বিজ্ঞাপন

বিশ্বকাপ এবার মিস করবে যাদের

October 14, 2021 | 10:14 pm

শামিম হোসেন শিশির, নিউজরুম এডিটর

ঘুরছে ঘড়ির কাঁটা। ক্রিকেটপ্রেমী কাঙ্ক্ষিত মহেন্দ্রক্ষণও ঘনিয়ে আসছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অপেক্ষা যে ফুরাতে চলল। বিশ্বমঞ্চে কোন দল সেরার তকমা জিতে নেবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার রঙ রাঙানোর সময়ও তাই এগিয়ে আসছে।

বিজ্ঞাপন

কেবল দল নয়, বিশ্বমঞ্চে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের। সাকিব, কোহলি, উইলিয়ামসন, বোল্ট, স্মিথ, রাবাদা, বাটলাররা ব্যাট-বলের জাদুতে মুগ্ধ করবেন— সেই ম্যাজিকের অপেক্ষাতেও রয়েছেন অনেকেই। বিশ্বকাপ এগিয়ে আসতে আসতে এসব নামের পাশে অবশ্য আরও কিছু নাম আলোচনায় আসতে আসতেই নস্টালজিক হয়ে পড়ছেন ভক্তরা। বিশ্বকাপের আসরে যে পদচারণা পড়বে না তাদের!

তামিম ইকবাল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বেন স্টোকস, সুনীল নারিন— টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে এই নামগুলোর সম্পর্ক যে গভীর। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ মাতানো ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও এই নামগুলো অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ আসরেই তারা অনুপস্থিত।

যাদের উপস্থিতি বিশ্বকাপের রঙ আরও বাড়িয়ে তুলত তাদের কেউ বয়সের কারণে, কেউ ইনজুরির কবলে পড়ে বিশ্বকাপের দল থেকে ছিটতে পড়েছেন। মহামারি করোনাও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের সামনে। বিশ্বকাপ খেলতে না পারা এমন পাঁচ তারকাকে নিয়ে এই আয়োজন—

বিজ্ঞাপন

তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)

তামিম ইকবালকে ছাড়া বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ— মাস দুই আগেও হয়তো এমন ভাবনা ছিল না কারও মনেই। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যে তামিমই ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের ‘আলটিমেট চয়েজ’। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান, বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। সেই তামিমের বিশ্বকাপযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইনজুরি। হাঁটুর পুরনো চোট জেগে ওঠায় জুলাইয়ের পর থেকেই ছিলেন ক্রিকেটের বাইরে। বিশ্বকাপের আগে চোট কাটিয়ে উঠলেও অনেকদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন বলে স্বেচ্ছায় বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আচমকা। ভক্তদের দাবি-অনুরোধ-মিনতিতেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি তামিম। ফলাফল, বিশ্বকাপের মঞ্চে নেই দেশসেরা ওপেনার।

এবার বিশ্বকাপ খেললে প্রতিটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা নবম ক্রিকেটার হতে পাতেন তামিম ইকবাল। কেননা, আগের প্রতিটি বিশ্বকাপেই দলে ছিলেন তিনি। ছয় আসরে ২৩ ম্যাচ খেলা তামিমের ২৪.৪৮ গড়ে সংগ্রহে রয়েছে ৫১৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে তার তথা বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিও বিশ্বকাপেই। বাংলাদেশের হয়ে ৭৮ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তামিম। তাতে ২৪.০৮ গড়ে রান করেছেন ১ হাজার ৭৫৮। তামিমের মতো একজন তারকাকে নিশ্চয় মিস করবে এবারের বিশ্বকাপ।

বিজ্ঞাপন

এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)

বিস্ফোরক ব্যাটিং দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম শীর্ষ তারকায় পরিণত হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সের আন্তর্জাতিক অধ্যায় শেষ হয়েছে সেই ২০১৭ সালেই। ‘পরিবারকে সময় দিতে চান’ বলে ফর্মে থাকা ডি ভিলিয়ার্স হঠাৎই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেন। তবে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ খেলে যাচ্ছিলেন দাপটের সঙ্গে। সেটাই ডি ভিলিয়ার্সের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভবনা সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে টি-টোয়েন্টি খেলতে থাকা ডি ভিলিয়ার্স দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছিলেন। ফলে অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরে তার বিশ্বকাপ খেলার শক্তিশালী গুঞ্জন ছিল। সাবেক দুই সতীর্থ গ্রায়েম স্মিথ ও মার্ক বাউচার দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের বড় দায়িত্বে বসলে ডি ভিলিয়ার্সের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার সম্ভবনা আরও বেড়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়াতে কিংবদন্তি ক্রিকেটারের নিজেরই বুঝি বিশ্বকাপ থেকে মন উঠে গেল!

গত মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেন, বিশ্বকাপ খেলার পরিকল্পনা থাকলেও সেটি আর আলোর মুখ দেখছে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর ফিরবেন না— সাফ জানিয়ে দেন ডি ভিলিয়ার্স। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩০ ম্যাচ খেলা ডি ভিলিয়ার্স ২৯ ম্যাচ খেলে ২৯.৮৮ গড়ে ৭১৭ রান করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে মোট ৭৮ ম্যাচ খেলে ২৬.১২ গড়ে ১ হাজার ৬৭২ রান করেন এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেওয়া ডি ভিলিয়ার্সের ব্যতিক্রমী শটগুলোকে এবার নিশ্চয় মিস করবে বিশ্বকাপ।

মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)

মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতের হয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলেছে বহু দিন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে ছিলেন ধোনি। তারপরও অবসর নিচ্ছিলেন না। তাতেই ধারণা হয়, আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার ভাবনাতেই হয়তো অবসরের ঘোষণা আসছে না ধোনির কাছ থেকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছিল, আইপিএলে ভালো পারফর্ম করতে পারলে ভারতের হয়ে আরেকটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে অবসরে যেতে চান ধোনি। এসব আলোচনার মধ্যেই করোনাভাইরাসের ভয়াবহ থাবা ধমকে দেয় বিশ্বকে। আইপিএল পিছিয়ে যায়, বিশ্বকাপও পিছিয়ে যায়। তাতে ধোনির বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের হয়ে খেলার বাইরে থাকার সময়ও বাড়ছিল। নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ধোনি। শোনা যাচ্ছিল, এতে ভারতীয় বোর্ডের ভূমিকাও ছিল! তবে করোনার কারণে বিশ্বকাপ পিছিয়ে না গেলে সম্ভবত আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা যেত ভারতকে একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জেতানো অধিনায়ক ধোনিকে।

বিজ্ঞাপন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৩৩ ম্যাচ খেলা ধোনি ব্যাটিং করেছেন ২৯ ম্যাচ। তাতে ৩৫.২৭ গড়ে রান করেছেন ৫২৯। সব মিলিয়ে ভারতের হয়ে ৯৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৩৬.৭০ গড়ে ১ হাজার ৬১৭ রান করেছেন ধোনি। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফিনিশার ধোনিকে এবার নিশ্চয় মিস করবে বিশ্বকাপ।

বেন স্টোকস (ইংল্যান্ড)

দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা, দুর্দান্ত বোলিং সামর্থ্য এবং অসাধারণ ফিল্ডিং— কমপ্লিট ক্রিকেটারদের তালিকায় বেন স্টোকসের নাম থাকবেই। বেশ আগে থেকেই সময়ের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার স্টিভেন স্মিথ একবার বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবেচেয় কার্যকার ক্রিকেটার স্টোকস। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অবিশ্বাস্যভাবে ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে এবং অ্যাশেজে হেডিংলি টেস্টে দলকে কাব্যিক এক জয় এনে দিয়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ‘হট কেক’ হতে পারতেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। কিন্তু স্টোকসকে দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে।

মানসিক অবসাদকে কারণ দেখিয়ে গত জুলাইয়ে ক্রিকেট থেকে সাময়িক অবসর নেন স্টোকস। মনে করা হচ্ছিল, বিরতি থেকে ফিরে আইপিএল ও বিশ্বকাপ খেলবেন। কিন্তু ফেরেননি ইংলিশ তারকা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্টোকস এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে ১৪ গড়ে রান করেছেন ৫৬টি। উইকেট নিয়েছেন ৪টি। ইংল্যান্ডের হয়ে সব মিলিয়ে ৩৪ টি-টোয়েন্টি খেলে ২০.০৯ গড়ে ৪৪২ রানের পাশাপাশি ১৯ উইকেট রয়েছে স্টোকসের ঝুলিতে।

গত বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে তাকে চার ছক্কা মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন কার্লস ব্রাথওয়েট। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকলে সেই ‘পাপমোচনে’র সুযোগটি পেতেন। স্টোকস সেই সুযোগ না দেওয়ায় বিশ্বকাপ তাকে মিস করবে বটে।

সুনীল নারিন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বারবার প্রশ্নবিদ্ধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া সুনীল নারিন নিজের সেরা সময়ে নাচিয়ে ছেড়েছেন বিশ্বের যেকোনো ব্যাটারকে। সেই নারিনের বোলিংয়ে ‘আগের ধার আর নেই’— এমন কথা গত দুই-তিন বছরে বলেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, নারিন যেন ‘সাধারণ’ বোলারে পরিণত হয়েছেন। নারিনের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সম্পর্কও বরাবরই সুবিধার নয়। ২০১৯ সালের পর থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতেও একাদশে জায়গা হারাচ্ছিলেন ক্যারিবিয়ান তারকা। কিন্তু গত সিপিএল ও এবারের আইপিএলে নারিন দেখা দিয়েছেন যেন সেই পুরনো রূপে! সিপিএলে ১২ উইকেট নিয়েছেন ওভারপ্রতি মাত্র ৪.৩৭ রান দিয়ে। আইপিএলের আরব আমিরাত পর্বে আট ম্যাচ খেলে ওভারপ্রতি ৬.১২ রান খরচায় উইকেট নিয়েছেন ১১টি। কম বাজেটের দল নিয়ে শুরুর দিকে পয়েন্ট টেবিলের নিচে থাকা কলকাতা নাইট রাইডার্স যে এবার আইপিএলের ফাইনালে উঠল, তাতে নারিনের অবদান বেশ বড়। সব কিছু মিলিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্কোয়াডে নারিনের প্রত্যাবর্তনের দিন গুনতে শুরু করেছিলেন অনেকেই।

না, যে ভেন্যুতে আইপিএল মাতাচ্ছেন, সেই ভেন্যুতেই অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ মাতানোর সুযোগটি পাচ্ছেন না নারিন। তাকে ছাড়াই দল ঘোষণা করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগে বিশ্বকাপে ১২ ম্যাচ খেলে ১৫ উইকেট নেওয়া নারিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৫১ টি-টোয়েন্টি খেলে উইকেট নিয়েছেন ৫২টি। পাশাপাশি ১০.৩৩ গড়ে রান করেছেন ১৫৫। আইপিএলে যেভাবে ঝলক দেখাচ্ছেন, সেই ঘূর্ণির ঝলক নিশ্চয় মিস করবে এবারের বিশ্বকাপ।

ভারতের আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের জনপ্রিয় স্যাটেলাইট চ্যানেল জিটিভি। এছাড়াও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে বিশ্বকাপের খেলা। অনলাইনে র‍্যাবিটহোলে খেলা দেখতে ব্রাউজ করুন https://www.rabbitholebd.com/

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন