বিজ্ঞাপন

সৌন্দর্য বর্ধনের পর দর্শনার্থী বাড়ছে দেশের প্রথম রেলস্টেশনে

September 29, 2021 | 9:16 am

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চুয়াডাঙ্গা: ১৮৭১ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ভারতের কলকাতা ও বাংলাদেশের গোয়ালন্দ রেল যোগাযোগ চালু করলে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনটি চালু হয়। বর্তমানে এটি আমদানি-রফতানির শুল্ক স্টেশন হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ স্টেশনের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করে এবং এটা ব্যবহার করে ভারত থেকে প্রতিদিনই ট্রেনের ওয়াগানে করে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানী করা হয়। ঐতিহাসিক এই স্টেশনটি আগে ছিল বেশ অপরিষ্কার। চারদিক ছিল ঝোঁপ জঙ্গলে ভরা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র একেবারে ভিন্ন। ঝকঝকে-তকতকে স্টেশনের চারদিকে সবুজ গাছপালায় ঘেরা আর রাতের বেলা ঝলমলে আলোয় আলোকিত।

বিজ্ঞাপন

দেশের প্রথম এই রেলস্টেশনটিতে এখন দারুণ পরিবেশ বিরাজ করছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বর্তমান স্টেশন সুপারিনডেন্ট মীর মো. লিয়াকত আলীসহ কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট স্টেশন সুপারিনডেন্ট এ স্টেশনে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশনের পরিবেশ পাল্টে যেতে শুরু করে।

সরেজমিনে দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের দু’পাশে প্লাটফর্মের ফাঁকা জায়গা টুকু সম্পূর্ণ কাজে লাগানো হয়েছে। প্রথমে তারা ফাঁকা অংশ টুকুতে ফুল বাগান করেন। কিন্তু বাগান পরিচর্যার জন্য জনবল ও ফুলের চারা কিনে বাগান টিকিয়ে রাখার সামর্থ না থাকায়, ফুল বাগানের বদলে সেখান আম, কাঁঠাল, বেল, নীম, দেবদারু, শিউলি ও বকুল ফুল গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। ফলজ গাছগুলোতে ফল ধরা শুরু হয়েছে। সবুজে ঘেরা গোটা স্টেশন পাখিদের কলতানে মুখরিত থাকে সব সময়। এ সয়ম একটি বানরকে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। অন্য রকম পরিবেশ বিরাজ করছে এ স্টেশনটিতে। দিনের বেশিভাগ সময়ই পরিচ্ছন্নকর্মীরা স্টেশনের প্লাটফর্ম ঝাড়ু পরিষ্কার করে রাখেন। কোনো প্রকার ময়লা-আবর্জনা জমতে দেন না। এই প্লাটফর্মে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ও সন্ধ্যায় স্থানীয় নারী-পুরুষ হাঁটতে আসেন। নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঘেরা এই মনোরম পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলে জানিয়েছেন তারা। তাছাড়া অনেকে নিরিবিলি সময় কাটাতেও এখানে আসেন।

বিজ্ঞাপন

দর্শনার এক রেলযাত্রী মাহফুজ উদ্দীন খান, পেশায় সাংবাদিক। তিনি বলেন, সারাদেশে রেলওয়ে স্টেশনগুলোতে দর্শনা স্টেশনের মতো পরিবেশ থাকলে যাত্রীরা রেল ভ্রমণে আরও আকৃষ্ট হবেন।

ঠিক একই রকম কথা বলেন আরেক যাত্রী এনজিও কর্মকর্তা কামরুজ্জামান যুদ্ধ। তিনি বলেন, এ রেলস্টেশনে প্রবেশ করলেই মনটা জুড়িয়ে যায়। কোনো প্রকার হট্টগোল বা ঠেলাঠেলি নেই। এখানে সবই সুন্দর পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে। এ রকম পরিবেশ অন্যান্য রেলস্টেশনে হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রেল ভ্রমণের প্রতি যাত্রীরা আরও বেশি আগ্রহী হবেন।

বিজ্ঞাপন

রেলস্টেশনে হাঁটতে আসা গৃহবধূ রিনা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। দর্শনাতে তো আরও হাঁটার জায়গা আছে, সেখানে না গিয়ে এখানে কেন এসেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রেলস্টেশনটি নারীদের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। তাছাড়া এখানকার সবুজ গাছপালা বেষ্টিত পরিবেশে বেশ স্বচ্ছন্দবোধ করি। সে জন্যই এখানে আসি।

দর্শনা রেলস্টেশনের সুপারিনডেন্ট মীর মো. লিয়াকত আলী বলেন, ২০১৫ সালে এখানে যোগ দেওয়ার পর ঐতিহ্যবাহী এ রেলওয়ে স্টেশনটির পরিবেশ বেশ অপরিচ্ছন্ন ছিল। এখানকার চারপাশ খোলা ছিল। রাত হলেই স্টেশনটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যেত। বর্তমান পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। এখানকার কর্মচারীরা যথেষ্ট আন্তরিকতা ও সকলের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এ স্টেশনে প্রথম পর্যায়ে অনেক কিছুরই অভাব ছিল। সে কারণে এখানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিরাজ করত।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা স্টেশনের প্লাটফর্মের দু’পাশে ফাঁকা জায়গা চারদিকে ঘিরে ফুলের বাগান তৈরি করি। কিন্তু নানা কারণে সেটা আর ধরে রাখা যায়নি। পরে ওই স্থানে আমরা ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপন করি। এ স্টেশনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কেউ যেন স্টেশনটি নোংরা করতে না পারে সেদিকে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখি।

বিজ্ঞাপন

এই রেলস্টেশনের চারপাশে লাগানো গাছপালাগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতের পাখি বসে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। যখন দেখি ছায়া ঘেরা পরিবেশে মানুষ তাদের সারাদিনের কর্ম শেষ করে এখানে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে, তখন খুব ভালো লাগে। আমাদের মত অন্য রেলস্টেশনগুলোও এটাকে অনুকরণ করলে রেলের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ আরও বাড়বে- বলেন মীর মো. লিয়াকত আলী।

সারাবাংলা/এনএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন