বিজ্ঞাপন

হয়রানির অভিযোগ তুলে সভায় ‘তেড়ে গেলেন’ আবেদনকারী!

October 11, 2021 | 10:59 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে নাম সংশোধন কমিটির সভায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ধর্মান্তরিত এক যুবক নাম সংশোধনের আবেদন করে হয়রানির শিকার হচ্ছেন— এমন অভিযোগ তুলে চড়াও হন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কমিটির সদস্যদের ওপর। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বোর্ডের সচিব।

বিজ্ঞাপন

তবে অভিযুক্ত যুবকের দাবি, অনলাইনে নাম সংশোধনের জন্য বোর্ডের উপ-সচিব বেলাল হোসেন তার কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। সেই টাকা না দিয়ে তিনি ম্যানুয়ালি আবেদন করায় শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা তাকে হয়রানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে বোর্ডে তার নাম সংশোধনের আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ জানালে নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে তাকে মারধর করা হয়।

এদিকে শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুবকের মা-বাবার লিখিত আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এবং এ সংক্রান্ত বিধিবিধানের বিপরীত হওয়ায় তার আবেদন নেওয়া হয়নি।

সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে নাম ও বয়স সংশোধন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী। পদাধিকার বলে তিনি কমিটিরও চেয়ারম্যান।

বিজ্ঞাপন

আর অভিযুক্ত যুবকের নাম মান্দি ডি কস্টা। তিনি নগরীর হালিশহরের মেহের আফজল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের প্রধান কার্যালয়ে নিউজরুম এডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন।

তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব আব্দুল আলীম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেছেন। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, আবেদনের হলফনামায় তথ্যগত বিভ্রান্তি থাকায় হলফনামা সংশোধন করে দাখিলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবেদনকারী কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের গালাগাল শুরু করেন। এক পর্যায়ে মারমুখী ভঙ্গিমায় তেড়ে যান। এ অবস্থায় বোর্ডের সেকশন অফিসার আবু তাহের মো. নিজামী এবং আনসার সদস্য মো. ইব্রাহিম বাধা দিলে তাদের ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ১২ জনের কমিটি বৈঠকে বসেছিলাম। ছেলেটি তার আবেদনে লিখেছে, তার মা-বাবা নেই, সে আশ্রিত। অথচ তার মা-বাবা এসে নাম সংশোধনের ওপর আপত্তি দিয়ে জানিয়েছেন, তাদের ছেলে মেন্টালি শকড। তার চিকিৎসা চলছে। এ অবস্থায় আমরা ওই আবেদন ও হলফনামা গ্রহণ করতে পারি না। সেটা বলার পর ছেলেটি এমন ঔদ্ধর্ত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে, আমরা হতবাক হয়ে যাই। তাকে ধরতে গেলে সে পালিয়ে যায়। এরপর শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে মান্দি ডি কস্টা সারাবাংলাকে জানান, দেড়মাস আগে নাম সংশোধনের বিষয়ে উপ-সচিব বেলাল হোসেনের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। তিনি মান্দিকে অনলাইনে আবেদনের কথা বলে ১৫ হাজার টাকা দিতে বলেন। কিন্তু মান্দি জানান, এত টাকা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি ম্যানুয়ালি করবেন। এতে খরচ হবে মাত্র ১ হাজার ৬০০ টাকা। সপ্তাহ দু’য়েক আগে এসে তিনি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলে তিনি সবকিছু শুনে হলফনামাসহ আবেদন করার পরামর্শ দেন।

নিয়ম অনুযায়ী, মান্দি মেহের আফজল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে যান অনুমোদনের জন্য। কিন্তু প্রধান শিক্ষক জানান, উপ-সচিব তাকে অনুমোদন দিতে নিষেধ করেছেন। অবশ্য পরে প্রধান শিক্ষক অনুমোদন দেন। তিনি হলফনামাসহ আবেদনও জমা দেন। এরপর গত শনিবার তাকে শিক্ষাবোর্ড থেকে ফোন করে সোমবার কমিটির সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

মান্দি ডি কস্টা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (সোমবার) কমিটির সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পর আমাকে পদে পদে হয়রানি শুরু হয়। সবার আগে আবেদন জমা দিলেও সভায় আমার আবেদনপত্র তোলা হয় সবার শেষে। আমাকে বসিয়ে রেখে মানসিক চাপ তৈরি করা হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এক পর্যায়ে আমার আবেদন তোলা হয়। সেখানে আমার বাবা-মায়ের বিষয়ে তারা কথা বলতে শুরু করেন। আমার ধর্মান্তরিত হওয়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য শুরু করেন।’

‘আমি প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান আমাকে বেয়াদব বলে শাসাতে থাকেন। আমি বলি, আপনি আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। উনার নির্দেশে নিরাপত্তাকর্মীরা আমার ব্যাগ ছিঁড়ে আমাকে টেনে-হিচড়ে বোর্ড থেকে বের করে দেন। আমি বুঝতে পেরেছি, উপ-সচিবকে টাকা না দেওয়ায় আমাকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে’— বলেন মান্দি ডি কস্টা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের উপ-সচিব বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাকে (মান্দি) আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। আমি কেন টাকা চাইব, প্রশ্নই আসে না। আমি আইন অনুযায়ী তাকে পরামর্শ দিয়েছি। নাম সংশোধন করবেন চেয়ারম্যান স্যার, কমিটির সদস্যরা। এখানে আমার তো করার কিছু নেই। সে বোর্ডে এসে একটা ঘটনা ঘটিয়েছে। চেয়ারম্যান স্যারের দিকে ফাইল ছুঁড়ে মেরেছেন। এখন দোষ আড়াল করতে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’

এদিকে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে একটি জিডি পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন