বিজ্ঞাপন

এক টন আবর্জনা সরিয়ে ৭০ ফুট গভীর থেকে ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

September 28, 2021 | 11:47 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে নালায় পড়ে নিখোঁজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর লাশ ৪ ঘণ্টা ধরে তল্লাশির পর উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭০ ফুট গভীরে নালায় আবর্জনার মধ্যে আটকে ছিলেন ওই ছাত্রী। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের দু’টি ক্রেন দিয়ে প্রায় এক টন আবর্জনা অপসারণের পর মিলে তার নিষ্প্রাণ দেহ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ২টা ৫৫ মিনিটে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার।

এর আগে, সোমবার রাত ১০টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে জেক্স মার্কেটের সামনে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন ওই ছাত্রী। নিখোঁজ সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বাসা নগরীর হালিশহর থানার বড়পোল এলাকায় শুক্কুর মেম্বারের বাড়িতে। বাবা মোহাম্মদ আলী প্রবাসী, তবে বর্তমানে দেশে আছেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সেহেরীন সবার বড় ছিলেন।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেহেরীন তার মামা জাকির হোসেনের সঙ্গে আগ্রাবাদ শাহজালাল চশমা মার্কেটে চশমা কিনতে গিয়েছিলেন। ফুটপাতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় অসতর্কতাবশত নালায় পড়ে যান। তাকে বাঁচাতে মামা জাকির হোসেন নালায় লাফিয়ে পড়েন। তবে প্রবল স্রোতে দ্রুত ড্রেনের মধ্যে তলিয়ে যান সেহেরীন।

বিজ্ঞাপন


দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। ডুবুরি টিম প্রথমে নালায় নেমে তল্লাশি করে। কিন্তু সেহেরীনকে পাওয়া যায়নি। এরপর ক্রেন নিয়ে যাওয়া হয়। ক্রেন দিয়ে আবর্জনা অপসারণ শুরু হয়। একপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের আরেকটি ক্রেনও ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজে যোগ দেয়। ততক্ষণে ওই সড়ক এবং আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যায়। ফায়ার কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় তরুণরাও আবর্জনা অপসারণে যোগ দেন।

রাত ২টা ৫৫ মিনিটে সেহেরীনকে উদ্ধারের পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছ থেকে তাকে নিয়ে লোকজন স্থানীয় ইসলামিয়া হাসপাতালে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রামে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিখোঁজ

 

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার সারাবাংলাকে জানান, ফুটপাত ঘেঁষে সড়কে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, এর নিচে বড় নালা। কিন্তু নালার ওপর কোনো স্ল্যাব ছিল না। চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের কারণে ওই সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে পানি জমে নালার আকার ধারণ করেছে। স্ল্যাব না থাকায় বোঝার কোনো উপায় নেই যে, নালা নাকি গর্ত। সড়কেই প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত নালা কোনো ধরনের স্ল্যাব ছাড়া আছে।

‘সড়কের নিচে একটা নালা, প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত। আবার এর ভেতরে আরেকটা নালা পাওয়া যায়, সেটাও ৮ থেকে ১০ ফুট প্রশস্ত। সম্ভবত ৫০-৬০ বছর আগে সড়ক উঁচু করার সময় অপরিকল্পিতভাবে সেই নালা রেখেই আরেকটি নালা করা হয়। আগের সেই নালা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। কমপক্ষে সেখানে তিন টন আবর্জনা জমে আছে। অনেক চেষ্টা করেও ডুবুরি সেখানে যেতে পারেনি। সেটা আবার টার্ন নিয়েছে কর্ণফুলী নদীর দিকে দক্ষিণে। এরপর দুই ক্রেন মিলে আমরা সেই নালার স্ল্যাব উঠিয়ে এক টনের মতো আবর্জনা-মাটি অপসারণ করি। তখন আগের সেই নালার মধ্যে, কমপক্ষে সড়ক থেকে ৭০ ফুট গভীরে হবে, সেখানে আবর্জনায় আটকে আছে। সব মিলিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টার পর আমরা লাশ উদ্ধার করি।’

এর আগে, গত ২৫ আগস্ট বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমদ নামে এক সবজি বিক্রেতা। গত এক মাসেও তার হদিস মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন