বিজ্ঞাপন

আ.লীগ কি আওয়ামী মুসলিম লীগের দিকে যাচ্ছে— প্রশ্ন রানা দাশগুপ্তের

October 28, 2021 | 7:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আপসের রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আবার ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র দিকে যাচ্ছে কি না— এ প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি আওয়ামী লীগকে ‘আত্মশুদ্ধ’ হওয়ার এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকাননে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সংগঠন ‘ইসকন’ আয়োজিত সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সড়ক বন্ধ করে এ সমাবেশের কারণে আশপাশের এলাকায় চার ঘণ্টারও বেশিসময় ধরে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। সমাবেশ শেষে নন্দনকানন থেকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের মঞ্চে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের পাশে রেখে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘কী যন্ত্রণা নিয়ে আমরা বাংলাদেশে আছি, আজ রাজনৈতিক নেতাদের সেটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে ভাবতে হচ্ছে— এই বাংলাদেশ দেখার জন্য কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? আজকের বাংলাদেশ তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। আজকের বাংলাদেশে তো আমরা ৩০ লাখ শহিদের স্বপ্নের প্রতিফলন দেখতে পাই না।’

আরও পড়ুন- সাম্প্রদায়িকতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চান অনুপম সেন

বিজ্ঞাপন

‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর পাঁচটি নির্দেশনা ছিল। এর মধ্যে একটি নির্দেশনা ছিল— হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। কারণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে হিন্দু জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল। সেই নির্বাচনে জয়ের পর তিনি মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। সেদিন লাখ লাখ সংখ্যালঘুকে হত্যা করে এ দেশের ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যে এক কোটি মানুষ শরণার্থী হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৯২ লাখ ছিলেন হিন্দু। আজ যখন এ কথা রাজনৈতিক নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে হয়, তখন বুকটা ফেটে যায়। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি, সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলাম এই বাংলাদেশ দেখার জন্য নয়,’— বলেন রানা দাশগুপ্ত।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজ এই সরকারের ভেতরে সরকার আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রে পাকিস্তানি আছে। ঘরে ঘরে রাজাকার আছে। সরকারি দল হোক আর বিরোধী দল হোক— তারা একটি কথা বলতে অভ্যস্ত যে বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাকি বিশ্বের কোথাও নেই। আমি বলব— সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম এনে এবং সেটি রেখে দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছেন রাজনৈতিক নেতারাই। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কেউ প্রশ্রয় দিয়েছেন, কেউ আপসের রাজনীতি করেছেন, কেউ তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেছেন।’

“সরকারি দলের ভেতরের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বাইরের অপশক্তির সঙ্গে মেলবন্ধন করে আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, আমার ওপর হামলা করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। আমরা যখন এসব কথা বলি তখন সরকারি দল থেকে বলা হয়— ঘরের ভেতর নাকি ‘কাউয়া’ ঢুকেছে। আমরা জানতে চাই— ওরা কারা? পরগাছা ‘কাউয়া’দের বিরুদ্ধে আপনাদের ভূমিকা কী? তাদের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা তো আমরা এখনও সরকারি দল থেকে দেখিনি,’— ক্ষোভ নিয়ে বলেন এই মানবাধিকার সংগঠক।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের মধ্যে আত্মশুদ্ধি চাই। এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সত্তরের আওয়ামী লীগ কি না, আমরা জানি না। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ক্রমেই ১৯৪৮ সালের আওয়ামী মুসলিম লীগের দিকে চলে যাচ্ছে। আওয়ামী মুসলিম লীগ দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশকে যদি সত্যিকারের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি আমাদের আহ্বান— আপনারা বঙ্গবন্ধুর চোখে চোখ রেখে, বঙ্গবন্ধুর মুজিবকোট গায়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনীতি কার্যকর করুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই। নেতারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আস্থা ও ভরসা ফিরে আসার জন্য নেতাদের পরীক্ষা দিতে হবে।’

আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার পর এক সভায় আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন করা হবে। এক সপ্তাহ পর তিনি বললেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা নয় সাক্ষী সুরক্ষা আইন করা হবে। এক সপ্তাহ আগে বললেন এক কথা, এক সপ্তাহ পর আবার বললেন— তিনি এমন কথা বলেননি, তিনি বলেছেন— প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করলে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। এক সপ্তাহ আগের কথার সঙ্গে যদি এক সপ্তাহ পরের কথার মিল না থাকে, তাহলে সরকারের ভাবমূর্তি কোথায় থাকে?’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্বস্তি পেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আর দুই বছর আছে। সেজন্য বলছি— আমাদের গিনিপিগ করে রাখার কথা ভাববেন না। সমনাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিন। কোনো লুকোচুরির আশ্রয় নেবেন না। নির্বাচনি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করুন। আমরা মাঠে আছি, মাঠে থাকব। মাঠ ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাব না।’

ইসকন-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাশের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলার সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, জাসদ নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, ইসকন-চট্টগ্রামের সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ, সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে তপন কান্তি দাশ, চন্দন তালুকদার, আশীষ ভট্টাচার্য, প্রবীর কুমার সেন, চবির সাবেক অধ্যাপক জীনবোধি ভিক্ষু, চসিকের কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর এবং সাংবাদিক মাসুদুল হক।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন