বিজ্ঞাপন

‘জনদৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাতে হামলা, মাঠে ১ লাখ পেইড পারসন’

October 17, 2021 | 1:33 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জনদৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাতে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে মন্দিরে মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে। আর এ জন্য মাঠে নামানো হয়েছে এক লাখ প্রশিক্ষিত ‘পেইড পারসন’- এমনটিই অভিযোগ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সংঘটিত বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণবিরোধী সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতায় দেশে নৈরাজ্য ভয়ালরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। সরকার নানা ‘বায়েস্কোপ’ প্রদর্শণ করে তাদের অমানবিকতার বলি করছে নানা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের। কুমিল্লা পূজা মন্ডপের ঘটনার জের ধরে ঐদিন রাতে চাঁদপুরের হাজিগঞ্জে সহিংস সংঘাতে ৪জন নিহত হয়। সেখানে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগও বিক্ষুদ্ধ জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরঞ্জিত শক্তি প্রয়োগের কারণে বিভিন্ন জনপদ রক্তরঞ্জিত হচ্ছে। কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী জেলাধীন বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হামলা-ভাংচুরসহ ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় যতন সাহা নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।’

বিজ্ঞাপন

‘ঐদিন চৌমুহনীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড-খন্ড মিছিল মূল সড়কের দিকে আসতে থাকলে সেটিকে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রন না করে বেপরোয়া আক্রমণ চালিয় অসংখ্য মানুষকে আহত করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের নির্বিকার ভূমিকার কারণেই শহরের কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর হয়’- বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার পূজা মন্ডপের ঘটনার জের ধরে চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ, নোয়াখালীর চৌমুহনী, ঢাকা মহানগর, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, মন্দিরে হামলা, ভাংচুরসহ নানাবিধ সংঘাত-সংঘর্ষ ও বিক্ষুব্ধ মানুষের ওপর পুলিশের লাঠি পেটা, গুলি, টিয়ারসেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ শুধু নির্দয় আচরণই নয়, এটি কাপুরুষোচিত।’

‘এই অরাজকতা সৃষ্টিকারীরা বাংলাদেশের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুমহান ঐতিহ্যকে ম্লান করল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে, তাদের উপসনালয় ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দুর্গা পূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেওয়ার পরও কেন পবিত্র কোরআর অবমাননা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটল? কুমিল্লার সাধারণ মানুষের মতো আমরাও একমত যে, পুলিশ বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দীঘীর পাড়ের মন্ডপে ঘটনাটি অমানবিকতার দিকে গড়াতো না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন একটি প্রশ্ন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরিফ পূজা মন্ডপে নিয়ে গেছে? সরকারের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাসের পর কেবলমাত্র ক্ষমতা-সংশ্লিষ্ট দুষ্ট চক্র ছাড়া দেশের জনগোষ্ঠীর কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ই এই কদর্য কাজ করবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআন অবমাননা, পূজা মন্ডপ ও মন্দিরে নিরাপত্তা বিধান না করে হামলা-ভাংচুর-সংঘাত ও সংঘর্ষকে উসকে দিয়ে দুইটি সম্প্রদায়কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে, সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চক্রান্তে মেতে উঠেছে সরকার।গণতন্ত্রের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে গণধিকৃত সরকার সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উপকরণ ছড়িয়ে সহিংস রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি পেতে চায়। কিন্তু বর্তমান যুগে কিছুই ঢেকে রাখা যায় না। অবগুন্ঠন উন্মোচিত হয়ে সত্য প্রকাশ পাবেই।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘কুমিল্লার পূজা মন্ডপের ঘটনার রেশ ধরে সারাদেশে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তা যে সরকারের ন্যাক্কারজণক পরিকল্পিত নীল নকশা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটি আজ জনগণের কাছে স্পষ্ট।’

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে এক লাখ ‘পেইড পারসন’ মাঠে নামানোর যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ভিত্তিটা কী’এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পত্রপত্রিকা এবং স্যোসাল মিডিয়াতে দেখেছি যে, প্রায় এক লাখ লোককে তারা হায়ার করেছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

আমানকে নিয়ে কল্পিত স্টোরি রচনা করা হয়েছে:

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে নিয়ে কল্পিত স্টোরি রচনা করা হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ দৈনিক ‘কালের কন্ঠ’ পত্রিকায় ‘জড়িতদের চিহিৃত করার পথে গোয়েন্দারা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনটির এক স্থানে আমান উল্লাহ আমানকে জড়িয়ে কল্পিত ‘স্টোরি’ রচনা করা হয়েছে। আমান উল্লাহ আমান ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডের বিএনপি’র একজন নেতার সঙ্গে ফোনালাপের ফাঁস হয়েছে বলে একটি অডিও কল ভাইরাল করা হয়েছে।’

সরকার এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। কন্ঠ কাটপিস করে সুপার এডিটিং এর মাধ্যমে বানোয়াট ফোনালাপ ইতোমধ্যে অসংখ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্ট্য ব্যক্তিদের নামে ভাইরাল করা হয়েছে। সুতরাং আমরা বলতে চাই, আমান উল্লাহ আমানের ফোনালাপটি ভুঁয়া, বানোয়াট, অসত্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও সুপার এডিটেড’বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক দুই দিক দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্য আর্শিবাদ। তাড়িয়ে দিতে পারলে আওয়ামী লীগ এদের সম্পদ পায় আর রেখে দিতে পারলে ভোট পায়। সুতরাং এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’

আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আমাকে নিয়ে যে কল্পনিক গল্প তৈরি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে জিডি করার জন্য থানায় লোক পাঠিয়েছি। এখনো আমার আইনজীবী থানায় বসে আছেন। থানা থেকে বলা হয়েছে ওসি সাহেব, ডিসি সাহেব থানায় এলে আমরা জিডি নথিভুক্ত করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু ও চৌমুহনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষা চন্দ্র দাস।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন