বিজ্ঞাপন

‘খুদে ডাক্তার’দের ট্যাবলেট খাইয়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু

October 21, 2021 | 11:53 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে পালন করা হবে ২৫তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। প্রায় চার কোটি শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে এ সপ্তাহে। এই লক্ষ্য পূরণে এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহে’র কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এদিন ‘খুদে ডাক্তার’দের কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাইয়ে মন্ত্রী এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

‘খুদে ডাক্তার’ কারা?

শিশুর মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্য-শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে ‘খুদে ডাক্তার’ কর্মসূচি শুরু করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণি বা সেকশন থেকে তিন জনকে ‘খুদে ডাক্তার’ নির্বাচন করা হয়। সেজন্য প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। বাছাই করা এসব শিক্ষার্থীদের ‘খুদে ডাক্তার’ উপাধি দিয়ে একজন শ্রেণি শিক্ষক বা গাইড শিক্ষকের মাধ্যমে তাদের কাজ সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

‘খুদে ডাক্তার’দের কাজ

নির্ধারিত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে থাকে ‘খুদে ডাক্তার’রা। বছরে দুই বার জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়া ও দুই বারেই শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টি শক্তির পরিমাপ) করার নিয়মগুলো তারা শিক্ষার্থীদের জানিয়ে থাকে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন দিবসে সক্রিয় অংশ নেওয়া হচ্ছে ‘খুদে ডাক্তার’ দলের অন্যতম প্রধান কাজ। একজন গাইড শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে তাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।

বছরে দুই বার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের উচ্চতা, ওজন পরিমাপ ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজটি হয়ে থাকে। এর লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ উচ্চতা, ওজন ও দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। এছাড়া কোনো শিশু শিক্ষার্থীর উচ্চতা, ওজন বা দৃষ্টিশক্তির কোনো সমস্যা থাকলে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করাও এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য।

বিজ্ঞাপন

‘খুদে ডাক্তার’ কর্মসূচির কার্যক্রম

দেশের সব প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুদে ডাক্তার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুদে ডাক্তার কার্যক্রম চালু করতে ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব সিটি করপোরেশনের জোনাল মেডিকেল অফিসার, জেলার সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পর্যায় থেকে সব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের নিয়ে একদিনের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

পরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ দেশের সব স্বাস্থ্য পরিদর্শক, জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মেডিক্যাল অফিসার বা স্বাস্থ্য কর্মীদের সমন্বয়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে জোরদার এবং সফলভাবে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরুও করা হলেও করোনার কারণে সেই কার্যক্রম প্রায় বছরখানেক বিঘ্নিত হয়ে ২০২১ সালের এপ্রিলে সেটি সফল হয়।

শিশুদের উৎসাহ দিতেই ‘খুদে ডাক্তার’ কর্মসূচি

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, খুদে ডাক্তার কর্মসূচি উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। শিক্ষার্থীরা নিজেরাও জানবে, অন্য শিক্ষার্থীকেও জানাবে এবং পরামর্শের পাশাপাশি তাদের সেবা দেবে। এটা একটি ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। শিশুদের উৎসাহ দেওয়া দরকার। তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্য থেকেই ভবিষ্যৎ চিকিৎসক হবে।

কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহে চার কোটি শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্য

দেশে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পালিত হবে ২৫তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ। এ সপ্তাহে প্রায় চার কোটি শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। লক্ষ্য পূরণের জন্য এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ খাওয়ানোর কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

দেশের প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫-১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমক্স ৫০০ মিলিগ্রাম) ভরা পেটে সেবন করানো হবে।

অধিদফতর জানিয়েছে, কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উদযাপনের লক্ষ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী স্কুলগামী, স্কুল বহির্ভূত, ঝরে পড়া, ছিন্নমূল ও কর্মজীবীসহ সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে সেবন করানো।

পাশাপাশি কৃমির পুনঃসংক্রমণ রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলাও এই কর্মসূচির লক্ষ্য। অধিদফতর বলছে, এসব শিশুদের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে এবং তারা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যাপারে সচেতন হবে। এ থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্যান্য পরজীবীবাহিত রোগ-ব্যধি থেকেও মুক্তি পাবে।

কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে করণীয়

অধিদফতর বলছে, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে পরিবারের সবাইকে একযোগে বছরে কমপক্ষে দুই বার (৬ মাস পর পর) কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে। খালি পায়ে চলাফেরা করা যাবে না এবং পায়খানা ব্যবহারের সময় স্যান্ডেল পরতে হবে। পায়খানার পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাতের নখ ছোট রাখতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার নখ কাটতে হবে।

অধিদফতর আরও বলছে, কৃমি প্রতিরোধে খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। খোলা বা অপরিচ্ছন্ন খাবার খাওয়া যাবে না। ফলমূল খাওয়ার আগে তা নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। প্রতিবার খাওয়ার আগে সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

২৫তম জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি জামসেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে চিকিৎসক কার্যক্রমে’র প্রকল্প পরিচালক ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন