বিজ্ঞাপন

‘সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে বৈষম্য রয়েছে’

October 21, 2021 | 7:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বিভিন্ন সরকারি সেবায় তাদের অন্তর্ভুক্তিতে বাধা, বৈষম্য ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক সেবা নিশ্চিতে জবাবদিহি ব্যবস্থা শক্তিশালী করা না গেলে ‘কাউকে পেছনে না রাখা’র লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে বলেও মনে করে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) ‘সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা: জবাবদিহি ব্যবস্থার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য তুলে ধরে টিআিইবি। এ সময় সংকট উত্তরণে ১০ দফা সুপারিশ করে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ এসোসিয়েট (কোয়ালিটেটিভ) মো. মোস্তফা কামাল এবং গবেষণা তত্ত্বাবধান করেন একই বিভাগের সিনিয়র ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্‌জুর-ই-আলম।

অক্টোবর ২০২০ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১ সময়কালে গুণবাচক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিমাণবাচক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে আদিবাসী, অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার, দলিত, চা বাগান শ্রমিক, হিজড়া জনগোষ্ঠীদের অন্তর্ভুক্ত করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য সুশাসনের নির্দেশক আইনি সক্ষমতা, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণ-এর ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানানো হয় ভার্চুয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট উপাত্তের অনুপস্থিতি তাদের প্রতি উদাসীনতা ও অবজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ, এবং তাদের মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকারি সেবা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা সর্ম্পকে প্রচারে ঘাটতি বিদ্যমান। আবার আইনি সীমাবদ্ধতা বা আইনের অনুপস্থিতি, আইনের যথাযথ প্রয়োগে ব্যর্থতার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেবায় অভিগম্যতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান জবাবদিহি কাঠামো অনেক ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়, কারণ এক্ষেত্রে তাদের ভাষাগত দক্ষতা, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সামর্থ্য’র সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের নেতিবাচক মানসিকতা ও চর্চা, অভিযোগ দাখিলে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া বরং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জবাবদিহি কাঠামো ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হন।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানে নাগরিকের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যের কারণে অধিকার ও সেবা প্রাপ্তিতে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না উল্লেখ করা হলেও, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ‘খসড়া বৈষম্য বিলোপ আইন’ এখনো পাস হয়নি। আবার খসড়া আইনে অভিযোগ অনুসন্ধানকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জবাবদিহি করার বিষয়টি উল্লেখ নেই। অন্যদিকে, তদন্তের স্বার্থে ‘সময় বর্ধিত’ করা এবং ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণে মামলা মুলতবির সুযোগ আইনে দেওয়া আছে, যার পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা খসড়া আইনে অনুপস্থিত।’

‘এর ফলে মামলা সম্পন্ন হতে দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ থাকে। বৈষম্যবিরোধী আইন না থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মামলা দায়ের করতে না পারার মতো বিষয় এই গবেষণায় উঠে এসেছে। সরকারি সেবা প্রাপ্তির সুযোগ সব নাগরিকের জন্য সমান হলেও সেবায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতে কিছু কিছু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিশেষ অবস্থা ও চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় আইন এবং আলাদা নির্দেশনা প্রদান করা হয়ে থাকে। আইনগতভাবে সকল আদিবাসীর পরিচয় ও তাদের ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন থাকলেও সমতলে বসবাসরত বৃহৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে ভূমি কমিশন নেই’— বলেন মো. মোস্তফা কামাল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এবং নীতিমালা, ২০১৫- এ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের প্রতিবন্ধিতাসহ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে সরাসরি নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। এছাড়াও নির্বাচন কমিটি কার কাছে জবাবদিহি করবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা আইনে নেই। অ্যাসিড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির চিকিৎসা, আইনগত সহায়তা ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০০৮- এ অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা, আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্ম্পকে বলা হলেও কার কাছে তারা জবাবদিহি করবে, সে বিষয়ে আইনে দিক নির্দেশনা দেওয়া নেই। ফলে ভুক্তভোগীদের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন