বিজ্ঞাপন

গুজবে বিভ্রান্ত, উসকানিতে উত্তেজিত না হয়ে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ

October 20, 2021 | 7:31 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কুমিল্লায় কোরআন শরিফ অবমাননার কথিত অভিযোগের জের ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির-মণ্ডপে হামলা ও ভাঙচুর এবং বসতভিটায় আগুন দেওয়া ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোরও নজির মিলছে। এ পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য কিংবা গুজব অথবা উসকানিতে বিভ্রান্ত বা উত্তেজিত না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। একইসঙ্গে গুজব বা উসকানির কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করে পরিস্থিতির উন্নয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সহায়তা করার জন্যও দেশের সব নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২০ অক্টোবর) বাংলাদেশ পুলিশ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই বার্তায় সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার খবরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ‘অপ্রীতিকর’ ঘটনা নিয়ে পুলিশের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, গত ১৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টায় কুমিল্লার সদর থানার নানুয়ার দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পূজা মণ্ডপে মূর্তির পায়ের ওপর কে বা কারা পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে চলে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতিকারী মহল উসকানিমূলক ও বিকৃত প্রচারণা চালায়। পরবর্তী সময়ে আরও উশৃঙ্খল দুষ্কৃতিকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের চেষ্টা ও পূজা মণ্ডপে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া, দুষ্কৃতিকারীরা শহরের কাপড়িয়া পট্টি কলোনির চানমনি পূজা মণ্ডপ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দির, কালিতলাসহ আরও কয়েকটি পূজা মণ্ডপে হামলা চালায় এবং প্রতিমায় অগ্নিসংযোগ করে।

আরও পড়ুন- সাম্প্রদায়িক সহিংসতা: এ পর্যন্ত ৭১ মামলায় আটক ৪৫০

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানিয়েছে, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য সারাদেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এসব ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে পুলিশ বলছে, ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভার শ্রী ত্রিনয়নী সংঘ রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, মোকিমাবাদ পূজামণ্ডপে ৫০০/৬০০ দুষ্কৃতিকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে এবং ৫/৬টি পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করে। দুষ্কৃতিকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৫ জন পুলিশ সদস্য মারাত্মক আহত হন। জনগণের জানমালসহ আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় পাঁচ জন প্রাণ হারায়।

আরও পড়ুন- রাষ্ট্রধর্ম বাতিলসহ ৮ দাবি শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গত ১৪ অক্টোবর সকাল ১১টা ২০ মিনিটে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার ছয়ানী ইউনিয়নের সর্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা মন্দিরের কাছে ৮০০ থেকে এক হাজার উশৃঙ্খল ব্যক্তি জড়ো হয়ে উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অসংখ্য ইট, লাঠিসোটা নিয়ে মন্দিরের সামনে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিজিবি’র টহল দলের ওপর হামলা চালায়, মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করে এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় একজন প্রাণ হারান এবং পরবর্তী সময়ে পুকুর থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামের জনৈক পরিতোষ (১৯) নামে একজন তার ফেসবুক আইডিতে কাবা শরিফের অবমাননাকর ছবি আপলোড করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে রাত ৮টার দিকে এলাকার কিছু দুষ্কৃতিকারী ওই গ্রামের একটি মন্দিরসহ ১৮টি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

আরও পড়ুন- মাঝিপাড়ায় আগুন-লুটপাটের ঘটনা অনুসন্ধানে মানবাধিকার কমিশনের কমিটি

এছাড়া, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকরিয়া থানা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ থানা, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ থানা, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানা এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কাশিমপুর থানাসহ দেশের আরও কয়েকটি স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় সারাদেশে সাত জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে দু’জন হিন্দু এবং পাঁচ জন মুসলিম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দায়িত্ব পালনের সময় ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ আরও জানিয়েছে, সংঘটিত এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া, আরও মামলা দায়ের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন- রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রত্যাহার করুন: অনুপম সেন

থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলোকে সম্পৃক্ত করে এসব ঘটনার অনুসন্ধান চলছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উসকানি রোধ করতে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারের সব গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন