বিজ্ঞাপন

যমুনার ভাঙনে বিলীন স্কুল, বিপাকে ফুলছড়ির ২৭৯ শিক্ষার্থী

September 28, 2021 | 9:25 am

গোপাল মোহন্ত, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গাইবান্ধা: যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে গত ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হলেও ওই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২৭৯ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে উত্তর ঝানঝাইর অথবা পুর্বচর গজারিয়াতে স্কুলটি স্থাপন করার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা অফিসার বরাবরে আবেদন করেছে অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা মৌজার ভোটার বর্তমানে উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে বসবাসকারী মৃত জমশের আলী ভুঁইয়ার ছেলে মো. শামছুল হক ভুঁইয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে রাতের আঁধারে গত ১ সেপ্টেম্বর উত্তর ঝানঝাইর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে চর রতনপুর মৌজায় জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ফাঁকা স্থানে কোনোরকমে একটি টিনের ছাপড়া তুলে ক্লাস নেওয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো শিক্ষার্থী নেই। ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ ৪ জন শিক্ষক বসে আছেন। একজন শিক্ষক পিটিআইতে আছেন। যে এলাকায় স্কুল স্থানান্তর করা হয়েছে সেখানকার কোন ছাত্র/ছাত্রী নেই। জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি বিদ্যালয়ের ২৭৯ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়ে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে ক্লাস করতে আসতে পারছে না।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ববিতা আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনা ও বন্যার কারণে স্কুল বন্ধ ছিলো। ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার ঘোষণায় খুশি হয়েছিলাম। কিন্ত স্কুল খোলার দিন স্কুলে এসে দেখি আমাদের গ্রামে আর স্কুল নেই। বাবাকে স্কুলের কথা জিজ্ঞেস করতে বাবা বলেন, তোদের স্কুল রতনপুরে নিয়ে গেছে। আর স্কুলে যেতে হবে না।’

বিজ্ঞাপন

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্কুল নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্কুলের জিনিসপত্র পশ্চিম ঝানঝাইরে রাখা ছিল। কিন্তু আমরা পরে জানতে পারি আমাদের স্কুল অনেক দূরের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা কিভাবে দূরের স্কুলে যাতায়াত করবো?’

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শরিফা আক্তারের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু স্বার্থন্বেষী মহল সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. কামরুজ্জামানের যোগসাজসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের অজান্তে নদীর অপর প্রান্তে ৩ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ের মালামাল আসবাবপত্র ২নং উড়িয়া ইউনিয়নের চর রতনপুরে স্থানান্তর করা হয়।’

অভিভাবক দুদু মিয়া জানান, মো. শামছুল হক ভুঁইয়া জিয়াডাঙ্গা মৌজার ভোটার। তিনি নদী ভাঙনের কারণে বসতবাড়ি গড়ে তুলেছেন উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই সহকারী শিক্ষা অফিসার গত ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ঝানঝাইরা থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে চর রতনপুর মৌজায় জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে। সেখানে এক কিলোমিটার মধ্যে দু’টি বিদ্যালয় রয়েছে। একটি চন্দনস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যটি আঙ্গারিদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিজ্ঞাপন

আবেদনকারী মো. শামছুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘রতনপুর নয়, মূলত জিয়াডাঙ্গা মৌজাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ২০১৭ সালে গলনা মৌজায় বিদ্যালয়টি গড়ে তোলা হয় এবং পুনরায় ভেঙে গেলে বর্তমানে জিয়াডাঙ্গা মৌজাটি পুনরায় চর ভরাট হওয়ায় পূর্বের স্থান জিয়াডাঙ্গা মৌজায় বিদ্যালয় স্থানান্তর করা হয়।’

আবেদনকারী পশ্চিম ঝানঝাইর গ্রামের বাসিন্দা ও অভিভাবক মো. শহিদ বলেন, ‘দক্ষিণ ঝানঝাইর মৌজা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ঠিক আছে। পশ্চিম ঝানঝাইর, উত্তর ঝানঝাইর ও ঝানঝাইরসংলগ্ন উত্তর চর গজারিয়াতে স্কুলটি স্থাপন করা যেত। এ অঞ্চলের ছাত্র/ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে উল্লেখিত তিন চরের যেকোনো একটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করলে ভর্তিকৃত ২৭৯ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতে পারতো।’

জিয়াডাঙ্গা কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘গত তিন মাস আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্যাচম্যান এলাকা দক্ষিণ ঝানঝাইর মৌজা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্কুল ঘর, চেয়ার-বেঞ্চসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হয় পশ্চিম ঝানঝাইরে। পশ্চিম ঝানঝাইরে না হলেও ঝানঝাইরসংলগ্ন পূর্ব চর গজারিয়াতে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা যেত। কোনো অদৃশ্য কারণে বিদ্যালয়টি ওই স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো তা আমার বোধ্যগম নয়।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. আকরাম হোসেন বলেন, “১৯৯১ সালে স্থাপন করা হয় বিদ্যালয়টি। তারপর থেকে চারচালা দু’টি টিনের ঘরে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহৃত ছিল। দুই-তিন মাস আগে বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় যমুনার ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টি অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হলেও কোনো ছাত্র/ছাত্রী স্কুলে আসে না। পূর্বের শিক্ষার্থীরা তিন কিলোমিটার পথ পেড়িয়ে এখানে আসবে না। সেজন্য ২৭৯ জন শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।”

ফুলছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘মো. শামছুল হক ভুঁইয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. কামরুজ্জামানের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের পরামর্শক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ওই স্থানে স্থানান্তর করা হয়। জিয়াডাঙ্গা মৌজায় কোনো জায়গা না থাকায় এটি করা হয়েছে।’

এখন ২৭৯ জন শিক্ষার্থীর জীবন অনিশ্চয়তার জানতে চাইলে তিনি জানান, আশপাশে আরও স্কুল আছে সেখানে তারা পড়ালেখা করবে।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন