বিজ্ঞাপন

একই কায়দায় খুন বাবা-ছেলে, জট ছাড়াল পিবিআই

October 20, 2021 | 8:34 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক বছর আগে খালে পাওয়া যায় ছেলের গলাকাটা লাশ। চার মাস আগে বাঁশঝাড়ের নিচে মেলে তার বাবার গলাকাটা দেহ। বাবা-ছেলে খুনের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন নিয়ে বিপাকে পড়ে থানা পুলিশ। মাসখানেক আগে ছেলে হত্যার ও একদিন আগে বাবা হত্যার মামলার তদন্ত ভার নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তভার নিয়েই চাঞ্চল্যকর এই খুনের রহস্য উদঘাটন করে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। নিহতরা হলেন- ফকির আহাম্মদ (৩৩) ও তার বাবা এজাহার মিয়া (৭০)।

পিবিআই জানিয়েছে, বাবা-ছেলে খুনের ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা। গ্রেফতার হওয়া কিলিং মিশনের তিন সদস্য জানিয়েছে, পাহাড়ে ইজারার জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফকিরকে খুন করা হয়। খুনের কয়েকমাস পরও থানা পুলিশ কোনো আসামি গ্রেফতার করতে না পারায় বাবা এজাহার মিয়া মামলার তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেন। বিষয়টি জেনে যায় ফকিরকে খুনের সঙ্গে জড়িতরা। পরে তারা এজাহারকেও একই কায়দায় খুন করে।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন ফকির আহাম্মদ। ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের হলুদ্যাখোলা এলাকায় পাহাড়ি জমি ইজারা নিয়ে তিনি একটি কৃষি খামার করেছিলেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তিনি খামারে যান। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। পরদিন সকালে মানিকপুর সংলগ্ন দুইদ্যাখালে তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বাবা এজাহার মিয়া বাদি হয়ে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর চলতি বছরের ২৪ জুন নিখোঁজ হন এজাহার মিয়া। তিনি ওইদিন সকালে নিজের কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে আর বাড়িতে ফেরেননি। পরদিন বিকেল তিনটার দিকে তার লাশ জমির পাশে একটি বাঁশঝাড়ের নিচে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদি হয়ে ফটিকছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ২৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ফকির আহাম্মদ হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। এরপর পিবিআইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এজাহার মিয়া হত্যা মামলার তদন্তও আমাদের দেন। পিবিআই গতকাল (১৯ অক্টোবর) ওই মামলা তদন্তের দায়িত্বভার নেয়। ফকির হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বভার নেওয়ার পর আমরা হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের তথ্য নেওয়া শুরু করি। যারা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে প্রচার চালিয়েছে তাদের তথ্য নিই। এভাবে হত্যাকাণ্ডের জট খোলে।’

এদিকে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দিনভর ফটিকছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতার তিন জন হলো- মো. ফিরোজ (৩৮), মো. সালাহউদ্দিন (২৮) এবং মো. এখলাছ (৩৮)। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দু’টি ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল আব্বাস সারাবাংলাকে জানান, গ্রেফতার তিন জনের মধ্যে দু’জন কিলিং মিশনের সদস্য। এদের মধ্যে সালাহউদ্দিন বুধবার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা ভাড়াটে হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। কিলিং মিশনে আরও ছয় জন ছিল। তাদের যারা ভাড়া করেছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পিবিআই কর্মকর্তা নাজমুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাহাড়ি জমি লিজ নিয়ে খামার করেছিলেন ফকির। সেই জমিতে অন্যদের গরু চরাতে দিতেন না তিনি। এ নিয়ে বিরোধের জেরে ভাড়াটে লোকজন দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে মামলার বাদি তার বাবাকেও হত্যা করা হয়।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন