বিজ্ঞাপন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ওরা ৮ জন

October 13, 2021 | 5:41 pm

শামিম হোসেন শিশির, নিউজরুম এডিটর

ক্রিকেট রসিকদের উন্মাদনা তুঙ্গে। হাল আমলের ক্রিকেটে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফরম্যাট টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপ যে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে ক’দিন বাদেই। বিশ্বকাপের খেলা শুরু হচ্ছে ১৭ অক্টোবর। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এরই মধ্যে মাঠে গড়িয়েছে অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ। এখন মূল আসরের দিন গুনছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

বিজ্ঞাপন

আফিফ হোসেন ধ্রুব, লিটন দাস, রিশভ পন্তদের মতো প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এই আসর নিঃসন্দেহে বিশেষ কিছু। নিজেদের প্রতিভার ছাপ রেখে শিরোনাম হতে চাইবেন নিশ্চয় এসব তরুণরা। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান, রোহিত শর্মা, ক্রিস গেইলদের মতো অভিজ্ঞরাও নিশ্চয় নিজেদের সবটুকু ঢেলে দিয়ে মনে রাখার মতো কিছু অর্জন রেখে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবেন। সাকিব-রোহিত, গেইলদের মধ্যে কারা সেটি পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এরকম আট জন ক্রিকেটার আছেন, যাদের বিশেষভাবেই মনে রেখেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ! আর মনে রাখবেই না বা কেন— এই আট ক্রিকেটারই যে বিগত ছয়টি আসরের প্রতিটিতেই ছিলেন সঙ্গী। শুধু তাই নয়, প্রথম আসরের ১৪ বছর পর অনুষ্ঠেয় এবারের আসরেও যে দলের ছায়া হয়ে থাকছেন তারা!

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালে। এরপর ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে সবশেষ ষষ্ঠ আসরটি। যে আট জনের কথা বলছি, তারা সেই ছয়টি আসরের প্রতিটিতেই অংশ নিয়েছেন। ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া সপ্তম আসরেও তারাই দলের অপরিহার্য অংশ।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হওয়া এই আট ক্রিকেটারের তিন জনই বাংলাদেশের। তারা হলেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। তামিম ইকবাল বিশ্বকাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে না নিলে সংখ্যাটি হতো চার। সেটি না হওয়ায় তালিকাটিও ৯ জনের বদলে আট জনে থমকে গেছে। সেখানে বাংলাদেশের তিন সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দিলে বাকি পাঁচ জনের মধ্যেও তিন জন ওয়েস্ট ইন্ডিজের— ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো ও রবি রামপাল। বাকি দু’জনের মধ্যে রয়েছেন ভারতের বিধ্বংসী ওপেনার রোহিত শর্মা আর পাকিস্তানের ‘মিস্টার প্রফেসার’ মোহাম্মদ হাফিজ।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

২০০৬ সালের নভেম্বরে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া সাকিব ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছেন বাঁহাতি স্পিনার এবং একটু-আধটু ব্যাটিং করতে পারেন— এমন ক্রিকেটার হিসেবে। সেই সাকিব গত এক দশক ধরে কেবল বাংলাদেশ নয়, ক্রিকেট বিশ্বেরই অন্যতম সেরা সম্পদে পরিণত হয়েছেন। দেড় দশকের ক্যারিয়ারের পর এখনো দলের সেরা বোলার এবং অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি। অন্যতম সেরা ফিল্ডারও সাকিব। বাংলাদেশের হয়ে বছরের পর বছর ধরে টানা দুর্দান্ত পারফর্ম করা সাকিব ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অনেক আগেই।

অভিষেকের পর থেকে পারফরম্যান্সনিত কারণে কখনোই দল থেকে বাদ না পড়া সাকিব ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে খেলেছেন সবকটি বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের সেরা ক্রিকেটার তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২৪টি ম্যাচ খেলা সাকিব ২৮.৩৫ গড়ে ৫৬৭ রান করা সাকিব বল হাতে নিয়েছেন ৬.৬৫ ইকোনোমিক রেটে ৩০ উইকেট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ৮৮ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন সাকিব। তাতে ১ হাজার ৭৬৩ রান করেছেন। বল হাতে ৮৮ ম্যাচে ১০৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সাকিবের চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক উইকেট আছে কেবল শ্রীলংকার সাবেক পেসার লাসিথ মালিঙ্গার।

মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)

মুশফিকেরও টি-টোয়েন্টি অভিষেক ২০০৬ সালের নভেম্বরে। ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে। সেই মুশফিকই গত কয়েক বছর ধরে দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটার। টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানটা অবশ্য খুব একটা উজ্জল না মুশির। তবে গত কয়েক বছরে সেই পরিসংখ্যানও পাল্টে দিচ্ছেন দারুণভাবে। উইকেট ধরে রেখে টি-টোয়েন্টির দাবি অনুযায়ী দ্রুত রান তোলায় দুর্দান্ত পারদর্শী অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। মুশফিকও প্রতিটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। বিশ্বকাপে ২০ ম্যাচ খেলে ১৬.১৩ গড়ে ২৫৮ রান করেছেন মুশি। উইকেটে পেছনে ডিসমিসাল করেছেন ১৯টি। এবার অবশ্য বিশ্বকাপে উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে দেখা না যাওয়ারই কথা মুশফিককে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কিপিং করার কথা নুরুল হাসান সোহানের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ৯১ টি-টোয়েন্টি খেলে ১৯.৭১ গড়ে ১ হাজার ৩২১ রান করেছেন মুশফিক।

বিজ্ঞাপন

মাহমুদউল্লাহ (বাংলাদেশ)

২০০৭ সালের বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারেই প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেন মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে পারফর্ম করতে পারেননি। মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ দলে মাহমুদউল্লাহকে নেওয়া হয়েছিল বিকল্প হিসেবে। সেই রিয়াদই এবার বাংলাদেশের অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে একাদশে বিবেচনায় অফ স্পিনার ভূমিকাটাই ছিল মুখ্য। সময়ের পালাবদলে রিয়াদ এখন নিয়মিত বোলিংই করেন না। আগে ব্যাটিং ভূমিকাটা ছিল দ্বিতীয়, কিন্তু এখন ব্যাটিংই তার প্রধান পরিচয়। ব্যাটিংয়ে দারুণ উন্নতি করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং এখন ‘ম্যাচ উইনিং’ হিসেবে ধরা হয়। প্রতিটি বিশ্বকাপ খেলা মাহমুদউল্লাহ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১৯টি-টোয়েন্টি খেলে ১৩.৮৫ গড়ে রান করেছেন ১৯৪। বোলিংয়ে উইকেট ৮টি। বাংলাদেশের হয়ে ১০২টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১ হাজার ৭৭১ রান করার পাশাপাশি ৩৩ উইকেট নিয়েছেন।

রোহিত শর্মা (ভারত)

২০০৭ সালের তরুণ রোহিত শর্মা ভারতের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছিলেন মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে। সময়ের পালাবদলে কয়েক বছর ধরে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে নিজেকে অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রোহিত। ভারতের হয়ে খেলেছেন প্রতিটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই। ২০০৭ সালের ফাইনলে ভারতের জয়ে মিডল অর্ডারে দারুণ এক ইনিংস খেলা রোহিত এবার দলের অন্যতম সেরা ভরসা। বিশ্বকাপে ২৫ ম্যাচ খেলে ৩৯.৫৯ গড়ে ৬৭৩ রান করেছেন রোহিত। ভারতের হয়ে সব মিলিয়ে ১১১টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৩২.৫৮ গড়ে ২ হাজার ৮৬৪ রান করেছেণ ডানহাতি ব্যাটার।

রোহিত শর্মা

বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)

৪০ পেরুনো মোহাম্মদ হাফিজ এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটারদের একজন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একজন অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন হাফিজ। সেই সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনারদের একজন ছিলেন তিনি, ব্যাটিংয়ে রানও করতেন নিয়মিত। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বারবার নিষেধাজ্ঞায় পড়া হাফিজ অনেক বছর ধরেই বোলিংয়ে অনিয়মিত। তবে এই বয়সেও ব্যাট হাতে এই ফরম্যাটে দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন। সবকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা হাফিজ এবারও পাকিস্তানের অন্যতম ভরসা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২২ ম্যাচ খেলে ২০.২২ গড়ে ৪২৬ রান করেছেন। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ১৩টি। পাকিস্তানের হয়ে সব মিলিয়ে ১১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২ হাজার ৪২৯ রান করেছেন। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ৬০টি।

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

টি-টোয়েন্টি সংস্করণের রাজা বলা হয় গেইলকে। এই সংস্করণের সবচেয়ে বেশি রান, সেঞ্চুরি, ছক্কাসহ ব্যাটিংয়ের বেশিরভাগ রেকর্ডই তার দখলে। একাই কত বার ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। ৪২ বছর বয়সী গেইল স্বাভাবিকভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবক’টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। বিশ্বকাপে ২৬ ম্যাচ খেলে ৪০ গড়ে ৯২০ রান করেছেন গেইল। খণ্ডকালীন বোলার হিসেবে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে মোট ৭৪টি-টোয়েন্টি খেলে ১ হাজার ৮৫৪ রান করেছেন গেইল। উইকেট নিয়েছেন ১৯টি।

ডোয়াইন ব্রাভো (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বছরের পর বছর ধরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দারুণ কার্যকার এক অলরাউন্ডার মনে করা ডোয়াইন ব্রাভোও সবকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা ক্রিকেটার হতে যাচ্ছেন। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার ডানহাতি মিডিয়াম পেসের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও দারুণ সামলান। অভিজ্ঞতা আর ফর্মে এবারের বিশ্বকাপেও তার দিকে তাকিয়ে থাকবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপে ২৪ ম্যাচ খেলে ২৪ গড়ে ৫০৪ রান করার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ২৫টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৮৬টি টি-টোয়েন্টি খেলে ১ হাজার ২৯২ রান এবং ৭৬ উইকেট নিয়েছেন ব্রাভো।

রবি রামপাল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

আগের প্রতিটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা রবি রামপালের এবারের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া বড় চমক। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সেই ২০১৫ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে এবারের বিশ্বকাপ দলে ডাকা হয় ৩৬ বছর বয়সী পেসারকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২৯ উইকেট নিয়েছেন রামপাল।

ভারতের আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের জনপ্রিয় স্যাটেলাইট চ্যানেল জিটিভি। এছাড়াও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে বিশ্বকাপের খেলা। অনলাইনে র‍্যাবিটহোলে খেলা দেখতে ব্রাউজ করুন https://www.rabbitholebd.com/

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন