বিজ্ঞাপন

চসিকের এক ওয়ার্ডে উপনির্বাচন, শঙ্কা নগরজুড়ে

October 6, 2021 | 9:23 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। একটি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ২১ জন, যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৮ জন, বিএনপির একজন এবং বাকি দু’জন স্বতন্ত্র। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত দু’জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে। তারা প্রার্থী হওয়ায় এ নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন খোদ অন্যান্য প্রার্থী ও ভোটাররা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (০৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন চারটি কেন্দ্রে গোলযোগের আশঙ্কায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ, কাজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

চকবাজার ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ২১৬ জন এবং নারী ভোটার ১৫ হাজার ৮২৫ জন। ভোটকেন্দ্র ১৫টি। ৮৬টি বুথে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন জানিয়েছেন, সব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে ছয়জন অস্ত্রসহ পুলিশ, দুজন অস্ত্রসহ আনসার এবং ১০ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এর মধ্যে নারী পুলিশ থাকবে চারজন। এ ছাড়া ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং একজন বিচারিক হাকিম নিয়োজিত থাকবেন। পুলিশ ও র‍্যাবের টহল দল থাকবে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে। কঠোর নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দু’দিন আগে থেকে মোট চারদিনের জন্য আইনশঙ্খলা বাহিনী মেতায়েন আছে। কেন্দ্রে নির্দেশিত ফোর্সের বেশি প্রয়োজন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা তা নিয়োগ করতে পারবেন বলে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।’

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিনটু। চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পর্যন্ত- তিনি ছিলেন সাতবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ওই ওয়ার্ডে সাবেক বামপন্থী রাজনীতিক থেকে পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া মিন্টু কোনোদিন ভোটে হারেননি। গত ১৮ মার্চ তিনি মারা যান।

প্রয়াত সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিনটুর স্ত্রী মেহেরুন্নিসা খানম উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৮ প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা আছেন।

বিজ্ঞাপন

ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দু’জন মনোনয়ন পত্র দাখিলের কারণে চকবাজার ওয়ার্ডের এই উপ-নির্বাচন আরও বেশি আলোচনায় এসেছে, যে আলোচনায় ভয় আর আতঙ্কও আছে। এরা হলেন- আবদুর রউফ ও নুর মোস্তফা টিনু।

নুর মোস্তফা টিনুর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা ও হত্যচেষ্টাসহ থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করলেও সংগঠনটির কোনো পদে নেই টিনু। একসময় সাবেক এক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চলতেন। সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা উপমন্ত্রী হওয়ার পর তার বলয়ে ভেড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় বারবার সংঘাতে নাম এসেছে টিনুর। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় অস্ত্রসহ। পরে জামিন পেলেও কয়েকমাস আগে আবার জেলে যান।

অন্যদিকে আবদুর রউফ চকবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধরণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী রউফের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং লালনসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ আছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান আবদুর রউফ। দুইবছর আগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের একজন সহ-সভাপতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে একটি দলের সমর্থক ১৮ জন প্রার্থী হওয়া সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার পরিচয়। দু’জন সন্ত্রাসীও প্রার্থী হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ হবে সন্ত্রাসীদের অনুসারীদের কঠোরভাবে দমন করে সুষ্ঠুভাবে ভোট নেওয়া। এতে দলের ভাবমূর্তি বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। সন্ধ্যার পর থেকে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে কয়েক দফা টহল দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন ভোটকেন্দ্র দখল বা জালিয়াতির দুঃস্বপ্ন না দেখে সেই অনুরোধ করেছি। প্রার্থী হোক, ভোটার হোক- আইনের মধ্যে থাকলে সালাম জানাব। আইনের বাইরে গেলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন