বিজ্ঞাপন

পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি: এনটিসিবি’র চেয়ারম্যানকে তলব

September 26, 2021 | 5:38 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতিসহ কয়েকশ ভুল-ত্রুটি ধরা পড়ায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) চেয়ারম্যান ও সদস্যকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে ভুলগুলো প্রকাশে অবহেলা ও দায়িহীনতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া এই ভুলগুলো সংশোধনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ডেমরার অভিভাবক মো. আলমগীর আলমের দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আলী মোস্তফা খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

বিজ্ঞাপন

আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে আইনজীবী আলী মোস্তফা খান বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে ভুলগুলো প্রকাশে অবহেলা ও দায়িহীনতাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই ভুলগুলো সংশোধনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা ও জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ও বোর্ডের কারিকুলাম কমিটির সদস্যকে আগামী ১০ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষে এসব ভুল সংশোধন না হলে আবারও শিক্ষার্থীদের হাতে ভুল-ত্রুটিযুক্ত বই চলে যাবে। তাই হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করা হয়েছে।’

রিটে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ভুল তথ্য সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করা হয়েছে বলে আবেদনে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রিট আবেদনে কয়েকশ ভুল-ত্রুটিগুলো উল্লেখ করে তালিকা দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো- নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৭৪ পৃষ্ঠায় ৯ নম্বর লাইনে লেখা আছে দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু হবে আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৮৭ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানকে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে। একই বইয়ের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের লাইনটিও ভুল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ২৯ পৃষ্ঠায় বঙ্গভবনকে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ভবন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল পাঁচ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সংবিধানের কোথাও আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের উল্লেখ নেই।

সপ্তম শ্রেণির সপ্তবর্ণা পাঠ্যবইয়ের একটি অংশে লেখা হয়েছে, জাতীয় চার নেতার ছবিসহ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে; সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের অন্যতম ‘শীর্ষ নেতা’। সঠিক তথ্য হবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে- আওয়ামী লীগের একজন ‘শীর্ষ নেতা’। প্রকৃতপক্ষে তিনি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আবুল হাসান মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগের একজন ‘শীর্ষ নেতা’। সঠিক তথ্য হলো- তিনি তৎকালীন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় অধ্যায়ের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি’ শিরোনাম অংশে লেখা হয়েছে (পৃষ্ঠা-৩)-এই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এক সাহসী, ত্যাগী ও দূরদর্শী নেতার ‘আবির্ভাব’ হয়। অথচ প্রকৃত সত্য এই যে, বঙ্গবন্ধু হঠাৎ কোনো আবির্ভূত নেতা নন। তিনি তিলে তিলে বাঙালি জাতির নেতা হয়ে উঠেছেন।

বিজ্ঞাপন

এমন অসংখ্য ভুল সংশোধন করতে অনেক অভিভাবক এনসিটিবিকে চিঠি দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দারস্থ হন এক অভিভাবক।

শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল) বিপুল বাগমার বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ত্রুটি প্রকাশকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। এনটিসিবির চেয়ারম্যান এবং সদস্যকে আগামী ১০ নভেম্বর আদালতে তলব করা হয়েছে।’

ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন আদালত।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন