বিজ্ঞাপন

‘দুঃসময়ে’ আ.লীগের মেয়রের পাশে বিএনপির সাবেক মেয়র

September 30, 2021 | 8:18 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উন্মুক্ত নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। অবশ্য মনজুর এখন আর বিএনপির সঙ্গে নেই, আগের দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেই তার মিত্রতা বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মনজুর আলম। সঙ্গে নিয়ে যান উন্মুক্ত নালা-নর্দমার ওপর বসানোর জন্য ট্রাক বোঝাই করে শ’খানেক স্ল্যাব।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে জেক্স মার্কেটের সামনে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সেহেরীন মাহবুব সাদিয়া (১৯)। তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বাসা নগরীর হালিশহর থানার বড়পোল এলাকায়। চার ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৩টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্যরা নালা থেকে সেহেরীনের লাশ উদ্ধার করেন।

পরদিন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দুর্ঘটনার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিডিএ’র পাশাপাশি চসিক মেয়রেরও সমালোচনা চলছে।
এর আগে, গত ২৫ আগস্ট বৃষ্টির মধ্যে নগরীর মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমদ নামে এক সবজি বিক্রেতা। গত এক মাসেও তার খোঁজ মেলেনি। এ পরিস্থিতিতে মেয়র রেজাউল করিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান মনজুর আলম।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এম মনজুর আলমের সহযোগিতা পেয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতেও সিটি করপোরেশনসহ নগরবাসীর পাশে থাকার অনুরোধ করেছেন। এ সময় তারা প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলেন। সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম, মোস্তফা হাকিম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির চৌধুরী, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক, উপ-প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম প্রমুখ।

জানতে চাইলে এম মনজুর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র সাহেব আমাকে ডাকেননি। আমি নিজেই উনার অ্যাপয়নমেন্ট নিয়ে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। নালা-নর্দমায় পড়ে মানুষ মরছে, এই শহরের একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে তো আমার দায়িত্ব আছে। আমি মেয়র সাহেবকে সিডিএর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছি। নালা-নর্দমায় পড়ে মানুষের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছি। অনেক জায়গায় সড়ক বাতি নেই, অন্ধকার হয়ে যায় সন্ধ্যার পর। সড়ক বাতি লাগাতে বলেছি।’

বিজ্ঞাপন

স্ল্যাব দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক ট্রাক স্ল্যাব দিয়েছি। ১০০টির মতো হবে। এগুলো ফাইবারের স্ল্যাব। খুবই উন্নতমানের। উন্মুক্ত নালার ওপর বসাতে বলেছি। আমার কারখানার জন্য স্ল্যাবগুলো নেওয়া হচ্ছিল। পরে ভাবলাম, নালা-নর্দমায় পড়ে মানুষ মরছে, সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দিই, মানুষের উপকার হবে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।

১১ বছর আগে তিনবারের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চসিকের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন এম মনজুর আলম, যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মহিউদ্দিনের ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সমর্থনে কয়েকবার নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১০ সালে বিএনপিতে যোগ দেন মনজুর। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদও পেয়েছিলেন।

২০১৫ সালে বিএনপি থেকে আবারও প্রার্থী হয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে পরাজিত হন। গোলযোগপূর্ণ সেই নির্বাচনের মাঝপথে মনজুর ভোট বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দেন। মাঝে কিছুদিন নীরব থাকলেও পরে আবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বিফল হন। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন। তবে গণভবনে সাক্ষাৎকারে যাননি মনজুর।

বিজ্ঞাপন

চসিক নির্বাচনের আগে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর উত্তর কাট্টলীতে মনজুরের বাড়িতে গিয়ে নির্বাচনে সহযোগিতা চান আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। শুধু নির্বাচন নয়, বিজয়ী হয়ে মেয়র হতে পারলে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও মনজুরের সহযোগিতা চেয়েছিলেন তিনি।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে দুইবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের ভাতিজা।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন