বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে শতাধিক মানুষের কিডনি বিক্রি!

October 12, 2021 | 7:44 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচার সংঘবদ্ধ এক চক্রকে শনাক্ত করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)। র‌্যাব জানিয়েছে, চক্রটি এরই মধ্যে শতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে। চক্রের সদস্যরা একেকটি কিডনি দুই লাখ টাকায় কিনে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করত। একই চক্রের অন্য সদস্যরা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য গ্রহীতার কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিত।

বিজ্ঞাপন

অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজটির অ্যাডমিন মো. শাহরিয়ার ইমরানসহ পাঁচ সদস্যকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। অভিযানে ভুক্তভোগী কিডনিদাতাদের চারটি পাসপোর্ট ছাড়াও ভিসা সংক্রান্ত বেশকিছু কাগজপত্র এবং পাঁচটি মোবাইল ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে এই চক্রটি জড়িত। এই চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে শত শত মানুষ প্রতারিত হয়েছে। আর অর্থের লোভে এই চক্রের সদস্যরা আইন বহির্ভূত ও স্পর্শকাতর এই অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

অবৈধভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যরা

র‌্যাব কমান্ডার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে অবৈধ কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গ বেচাকেনার কিছু সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। র‌্যাব দেখতে পায়, সিন্ডিকেট সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও দাতাদের আকৃষ্ট করছে এবং নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে। ফলে র‌্যাবও নজরদারি বাড়াতে শুরু করে। একপর্যায়ে চক্রটিকে শনাক্ত করে তাদের অবস্থানও বের করতে সমর্থ হয় র‌্যাব।

বিজ্ঞাপন

এর ধারাবাহিকতায় সোমবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টা থেকে শুরু করে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল৮টা পর্যন্ত র‌্যাব-৫, র‌্যাব-২ ও র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে জয়পুরহাট এবং রাজধানীর নর্দা থেকে কিডনি কেনাবেচার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদসহ (৩৬) তার সহযোগী মো. মেহেদী হাসান (২৪), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. আব্দুল মান্নান (৪৫) ও মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজুকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব পরিচালক বলেন, এই চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ জন। তারা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধভাবে কিডনি বেচাকেনার কাজ করে আসছে। চক্রের সদস্যদের প্রথম ভাগটি ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন— এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। আর শেষ গ্রুপটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ভারতে পাঠাতে পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত।

চক্রটির কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, বিদেশি মুদ্রাসহ বিভিন্ন ধরনের জাল নথিপত্র

র‌্যাব জানাচ্ছে, এই চক্রের সঙ্গে দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ/অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি অবৈধভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগী কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করত। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে অগ্রিম দুই লাখ টাকা দিয়ে মোট তিন থেকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করত। কিন্তু কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন হয়ে গেলে তাদের আর কোনো টাকা-পয়সা নিয়ে উল্টো হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল চক্রটি। আর নিজেদের হাতিয়ে নেওয়া টাকার প্রমাণ না রাখতে তারা লেনদেনে কোনো ধরনের রিসিট বা কগজ ব্যবহার করত না।

গণমাধ্যমকে ব্রিফ করছেন র‌্যাব পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, চক্রের অন্যতম সদস্য মো. আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করে আসছিলেন। এর আগেও এই অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে।

এদিকে, গ্রেফতার চক্রের আরেক সদস্য মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু কাজ করতেন মান্নানের সহযোগী হিসেবে। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতার বাকি দুই সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ভারতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা ও অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে দিতেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন