমন্বয় হলে নির্বাচনে জয়লাভ হওয়া সুনিশ্চিত। নেত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা, আমাদের প্রার্থীর যাচাইবাছাই ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা এবং দল সুসংঠিত করাএই তিনটি জিনিসের ওপর ভর করে আমরা নির্বাচনে জিততে চাই। আমরা মনে করি, যেকোনো জোটই নির্বাচনে আসুক না কেন, আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের অধিক আসনে জয়লাভ করবে।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন