বিজ্ঞাপন

মামলা না নেওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরলেন ইভানার ৮০ বছর বয়সী বাবা

September 25, 2021 | 4:16 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বুক ভরা আশা নিয়ে ভাতিজা, আইনজীবী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে থানায় হাজির হয়েছিলেন মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। থানার অপারেশন অফিসার, ইনভেস্টিগেশন অফিসার, অফিসার ইনচার্জ, সহকারী কমিশনার এবং সবশেষ অতিরিক্ত উপকমিশনারের সঙ্গে দফায় দফায় বসেও মামলা রেকর্ড হলো না। অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরে যান ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্কলাসটিকার কর্মকর্তা মৃত ইভানা লায়লা চৌধুরীর ৮০ বছর বয়সী বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেনকে সাথে নিয়ে ডিএমপির শাহবাগ থানায় যান। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন দুই ভাতিজা।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) না থাকায় প্রথমে পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) কামরুজ্জামানের কক্ষে অভিযোগ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইভানার বাবার দেওয়া মামলার আবেদন গ্রহণ করেন অপারেশন কর্মকর্তা।

এরপর তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলে বিষয়টি জানানো হবে। এরপর তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপেক্ষায় থাকেন। রাত ৮টার দিকে থানায় আসেন পরিদর্শক (তদন্ত)। এরপর তার কক্ষে আবেদনটি দেন এবং বিস্তারিত বলেন। তিনি বলেন, ‘ওসি স্যার আসছেন আপনারা অপেক্ষা করেন।’ রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওসি আসেন। তিনি সব শুনে বলেন, ‘এ ঘটনায় আগের মামলা আছে। সে মামলার তদন্ত করা হবে। এখন নতুন করে মামলা নেওয়ার সুযোগ নেই।’

বিজ্ঞাপন

এরপর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে থানায় উপস্থিত হন রমনা জোনের সহকারী কমিশনার। তিনিও বাবার দেওয়া মামলার আবেদন দেখেন এবং আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন।

তিনিও বলেন, ‘মামলা নেওয়া সম্ভব নয়।’ সবশেষ থানায় উপস্থিত হন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুনুর রশিদ। তিনি মামলার আবেদন দেখেন। এরপর বলেন, ‘বাবার করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে মামলা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগে বারবার বলা হয়েছিল তবুও কেন এলেন না? কেন মামলা করলেন না? এখন অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে সেটিই তদন্ত হবে।’ ওই পুলিশ কর্মকর্তার কথা শুনে তারা থানা থেকে বের হয়ে যান।

থানা থেকে বের হয়ে আইনজীবী সরোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওনারা যেটি বলছেন, তাতে হতে পারে না। ক্রিমিনাল মামলা ৩০ বছর পরও হওয়ার নজির রয়েছে। ওনারা বলছেন, অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে যোগ হবে আমাদের আবেদন। কিন্তু আইন বলছে, নিয়মিত মামলার সঙ্গে যুক্ত হবে অপমৃত্যুর মামলা। এখন পুলিশ যা ভালো মনে করে সেটিই মানতে হচ্ছে। আমরা আদালতে যাব তবে তার আগে পরিবার ও সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করব।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আর কী বলবো। নতুন করে কিছু বলার নেই। মামলা নেয়নি।’

এরপর তিনি আর কথা বলতে পারেননি। তিনি পড়ে যাচ্ছিলেন। কথা বলতে গিয়ে মুখ জড়িয়ে যাচ্ছিল। কথা আটকে আসছিল। এক পর্যায়ে তাকে আইনজীবী ও ভাতিজা ধরে গাড়িতে বসান।

ইভানার চাচাত ভাই বলেন, ‘চাচার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তিনি ২০০৩ সালে সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে অবসরে যান। তিনি অসুস্থ ছিলেন এমনতিতেই। তার ওপর মেয়ের মৃত্যু তাকে আরও বেশি মানসিক ভোগান্তিতে ফেলেছে। তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেন না। আসলে তিনি হতাশ। এতদিন পুলিশ বলল, বাবা বা পরিবার কেন মামলা করছে না, অথচ আজ বাবা মামলা করতে এলেও তার মামলা নেওয়া হলো না।’

জানতে চাইলে রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ইভানার বাবার দেওয়া মামলার আবেদন আমরা নিয়েছি। এটি অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে অ্যাড করে তদন্ত করা হবে। তদন্তে আত্মপ্ররোচনার জনিত কোনো উপাদান পাওয়া যায় তবে সেটি নিয়মিত মামলা হিসেবে চার্জশিট দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

শাহবাগ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ইভানার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হওয়া না হওয়া নিয়ে দোটানায় পড়েছে পুলিশ। ওপর মহলে ইভানার স্বামী ও শ্বশুর তদবির করছেন, থানায় যেন মামলা না হয়। অন্যদিকে আইনজীবী ও তার বাবা মামলা করতে থানায় আসছেন। বিষয়টি আসলে আমাদের হাতে নেই।’

‘তবে মামলা থানা না নিলেও আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে তাদের’ বলেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন
ইভানার মৃত্যুর দায় কার
অবশেষে মামলার সিদ্ধান্ত ইভানার পরিবারের
ইভানার জন্য বন্ধু-সহকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে থানায়
স্কলাসটিকা কর্মকর্তা ইভানার মৃত্যুর নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ইভানার মৃত্যুরহস্য: মামলা নিয়ে পরিবারের রহস্যময় আচরণ
ইভানাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে কথা বলতেন রুম্মান
ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আবেদন
ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আইনজীবীরা

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন